top ad image
top ad image
home iconarrow iconফিচার

বিজ্ঞান

ভবিষ্যতের পৃথিবী

ভবিষ্যতের পৃথিবী

কেমন হবে আগামী দিনের পৃথিবী, কেমন হবে ভবিষ্যতের মানুষ? মাঝে মাঝেই আমরা সেটা কল্পনা করার চেষ্টা করি। কিন্তু এটা শুধু নিছক কল্পনাই নয়। প্রকৃতপক্ষে আমাদের কল্পনার চেয়েও অনেক বেশি এগিয়ে যাবে আগামী দিনের মানুষ।

অতীতের দিকে তাকালে মানুষের ভবিষ্যত কেমন হতে পারে তা সমন্ধে একটি ধারণা করা যায়।

এখন থেকে মাত্র একশো বছর আগেও মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনকার মতো উন্নত ছিল না। দূর দেশে যাওয়া আসা ছিল কঠিন ব্যাপার ব্যাপার। দিনের পর দিন জাহাজে চেপে ভাসতে হতো সাগরে। অথচ এখন জেট প্লেনে এক দেশ থেকে অন্যদেশে যাওয়া কোনো ব্যাপারই না।

সিডনিতে সকালে নাস্তা করে দিব্যি রাতের খাবার ঢাকায় বসে খাওয়া যায়।ভবিষ্যতে এই বিমান যাত্রাটি আরো অনেক দ্রুত হবে সেটা বলাই বাহুল্য। শব্দের চেয়েও পাঁচ থেকে দশগুণ বেশি গতিতে চলবে যাত্রীবাহী হাইপারসনিক বিমান। এ নিয়ে বর্তমানে কাজ চলছে।

নিকট অতীতেও বিদেশে ফোনে কথা বলা ছিল ভাগ্যের ব্যাপার। বেশিরভাগ সময় লাইন পাওয়া যেত না। আর লাইন পেলেও কথা কেটে কেটে যেত। আর এখন ইন্টারনেটের কল্যাণে মুঠোফোনে মুহূর্তের মধ্যেই পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে বন্ধুর সাথে কথা বলা যায়। কথার সাথে সাথে তার ভিডিও দেখা যায় ফোনে।

আমাদের ছেলেবেলায় এটা ছিলো এক অকল্পনীয় ব্যাপার। আর এখন এটা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। তথ্য প্রযুক্তির অবিশ্বাস্য উন্নতির ফলে এখন খুব সহজেই মানুষের কাছে সারা দুনিয়ার খবর পৌঁছে যায় নিমিষের মধ্যে। এটাও একদিন ছিল আমাদের কল্পনার বাইরে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, নিকট অতীতেও যা ছিল অকল্পনীয় ব্যাপার, এখন সেটাই বাস্তব। অতএব এখন যেটা অকল্পনীয় মনে হচ্ছে সেটাই অদূর ভবিষ্যতে বাস্তবে পরিণত হবে। তখন সেটাকেই স্বাভাবিক বলে মনে হবে।

এখন ধরা যাক জৈব প্রযুক্তির কথা। এক্ষেত্রে প্রতি বছর খুব দ্রুত গতিতে অভূতপূর্ব উন্নতি হচ্ছে। জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার করে আগামী দশকের মধ্যে ক্যান্সার এবং এইডসের মতো মরণ ব্যাধিকে মানুষ আয়ত্তের মধ্যে নিয়ে আসবে বলে আশা করা যায়। জিনোম এডিটিং করে বংশগত রোগ নিরাময়ের কৌশল আবিষ্কৃত হয়ে যাবে। তাছাড়া এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে নতুন নতুন ফসলের জাত উদ্ভাবন করা অনেক সহজ হয়ে যাবে। আরেকটি সবুজ বিপ্লবের সূচনা হওয়াটা এখন শুধু সময়ের ব্যাপার। অদূর ভবিষ্যতে জৈব প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের ফলে পৃথিবীতে ’বায়োলজিক্যাল মিরাকল’ ঘটবে।

জৈব প্রযুক্তির পাশাপাশি ন্যানো প্রযুক্তিও সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে ন্যানো প্রযুক্তির ব্যবহারের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এই প্রযুক্তির সাহায্য মানব দেহের অভ্যন্তরে ন্যানো রোবট পাঠিয়ে ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ ধ্বংস করা এখন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর মতো শোনালেও আগামী দুই দশকের মধ্যে সেটাই ঘটতে যাচ্ছে।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়েও প্রচুর কাজ হচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হলো কম্পিউটারকে মানুষের মত করে চিন্তা ভাবনা করে কাজ করতে শেখানো। এটি শেখানো গেলে, মানুষের মস্তিষ্ক যেসব জ্ঞানভিত্তিক (cognitive) কাজগুলো করতে পারে কম্পিউটারও তখন নিজ থেকেই সেই কাজগুলো করতে পারবে। তবে পার্থক্য হলো কম্পিউটার এটি করবে মানুষের চেয়ে বহুগুণ দ্রুত গতিতে এবং নির্ভুলভাবে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করে মানুষের রোগের কারণগুলো খুব সহজেই বোঝা সম্ভব। এছাড়াও, ডিএনএ ডাটাকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে বিশ্লেষণ করে জেনেটিক রোগের কারণ উদঘাটন করাও সম্ভব হবে। জটিল অপারেশনে সার্জনকে সহায়তা করতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন রোবট। এভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ করে চিকিৎসা শাস্ত্রে অমিত সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে চালকবিহীন গাড়ি এখন আর কল্পনার বিষয় নয়। পৃথিবীর অনেক শহরেই এখন পরীক্ষামুলকভাবে চালকবিহীন গাড়ি দেখা যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে আগামী এক দশকের মধ্যেই চালকবিহীন গাড়ি সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে চলে আসবে। পেট্রোল চালিত গাড়ি হয়ে যাবে অতীত ইতিহাস। সব গাড়িই চলবে বিদ্যুতে।

অদূর ভবিষ্যতে সাধারণ কম্পিউটারের পরিবর্তে ব্যবহৃত হবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। বর্তমানে ব্যবহৃত সুপার কম্পিউটারের চেয়েও এর ডাটা প্রসেসিং এর ক্ষমতা হবে লক্ষ কোটি গুণ বেশি। এসব কম্পিউটারের প্রসেসরে সাধারণ বিটসের পরিবর্তে ব্যবহৃত হবে কিউবিটস। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের নিয়ম অনুসারে চলবে এসব কম্পিউটার। বহু জটিল সমস্যার সমাধান মানুষ নিমিষেই করে ফেলবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার ব্যবহার করে। অদূর ভবিষ্যতে কম্পিউটারের জগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। বর্তমানে ব্যবহৃত কম্পিউটারের স্থান হবে জাদুঘরে।

সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহে পৌঁছে যাবে মনুষ্যবাহী নভোযান। ধীরে ধীরে পৃথিবীর বাইরে ও গড়ে তোলা হবে মানব বসতি। সৌরজগতের বাইরে ও চলবে মানুষের অভিযান। আজ এটাকে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী মনে হলেও ভবিষ্যতে এটাই হবে বাস্তব। সম্ভবত আগামী শতাব্দীর মধ্যেই এটা সম্ভব হবে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে অভূতপূর্ব উন্নতির ফলে মানুষের জীবনকাল বৃদ্ধি পাবে বহুগুন। ভ্যাকসিন আবিষ্কারের প্রযুক্তিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। কোভিড ১৯ এর মত মহামারীর কথা লেখা থাকবে শুধু ইতিহাসের পাতায়। এর পাশাপাশি ডি এন এ মেরামতের সহজ পদ্ধতি আবিষ্কার করে বার্ধক্যকে জয় করে মানুষের পক্ষে চিরযৌবন অটুট রাখাটাও বিচিত্র কিছু নয়। সম্ভবত এই শতাব্দী শেষ হবার আগেই এই অসাধ্য কাজটা সম্পন্ন করবে মানুষ।

আজ যে শিশুটির জন্ম হয়েছে সে হয়তো সুস্থ দেহে বেঁচে থাকবে কয়েকশ বছর। এটা এখন কল্পনা মনে হতে পারে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে কল্পনাকেই বাস্তবে পরিণত করে বিজ্ঞান। যুগে যুগে সেটাই হয়ে এসেছে। বিজ্ঞানের জয়যাত্রায় মানুষের কল্পনার পরিধি ছাড়িয়ে অনেক অনেক দূরে এগিয়ে যাবে আগামীর পৃথিবী। সেই যুগ সন্ধিক্ষণের অপেক্ষায় আছি।

লেখক: তানভীর হোসেন, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী গবেষক ওবিজ্ঞান লেখক

r1 ad
r1 ad