শিল্প-সাহিত্য
বাবুরের দশ মিনিট
ভারতবর্ষে তখন পাখির চোখ সারবিশ্বের শাসক ও বীর যোদ্ধাদের। কিন্তু হাতি-ঘোড়া গেল তল, পিঁপড়ে বলে কতদ জল। আলেক্সান্ডার কিংবা চেঙ্গিস খানের মতো দিগ্বীজয়ী বীরেরা যেখান সাহস করেননি, সেখানে উজবেকিস্তানের এক ভাগ্যহত শাসস করলেন।
তার আগে সেই যুবক নিজ দেশ থেকেই বিতাড়িত হয়েছিলেন, নিজের পৈত্রিক সিংহাসন খুঁইয়ে বসেছেন। যাযাবরের মতো ঘুরেছেন ফারগানার পথে-প্রান্তরে, জঙ্গলে-পাহাড়ে। এক-দুজন করে সঙ্গী জুটেছে, তৈরি হয়েছে ছোটখাটো একটা দস্যুদল। কিন্তু রাজরক্ত যাঁর গায়ে বইছে, তাঁকে তো দৈস্যুর মতো আচরণ করলে চলবে না। ছোট্ট দলটা নিয়ে বার বার ঝটিকা আক্রমণ চালিয়ে, ছোট খাটো রাজ্য জয় করতে করতে, এক সময় নিজের রাজ্য তো ফিরে পেয়েছেনই, সৈন্য-সামন্তের বিশাল বহর নিয়ে চলে এসেছেন সিন্ধু নদের কিনারায়।
ভারতবর্ষের মসনদে তখন ইব্রাহিম লোদী। ডাকসাইটে সম্রাট। তাঁকে পরাস্ত করতে তাই বিশেষ কিছুর দরকার ছিল। সেই বিশেষ কিছু যুবকটি পেয়েছেন তুর্কিদের কাছ থেকে। বিশাল এক লোহার পাইপ। দুপাশে দুটি চাকা। পাইপের পেছনে বারুদ ঠেসে অগ্নিসংযোগ করলে বিস্ফোরিত বারুদ জলন্ত গোলার রূপ নিয়ে পাইপের মুখ দিয়ে ছুটে বেরিয়ে যায় দুরন্ত বেগে। লক্ষ্যে গিয়ে আছড়ে পড়ে বিধ্বস্ত করে দেয় সামনে যায় পায়—সৈন্য, ঢাল-তলোয়ার, হাতি-ঘোড়া এমনকী বিশাল বিশাল ইমারত—সবকিছুকে।
তো এই ভয়ানাক যন্ত্রের খবর ভারতবর্ষের শাসক তখনো পাননি। ঘোড় সওয়ার আর হস্তিবাহিনীর বিশাল এক বহর সিন্ধুর এপারে জমায়েত হয়েছে। নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্বয়ং সম্রাট ইব্রাহিম লোদী। ভাবখানা এমন, তরুণদের দলটা নদী পেরুলেই কচুকাটা করবেন। তার আগেই তির-ধনুকের নিশানা করে যতগুলো পারা যায় শত্রুসেনা খতম করার সব রকম ব্যবস্থাই করা করে রেখেছেন। কিন্তু উজবেক তরুণ সে ফাঁদে পা না দিয়ে গোলান্দাজ বাহিনিকে নির্দেশ দিলেন গোলা ছুড়তে। প্রথম আঘাতেই কেল্লাফতে। স্বয়ং ইব্রাহীম লোদীকেই আঘাত করে প্রথম গোলা। নেতা মারা যাওয়াই দিকভ্রান্ত হয়ে পড়ল লোদীর বাহিনী। মাত্র দশ মিনিটের যুদ্ধে ভারত দখল করে নেন প্রথম মুঘল সম্রাট বাবর।
সূত্র: বাবুর নামা