top ad image
top ad image
home iconarrow iconফিচার

ঐতিহ্য

কাঁচা ঘরের সম্পত্তি

কাঁচা ঘরের সম্পত্তি
কাঁচাঘরের আসবাব ও জিনিসিপত্র

হারিয়ে যাচ্ছে কাঁচাঘর। মাটির ঘর খড়ের ছাউনি–বাংলার এই চিরায়ত ঘরগুলি প্রায় বিলুপ্ত৷ এখন আমরা শুধু সেগুলোর জন্য দীর্ঘশ্বাসই ফেলতে পারি৷ ফিরিয়ে আনতে পারি না। হূমায়ূন আহমেদের মতো সৌখিন মানুষ না হলে এমন ঘর তৈরি করে কেউ বাসও করতে পারবে না।

কাঁচাঘর বা মাটির ঘর ছিল গরিবের ঘর। তাই সেই ঘরের আসবাব যে ঝাঁ চকচকে হবে না, সেটা বলাই বাহুল্য। তবুও স্মৃতি হাতড়ে মনে করতে দোষ কী?

ছেলেবেলায় অনেক আত্মীয়ের বাড়িতেই কাঁচা ঘর ছিল। সেইসব কাঁচাঘর ছিল আমার রত্নভাণ্ডার। সেগুলো ঘেঁটে কী খুঁজতাম আমি নিজেও জানতাম না। কিন্তু আত্মীয় আর প্রতিবেশীদের দেখা ঘরগুলো থেকে একটা সারাংশ বের করতে পারি সেইসব ঘরের আসবাবের।

খাট-পালঙ্ক কাঁচা ঘরে থাকত না, সেটাই স্বাভাবিক। ঘরের এককোণে থাকত কাঠের চৌকি, অতি গরিব হলে চৌকির বদলে বাঁশের মাচা। বিছানা-বালিশ সাজিয়ে রাখার জন্য আড়মাচা থেকে ঝুলত দোলনার মতো বাঁশের আড়া। প্রতিটি ঘরেই সানশেডের মতো করে ব্যবহার করা হতো মই–জিনিসপত্র রাখার জন্য। কারও ঘরে একটা দড়ি টাঙানো। তাতে ঝুলত একরাশ কাপড়। আলনা কেনার ক্ষমতা সবার ছিল না।

দেয়ালের কোনা বরাবর একটা গর্ত। সেখান থেকে বেরিয়ে থাকত মাটির ভাঁড়ের মুখ। ঘরের দেয়াল দেয়ার সময় কাঁচা মাটির ভেতর বসিয়ে দেয়া হতো এই ভাঁড়। ছেলেমেয়েদের জন্য এটাই গুপ্তধন রাখার জায়গা। মারবেল, লাটিম, ঘুড়ির লাটাই, ছোট পুতুল, পুঁতির মালা ইত্যাদি টুকরো খেলনাগুলো ছেলেমেয়েরা এখানেই গচ্ছিত রাখত, যখন ইচ্ছে হাত ঢুকিয়ে বের করে নিত সেগুলো।

ঘরের পেছনের দেয়াল কেটে বানানো হতো ত্রিভুজাকৃতির তাক। সেখানে রাখা হতো দৈনন্দিন কাজের জন্য টুকিটাকি জিনিস। এ ছাড়া ক্যালেন্ডার বা সিনেমার পোস্টার টাঙানোর চলও ছিল। বারান্দা আর ঘরের মাঝখানের দেয়ালে একটা জালানা রাখা হতো। ঘরের দুপাশেও থাকত জানালা।

চালের বাতায় নানা জিনিস গুঁজে রাখা হতো। বিশেষ করে সিঁড়ির কাছাকাছি জায়গাতে। কাঁচি, নিড়ানি, ছুরি, কলম, বাঁশি।

কোনো কোনো ঘরে কাঠের আলমারিও থাকত। থাকত ছেলেমেয়েদের পড়ার টেবিল এবং আলনা। চৌকির নিচে রাখা হতো চাঙারি, ঝুড়ি ইত্যাদি।

এই হলো কাঁচাঘরের মালিকের ঘরের বিষয়-আসয়ের ফিরিস্তি।

r1 ad
r1 ad