top ad image
top ad image
home iconarrow iconফিচার

বিজ্ঞান

ক্ষুধার বৈজ্ঞানিক কারণ

ক্ষুধার বৈজ্ঞানিক কারণ

ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী আক্ষরিক অর্থেই গদ্যময় হয়ে ওঠে। সেটা যেমন দুর্ভিক্ষপীড়িত অঞ্চলে তেমনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোতেও। সব ক্ষুধার ধরণ তাই এক রকম নয়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ক্ষুধার সঙ্গে ওই ক্ষুধার তুলনা চলে না।

ক্ষুধা ব্যাপারটা যতটা শারিরিক, ততটাই আপেক্ষিক। শুধু খাবারের অভাবেই ক্ষুধা লাগে না। চোখের ক্ষুধা আর মনের ক্ষুধার আছে। অর্থাৎ লোভনীয় কোনো খাবার দেখলে ক্ষুধা লাগতে পারে। আবার সুস্বাদু খাবারের গন্ধও ক্ষুধা পাইয়ে দিতে পারে।

ক্ষুধার সংজ্ঞা তাই একেকজনের কাছে একেকরকম। কিন্তু সব মানুষের মধ্যে কমন ক্ষুধা হলো সত্যিকারের ক্ষুধা, যেটা খাবারের অভাবে পায়। তখন পেটে মোচড় দেয়, শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, মাধা ঝিম ঝিম করে, শরীরে কাঁপুনিও এসে যেতে পারে।

আবার ক্ষুধা সময় নিয়ন্ত্রিতও হতে পারে। ধরা যাক, তুমি রাতের খাবার খাও রাত দশটায়। প্রতিদিন ওই সময়ে তোমার ক্ষুধা লেগে যেতে পারে। এমনকী শরীরে খাদ্যের প্রয়োজন না হলেও ওই সময় ক্ষুধা পেয়ে যেতে পারে।

কারণ দেহঘড়ি। আমাদের শরীর সময় মেনে চলে অভ্যস্ত। শারীরবৃত্তীয় অনেক কার্যক্রম, অনেক হরমোন একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর সক্রিয় হয়ে ওঠে। যখন তুমি প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খাবে, তখন প্রতিদিন ওই সময় ক্ষুধার সঙ্গে জড়িত হরমোনগুলো সক্রিয় হয়ে উঠবে, খাবারের প্রয়োজন না হলেও তাই ক্ষুধা অনুভব করবে।

এই যে ক্ষুধার সঙ্গে আমাদের নিত্য ওঠাবসা, কিন্তু একবারও ভেবে দেখেছেন কী, ক্ষুধা জিনিসটা কী? কেন ক্ষুধার এই প্রভাবটা দেখা যায়?

প্রথমেই আসা যাক, ক্ষুধা কেন লাগে সেই ব্যাপারটাতে।

শরীর আসলে একটা জৈবরাসায়নিক ইঞ্জিন। গাড়ি বা কলকারখানার ইঞ্জিন চালাতে গেলে যেমন জ্বালানির দরকার হয়, শরীরেও তেমন জ্বালানি প্রয়োজন। আর সেই জ্বালানিটা হলো খাদ্য। শরীর সক্রিয় থাকার জন্য শক্তি প্রয়োজন, আর সেই শক্তির জোগান খাদ্য থেকে।

ক্ষুধার যে অনুভূতি, সেটার জন্ম কোথায় বলুন তো?

পেটে নয়; মস্তিষ্কে। আসলে মানুষের সকল অনুভূতির জন্ম মস্তিষ্কে। ব্যাথা-বেদনাটা ঠিক কোথায় সেটা তোমাকে মস্তিষ্কই জানান দেয় । এর জন্য বড় ভূমিকা পালন করে আমাদের নার্ভাস সিস্টেম বা স্নায়বিক কার্যকলাপ।

আমাদের শরীরের একটা গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ু হলো ভ্যাগাস নার্ভ। এর অন্যতম কাজ হলো পেট ও পুষ্টির দিকে নজর রাখা। এই নার্ভ জানিয়ে দেয়, পেট কতখানি খালি আর তোমার পাকস্থরিতে কী পরিমাণ পুষ্টি আছে সে খবর মস্তিষ্কে খবর পাঠিয়ে দেয়। মস্তিষ্ক তখন প্রয়োজন অনুযায়ী ক্ষুধার অনুভূতি তৈরি করে।

ক্ষুধা পেলে পেটে মোঁচড় দেয়, একধরনের গুড়ু গুড় শব্দ তৈরি হয়। কেন এমনটা হয়? খাওয়ার পর বেশ কয়েক ঘণ্টা কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু খাদ্য সংশ্লেষনের পর যখন পেটের খাদ্য প্রায় ফুরিয়ে আসে তখন বাকি খাদ্যটুকু ঝেঁটিয়ে বা চেঁছে-পুছে নিতে শুরু করে পাকস্থলি। তখন পাকিস্থলি সংকুচিত হয়ে অবশিষ্ট খাবারটুকু শোষণ করে। ফলে পেটের ভেতর শব্দ তৈরি হয়।

পাকস্থলিতে হরমোন তৈরি হয়, যেগুলো আমাদের ক্ষুধার অনুভূতি তৈরিতে সাহায্য করে। এদের একটার নাম ঘ্রেলিন ও লেপটিন। এই দুটি হরমোন পাকস্থলির কোষ থেকে নিঃসৃত হয়। রক্তে এই হরমোনের মাত্রা বেড়ে গেলে মস্তিষ্ক বুঝে নেয়, খাওয়ার সময় হয়েছে। তখন ক্ষুধার অনুভূতি তৈরি করে। এই হরমোন শরীরের মেদ বাড়াতে ভূমিকা রাখে। অন্যদিকে লেপটিন হরমোনের ভূমিকা ঘ্রেলিনের উল্টো। এই হরমোন রক্তে নিঃসৃত হলে মস্তিষ্ক বুঝতে পারে পেট ভর্তি আছে, এখন খাওয়া চলবে না।

এই দুই হরমোনের অনুপাত কম-বেশির ওপর নির্ভর করে মস্তিষ্ক বুঝে যায়, কখন ক্ষুধা পাওয়া উচিৎ আর কখন পেট ভরা।

এছাড়া রক্তে গ্লুকোজ, অ্যামিনো অ্যাসিড এবং ফ্যাটি অ্যাসিডের ঘনত্বের ওপরও ক্ষুধার অনুভূতি তৈরি হওয়া নির্ভর করে। এসব পুষ্টি উপদানের ঘনত্ব যখন সবচেয়ে কম থাকে, তখন ক্ষুধার অনুভূতি তৈরি হয়।

এগুলোই আসলে সত্যিকারের ক্ষুধার মূল কারণ। চোখ, মন ও গন্ধের ক্ষুধা নিয়ে আরেকদিন না হয় আলোচনা করা যাবে।

সূত্র: বিবিসি সায়েন্স ফোকাস

r1 ad
r1 ad