বিজ্ঞান
রসুন কতটা উপকারী

রসুন রান্নার স্বাদ বাড়াতে, শরীর ঠান্ডা-সর্দি থেকে বাঁচাতে কিংবা নানা প্রাকৃতিক চিকিৎসায় এর ব্যবহার পুরোনো দিনের কথা। কিন্তু জানেন কি, এই ছোট্ট মসলা ক্যান্সারের মতো ভয়ংকর রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করতে পারে?
রসুন আমরা সবাই চিনি – রান্নার স্বাদ বাড়াতে, শরীর ঠান্ডা-সর্দি থেকে বাঁচাতে কিংবা নানা প্রাকৃতিক চিকিৎসায় এর ব্যবহার পুরোনো দিনের কথা। কিন্তু জানেন কি, এই ছোট্ট মসলা ক্যান্সারের মতো ভয়ংকর রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করতে পারে?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, রসুনে এমন একটি উপাদান আছে যেটা শরীরের কোষগুলোকে ক্যান্সার থেকে রক্ষা করতে পারে। এই উপাদানের নাম অ্যালিসিন। এটি রসুন কাটলে বা থেঁতো করলে তৈরি হয় এবং এতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি (প্রদাহরোধী) গুণ।
স্পেনের মাদ্রিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের গবেষক মারিয়া সানচেজ। তাঁর গবেষণায় রসুনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের উপর আলোকপাত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘রসুনে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীরের ফ্রি র্যডিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব কমিয়ে ক্যান্সার কোষের গঠন প্রতিরোধে সহায়তা করে’
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, রসুন নিয়মিত খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলে কিছু নির্দিষ্ট ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমতে পারে। বিশেষ করে, পাকস্থলী, কোলন, ইসোফেগাস, প্যানক্রিয়াস এবং স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে রসুনের সুরক্ষামূলক প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। রসুনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য কোষের ডিএনএ রক্ষা করে এবং ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদানের কার্যকারিতা কমাতে সহায়তা করে।
গর্ডন লি যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের গবেষক। তাঁর গবেষণায় দেখা গেছে, রসুনে উপস্থিত অ্যালিসিন যৌগটি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি প্রতিরোধে সহায়ক। তিনি বলেন, ‘রসুনের বায়োঅ্যাকটিভ উপাদানগুলো টিউমার সৃষ্টিকারী কোষের বিকাশ কমাতে পারে। ফলে ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে রসুন।’
রসুন কাঁচা বা রান্না করে খাওয়া যেতে পারে। কাঁচা রসুনে অ্যালিসিনের পরিমাণ বেশি থাকে, যা তাপের সংস্পর্শে কিছুটা কমে যেতে পারে। তাই, সর্বোচ্চ উপকার পেতে কাঁচা রসুন চিবিয়ে খাওয়া ভালো।
এই অ্যালিসিন শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যাল নামের উপাদানকে প্রতিরোধ করে। এই ফ্রি র্যাডিক্যাল-ই আমাদের কোষের ক্ষতি করে এবং সময়ের সঙ্গে ক্যান্সারের মতো রোগের কারণ হতে পারে।
স্পেনের মাদ্রিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক মারিয়া সানচেজের মতে, রসুন নিয়মিত খেলে কিছু নির্দিষ্ট ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যেতে পারে। বিশেষ করে পাকস্থলী, কোলন (বড় অন্ত্র), খাদ্যনালী, অগ্ন্যাশয় এবং স্তনের ক্যান্সারে রসুন উপকারী হতে পারে।
রসুন কাঁচা বা রান্না করে খাওয়া যায়। তবে কাঁচা রসুনে অ্যালিসিন বেশি থাকে। তাই কেউ কেউ সকালে এক কোয়া কাঁচা রসুন চিবিয়ে খান। তবে খালি পেটে কাঁচা রসুন খেলে কারও কারও পেটে সমস্যা হতে পারে। অতিরিক্ত খেলে হতে পারে গ্যাস, জ্বালাপোড়া বা এমনকি রক্তপাতের ঝুঁকিও। তাই নিয়মিত খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই ভালো।
রসুন উপকারী, ঠিকই। কিন্তু শুধু রসুন খেয়েই ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। ক্যান্সার থেকে দূরে থাকতে হলে প্রয়োজন সুস্থ জীবনযাপন—যেমন সুষম খাবার খাওয়া, ধূমপান থেকে দূরে থাকা, ব্যায়াম করা, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো এবং স্ট্রেস কমানো।
রসুনের আরও কিছু উপকারিতা আছে। যেমন, ঠান্ডা-কাশি কমায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, রক্তে কোলেস্টেরল কমায়, হজমে সহায়তা করে, সংক্রমণ প্রতিরোধে কাজ করে
রসুন ছোট হলেও এর গুণ অনেক বড়। ক্যান্সার প্রতিরোধে এটি একটি সহায়ক খাবার হতে পারে। তবে একে 'ম্যাজিক ওষুধ' ভাবা ঠিক নয়। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রসুনের জায়গা করে নিন, তবে সচেতনতার সঙ্গে।
এই অ্যালিসিন শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যাল নামের উপাদানকে প্রতিরোধ করে। এই ফ্রি র্যাডিক্যাল-ই আমাদের কোষের ক্ষতি করে এবং সময়ের সঙ্গে ক্যান্সারের মতো রোগের কারণ হতে পারে।
সূত্র: স্থিসনিয়ান ম্যাগাজিন