বিজ্ঞান
অপ্রত্যাশিত আবিস্কার সুপার গ্লু
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে তখন। বিশ্বজুড়ে চলছে তখন অস্ত্র প্রতিযোগিতা। কে কত ভালো অস্ত্র তৈরি করতে পারে, তার ওপরেই নির্ভর করছে জয়-পরাজয়। কিন্তু মার্কিন রসায়নবিদ হ্যারি কুভারের দায়িত্ব বড় অস্ত্র বা ভয়ংকর বিস্ফোরক তৈরি নয়। খুব সাধারণ আর ছোট্ট একটা জিনিস তৈরির ভার দেওয়া হয়েছে তাঁকে। জিনিসটা হলো গান সাইট।
গান সাইট জিনিসটা হয়তো সবাই চিনবেন না। এটা হলো কাচ বা প্ল্যাস্টিকের তৈরি স্বচ্ছ গোল একটা বস্তু, যেটা বন্দুকের নলের ওপরের দিকে লাগানো থাকে। এই বস্তুতে একটা বৃত্ত থাকে। বৃত্তের মাঝখানে ক্রস। এটাতে চোখ বন্দুকের টার্গেট ঠিক করেন বন্দুকবাজ।
কুভারের ওপর ভার পড়েছিল প্ল্যাস্টিকের একটা টেকসই গান সাইট বানানোর। কুভার খেটেখুটে একটা জিনিস বানালেন। কিন্তু সেটা আর যাই হোক, গান সাইট হয়নি। তৈরি হয়েছিল এক ধরনের তরল আঠা, যা বাতাসের সংস্পর্শে দ্রুত জমাট বাঁধে। সালটা ছিল ১৯৪২।
কুভারের প্রোজেক্টের অংশ এটা ছিল না। তাই এটা নিয়ে আর তিনি মাথা ঘামাননি।
কুভার পরে তাঁর কাংখিত গান সাইট বানাতে পেরেছিলেন কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে নয় বছর সেই আঠালো পদার্থ নিয়ে আর উচ্চবাচ্য করেননি কুভার।
১৯৫১ সালে আরেকটি কাজের দায়িত্ব পান কুভার। ইস্টম্যান কোডাট জেট কোম্পানিতে, সেই প্রতিষ্ঠানের কর্মী ছিলেন তিনি।
কোম্পানি থেকে কুভারের হাতে নতুন একটা প্রোজেক্ট ধরিয়ে দেওয়া হলো। জেট বিমান প্রচন্ড গতিতে চলে। তাই বাতাসে সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়। এতে বিমানের ককপিটে আগুন ধরে যাওয়ার আশংকা থাকে খুব বেশি। কুভারকে দায়িত্ব হলো ককপিটের জন্য একটা স্বচ্ছ প্ল্যাস্টিকের আবরণী তৈরি করা, যেটা উচ্চ তাপ প্রতিরোধে সক্ষম। এর জন্য যে জিনিসটা তৈরি করতে হবে, তার নাম অ্যাক্রিলেট পলিমার- এক ধরনের প্ল্যাস্টিক। এবার অবশ্য কুভার একা নন, তাঁর সঙ্গে ছিলেন ফ্রেড জায়নার।
দুজন মিলে গবেষণা করছিলেন, এর মধ্যে আবার সেই পুরোনো জিনিস আবিষ্কার হয়ে গেল, যেটা নয় বছর আগেই দুর্ঘটনাবশত আবিষ্কার করেছিলেন। সেই শক্তিশালী আঠালো তরল।
দু-দুবার একই জিনিস আবিষ্কার করে ফেলেছেন- তাই এবার এটাকে আর হেলাফেলা করলেন না কুভার। বরং এর শক্তিমত্তা পরীক্ষা করে দেখলেন। দুটো প্রিজমকে এর সাহায্যে জোড়া লাগালেন। সেই জোড়া এতটাই মজবুত হলো, কিছুতেই আলাদা করা সম্ভব হলো না।
এটাকে তিনি বাণিজ্যিক রূপ দিতে চাইলেন। পৃষ্ঠপোষকতা করল তাঁর প্রতিষ্ঠান ইস্টম্যান কোডাক। ১৯৫৮ সালে কোম্পানি ইস্টম্যান ৯১০ নাম দিয়ে বাজারে নিয়ে এলো ইতিহাসের প্রথম সুপার গ্লু।