বিজ্ঞান
প্রজাপতির জীবনচক্র
প্রজাপতিকে পাখনা মেলার অনুরোধ জানিয়েছিলেন গানে গানে, কিংবদন্তি শিল্পী লতা মুঙ্গেসকর। আর কবি নজরুলের প্রশ্ন ছিল, প্রজাপতি এমন রঙিন পাখনা কোথায় পেল? হেমন্ত মুখোপাধ্যায় আবার উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন তাঁর বাগানে ঝিলমিল রোদে ঝলমল করা প্রজাপতির পাখনা দেখে!
গান কিংবা কবিতায় প্রজাপতির বন্দনা থাকে। কিন্তু চাষিরা প্রজাপতির ছানাদের শত্রু মনে করে। তাই তো এত এত কীট নাশকে বাজার ছয়লাব। চাষিরারীতি মতো কীটনাশক ছিটিয়ে প্রজাপতির ছানাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। অথচ এই চাষিরাই জানেন না, ঝিলমিল পাখনার প্রজাপতিগুলো তাঁদের শত্রু। এর অবশ্য কারণও আছে। প্রজাপতি জীবন চক্রের একে পর্যায়ে একেক রকম চেহারায় আত্মপ্রকাশ করে।
প্রজাপতির জীবনচক্রের চারটি পর্যায়। ডিম, শুঁয়াপোকা আর শূককীট আর পূর্ণাঙ্গ প্রজাপতি। প্রজাপতি গাছের পাতায় স্তূপকারে ডিম পাড়ে। এক সপ্তাহ পর সেই ডিম ফুটে বেরিয়ে আসে শুঁয়াপোকা বা শূককীট। শূককীট খুব দ্রুত বাড়ে। এ সময় এদের প্রচুর খাদ্যের দরকার হয়। তখন গাছের পাতা খেয়ে সাফ করে ফেলে।
শুঁয়াপোকা আকারে শূককীট দুই সপ্তাহ কাটায়। এরপর এরা ঘুমিয়ে পড়ে। একে বলে সুপ্তাবস্থা বা শূককীট। সুপ্তাবস্থায় শুঁয়াপোকার ত্বক শুকনো পাতার মতো দেখায়। মনে হয় মৃত কোনো পোকার খোসা। এ সময় শূককীটের কোনো খাবার দরকার হয় না। এভাবে দুই সপ্তাহ ঘুমিয়ে কাটানোর পর জীবন্ত প্রজাপতি শূককীটের খোলস ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে। মাথার দিকে একটা সুতোর মতো তন্তু বেরিয়ে এমনভাবে গাছের ডালে লেপ্টে আছে, দেখলে মনে হয় কে যেন সুতো দিয়ে গাছের সঙ্গে পোকাটাকে গেঁথে রেখেছে।
এভাবেও সপ্তাহখানেক কাটায় শুঁয়াপোকা। এসময় খাবারের দরকার হয় না। ভেতরে প্রজাপতির স্বাভাবিক অঙ্গগুলো জন্মায়। পুরো দেহ, সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি হলে শুকনো খোলস ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে রঙিন প্রজাপতি। এ সময় ডানাগুলো আড়ষ্ট থাকে। কিছুটা ভেজা ভেজাও। তাই প্রজাপতি খোলস থেকে বেরিয়ে মিনিট দশেক ঠাঁই বসে থাকে খোলসের গায়ে। তারার একসময় ফুড়ুত করে উড়ে যায়।