বিজ্ঞান
নারীদের আয়ু বেশি কেন?
নারীদের দীর্ঘায়ুর পেছনে জেনেটিক, হরমোনাল, ও সামাজিক কারণগুলো মূলত ভূমিকা পালন করে। তবে, ভবিষ্যতে নারী ও পুরুষের মধ্যে আয়ুষ্কালের ব্যবধান কমে আসতে পারে যদি স্বাস্থ্যসেবা এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করা যায়।
বিশ্বব্যাপী নারীদের গড় আয়ু পুরুষদের চেয়ে বেশি। এটি একটি সাধারণ ধারণা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং গবেষণাও এই সত্যকে সমর্থন করে। কিন্তু কেন নারীরা পুরুষদের চেয়ে বেশিদিন বাঁচেন? এর পেছনে রয়েছে কিছু জেনেটিক, হরমোনাল, ও সামাজিক কারণ।
নারীদের জেনেটিক গঠন পুরুষদের তুলনায় কিছু সুবিধা দেয়। নারীদের দুইটি এক্স ক্রোমোজোম (XX) থাকে, যা তাদের জীবনীশক্তিকে বাড়ায়। যেহেতু এক্স ক্রোমোজোমে প্রচুর জিন রয়েছে যা আমাদের জীবিত থাকতে সহায়তা করে, তাই নারীদের একটি এক্স ক্রোমোজোমে ত্রুটি থাকলেও ব্যাকআপ হিসেবে আরেকটি থাকে। পুরুষদের ক্ষেত্রে, এক্স ও ওয়াই (XY) ক্রোমোজোমের কারণে তাদের ব্যাকআপের সুযোগ কম।
নারীদের যৌন হরমোন এস্ট্রোজেনকে ‘অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট’ হিসাবেও কাজ করে। এটি শরীরের বিষাক্ত রাসায়নিকগুলিকে সরিয়ে দেয় এবং কোষের ওপর চাপ কমায়। এস্ট্রোজেন খারাপ কোলেস্টেরল নির্মূল করতে এবং হৃদরোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে সাহায্য করে।
পুরুষদের ক্ষেত্রে, টেস্টোস্টেরন বেশি থাকে। এই হরমোন তাদের মৃত্যুর হার বাড়াতে পারে। টেস্টোস্টেরন পুরুষদের মধ্যে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করার প্রবণতা বাড়ায়, যেমন দ্রুত গতিতে ড্রাইভিং, লড়াই করা, এমনকি আত্মহত্যার প্রবণতা। এই কারণগুলো পুরুষদের আয়ুষ্কালকে প্রভাবিত করে।
নারীরা সাধারণত পুরুষদের তুলনায় বেশি স্বাস্থ্য সচেতন এবং ডাক্তার দেখায় বেশি। এর ফলে তাদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত ও চিকিৎসা করা সম্ভব হয়। এছাড়া, অনেক দেশে পুরুষদের তুলনায় নারীদের জীবনযাত্রা কম ঝুঁকিপূর্ণ।
কিছু দেশে, পুরুষদের ধূমপান, মদ্যপান এবং অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস বেশি থাকে, যা তাদের আয়ুষ্কালকে কমায়। যেমন রাশিয়ার পুরুষদের মদ্যপানের অভ্যাস তাদের নারীদের তুলনায় ১৩ বছর আগে মারা যেতে বাধ্য করে।
সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, ভবিষ্যতে নারী ও পুরুষের আয়ুষ্কালের ব্যবধান কমে আসতে পারে। উন্নত স্বাস্থ্যসেবা, সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর পদক্ষেপ, এবং হৃদরোগ মোকাবেলার উন্নত পদ্ধতি এই ব্যবধান কমাতে সহায়ক হতে পারে।
সূত্র: বিবিসি