top ad image
top ad image
home iconarrow iconফিচার

আবিষ্কারের গল্প

আদীম আলোর সন্ধানে

আদীম আলোর সন্ধানে
চ্যাটজিপিটির চোখে আর্নো ও পেনজিয়াসের পরীক্ষা-নিরীক্ষা

ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যালটেক বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বিখ্যাত বেল ল্যাব। সেই ল্যাবেই গবেষণা করেন আর্নো, পেঞ্জিয়াস আর রবার্ট উইলিয়ামস। ১৯৬৪ সালের সেদিনও তাঁরা কাজ করছিলেন ল্যাবে। তাঁদের দায়িত্ব ছিল স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহের সিগন্যাল সংগ্রহ করা। সে জন্য তাঁরা সাটেলাইটের দিকে অ্যান্টেনা তাক করলেন। কিন্তু পরিষ্কার সিগন্যাল পেলেন না। একটা গোলমেলে শব্দ আসছিল। ঝিরি ঝিরি।

আদীম আলোর সন্ধানেপ্রিন্সটনের খুব কাছেই ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যালটেক বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বিখ্যাত বেল ল্যাব। সেই ল্যাবেই গবেষণা করেন আর্নো, পেঞ্জিয়াস আর রবার্ট উইলিয়ামস। ১৯৬৪ সালের সেদিনও তাঁরা কাজ করছিলেন ল্যাবে। তাঁদের দায়িত্ব ছিল স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহের সিগন্যাল সংগ্রহ করা। সে জন্য তাঁরা সাটেলাইটের দিকে অ্যান্টেনা তাক করলেন। কিন্তু পরিষ্কার সিগন্যাল পেলেন না। একটা গোলমেলে শব্দ আসছিল। ঝিরি ঝিরি।াছেই ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যালটেক বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বিখ্যাত বেল ল্যাব। সেই ল্যাবেই গবেষণা করেন আর্নো, পেঞ্জিয়াস আর রবার্ট উইলিয়ামস। ১৯৬৪ সালের সেদিনও তাঁরা কাজ করছিলেন ল্যাবে। তাঁদের দায়িত্ব ছিল স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহের সিগন্যাল সংগ্রহ করা। সে জন্য তাঁরা সাটেলাইটের দিকে অ্যান্টেনা তাক করলেন। কিন্তু পরিষ্কার সিগন্যাল পেলেন না। একটা গোলমেলে শব্দ আসছিল। ঝিরি ঝিরি।

আর্নো আর পেঞ্জিয়াস ভাবলেন, নিশ্চয়ই কোনো সমস্যা আছি অ্যান্টেনা সেটিংয়ে। তাই অ্যান্টেনা ঘুরিয়ে আবার ঠিক ঠিক জায়গা সেট করলেন। কিন্তু ঝিরি ঝিরি শব্দটা তাতে বন্ধ হলো না।

দুই বিজ্ঞানী ভাবলেন, এগুলো নিশ্চয়ই রেডিও অথবা টেলিভিশনের সিগন্যাল। সুতরাং ফিল্টারিং করে এগুলো বাদ দেওয়ার চেষ্টা করলেন। কিন্তু এতেও কিছু হলো না।

তাহলে নিশ্চয় রাডারের সিগন্যাল! বেল ল্যাবের কাছাকাছি একটা সেনাঘাঁটি আছে। আর্নো-পেঞ্জিয়াস ফোন করলেন সেখানে। কিন্তু সেখান থেকে জানানো হলো রাডার বন্ধ আছে।

তাহলে?

২.

আর্নো-পেনজিয়াস ঝিরি ঝিরি রহস্যের সন্ধান পাচ্ছিলেন না। অন্যদিকে আরেকদল বিজ্ঞানীর কপালে দুশ্চিন্তার ছাপ। তাঁরা প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতিঃপদার্থবিদ রবার্ট ডিক, জেমস পিবলস আর উইলকিনসন। মহাবিশ্বের এক মহারহস্য ঘুরপাক খাচ্ছে তাঁদের মাথায়। রুশ বিজ্ঞানী জর্জ গ্যামো একটা তত্ত্ব দাঁড় করিয়েছেন।

কিভাবে মহাবিশ্বের জন্ম হলো সেই তত্ত্ব। বিজ্ঞানী মহলে এর নাম দাঁড়িয়েছে বিগ ব্যাং থিওরি। গ্যামো বলেছেন, মহাবিশ্বের জন্ম হয়েছিল একটা প্রচণ্ড বিস্ফোরণের মাধ্যমে। তখন প্রচণ্ড ছিল মহাবিশ্বের তাপমাত্রা।

এরপর দ্রুত মহাবিশ্ব প্রসারিত হয়। জন্ম হয় মূল কণাদের। সেখান থেকে নির্গত হয় আলো।

কিন্তু বিগ ব্যাংয়ের প্রমাণ কী?

জর্জ গ্যামো তাঁর সহকর্মী রালফ আলফারকে নিয়ে এক গবেষণা করেছিলেন।

তাতে বলেছিলেন, সেই আলোর সন্ধান যদি পাওয়া যায়, তাহলে পাওয়া যাবে বিগ ব্যাংয়ের প্রমাণ। তাঁরা আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়ে দিয়েছিলেন। বিগ ব্যাং হয়েছিল আজ থেকে ১৩৮০ কোটি বছর আগে। ফলে এর তাপমাত্রা কমেছে। এতটাই কম, এর চেয়ে কম তাপমাত্রার আলো আর মহাবিশ্বে থাকার কথা নয়।

গ্যামোদের হিসাব অনুযায়ী সেই আলোর তাপমাত্রা হবে ৩ কেলভিনের মতো। সেই আলো এখন ক্ষুদ্র তরঙ্গে রূপ নিয়েছে। তাই দৃশ্যমান আলোর মতো খালি চোখে দেখা সম্ভব নয়। কিন্তু বিশেষ অ্যান্টেনা বা টেলিস্কোপের সাহায্যে এর সিগন্যাল পাওয়া সম্ভব।

এই আদিম আলোরই খোঁজ করছিলেন ডিক, পিবলস আর উলকিনসন। কিন্তু কিছুতেই মিলছিল না। তাই বিশেষ এক টেলিস্কোপ তৈরির কথা ভাবছেন তাঁরা।

৩.

আর্নো-পেঞ্জিয়াস ভাবলেন, নিশ্চয়ই রোদে অ্যান্টেনা গরম হয়ে ভুলভাল সিগন্যাল দিচ্ছে। তাই এমন ঝিরিঝিরি নয়েজ আসছে। তাঁরা অ্যান্টেনাকে তরল ঠাণ্ডা হিলিয়াম দিয়ে শীতল করলেন। কিন্তু লাভ হলো না। আগের মতোই ঝিরি ঝিরি শব্দটা আসতেই থাকল।

তাহলে অ্যান্টেনার ভেতরটা দেখতে হবে। ওর ভেতরে কি ময়লা আছে?

অ্যান্টেনাটা বিশাল। সহজেই এর ভেতরে ঢুকে পরিষ্কার করা যায়। দুই বিজ্ঞানী অ্যান্টেনার ভেতরে ঢুকে দেখলেন ইলাহি কাণ্ড! ভেতরে কবুতরের রাশি রাশি বিষ্ঠা! বেরসিক কবুতরের দল বাসা বাঁধার জন্য অ্যান্টেনার ভেতরটাই বেছে নিয়েছে।

দুই বিজ্ঞানী সেই বিষ্ঠা পরিষ্কার করলেন। কবুতর তাড়ালেন। ধুয়েমুছে সাফ করে ফেললেন অ্যান্টেনা। খুব আশাবাদী ছিলেন, এবার আর সমস্যা হবে না।

সমস্যা হলো, ঝিরি ঝিরি শব্দ মোটেও বন্ধ হয়নি। বরং তাঁরা অ্যান্টেনা ঘুরিয়ে দেখেছেন। আকাশের যেদিকেই তাক করা হোক না কেনো সিগন্যাল সব দিক থেকেই আসছিল।

হতাশ হয়ে পড়লেন দুই বিজ্ঞানী। ঝিরি ঝিরি শব্দ দূর করার আশা বাদ দিলেন। বরং এগুলো নিয়ে কাটাছেঁড়া করলেন একটু। পরীক্ষা করে দেখলেন সিগন্যালটার তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ৭.৩৫ সেন্টিমিটার। তার মানে এই সংকেত আসলে মাইক্রোওয়েভ রেঞ্জের সিগন্যাল।

আর্নো-পেঞ্জিয়াস নিশ্চিত ছিলেন এই সিগন্যাল গ্যালাক্সির বাইরে থেকে আসছে। কিন্তু কিসের সিগন্যাল, কিভাবেই বা এর জন্ম? এ বিষয়ে কিছু জানতে পারলেন না তাঁরা।

পেঞ্জিয়াস তাঁর বন্ধু এমআইটির অধ্যাপক বার্নার্ড ব্রুকের সঙ্গে কথায় কথায় বলে ফেললেন এ ঘটনার কথা। তিনি কিছুটা বুঝতে পেরেছিলেন। বুঝেছিলেন ডিক-পিবলস আর উইস্কিনসন যে আদিম আলোর খোঁজ করছিলেন, তার সঙ্গে এর হয়তো সম্পর্ক আছে।

তিনি তাঁদেরকে এ কথা জানালেন। ডিক-পিবলস-উইলকিনসন দেরি করেননি। শোনামাত্র যোগাযোগ করেন আর্নো-পেঞ্জিয়াসের সঙ্গে। পেঞ্জিয়াস-উইলসন তাঁদেরকে আমন্ত্রণ জানালে পরীক্ষা করে যেতে। তাঁরা এলেন, সব দেখেশুনে বুঝলেন, তাঁরা জেনে-বুঝেও যা আবিষ্কার করতে পারেননি, আর্নো-পেঞ্জিয়াস না জেনেই তা আবিষ্কার করে ফেলেছেন।

আসলে এই সংকেত ছিল সেই আদিম আলোর সংকেত। যাকে বিজ্ঞানীরা সংক্ষেপে বলেন সিএমবিআর। এই আবিষ্কারে জন্য ১৯৭৮ সালে আর্নো ও পেঞ্জিয়াস নোবেল পুরস্কার পান। সঙ্গে প্রমাণ হয় বিগ ব্যাং তত্ত্বও।

সূত্র : নিউ সায়েন্টিস্ট

r1 ad
r1 ad