top ad image
top ad image
home iconarrow iconফিচার

প্রকৃতি

লড়াকু পাখি

লড়াকু পাখি
ফিঙে

একটা আম বাগান। ঘন, আধা অন্ধকার। পাশেই একটা ছোট্ট কাঁঠালগাছ। শুনেছি সে গাছের নিচের ডালে বাসা বেঁধেছে শাহবুলবুলি। আমিও ছিলাম বাসার খোঁজে। একদিন পেয়েও গেলাম কাঁঠালগাছের এই বাসাটা।

গাছটার খুব কাছেই সেই আম বাগানে গিয়ে লুকিয়ে রইলাম। হাতে একটা ক্যামেরা আর বড় একটা জুম লেন্স। দূর থেকেও বাসা আর পার পাখির ছবি তোলা যাবে অনায়াসে। কিন্তু গিয়ে একটু হতাশ হলাম। বাসা আছে, পাখি নেই। পাখি কখন আসবে সে জন্য অপেক্ষা করতে হবে। বাসায় ডিম বা ছানা থাকতে পারে। কিন্তু সেগুলোর ছবি এতদূর থেকে তোলা যাবে না। কাছে গিয়ে তোলা যায়। কিন্তু বেশির ভাগ পাখিদের একটি অদ্ভুত স্বভাব আছে। যদি টের পায়, ওদের বাসায় কেউ হানা দিয়েছে, তাহলে আবার বাসায় ফিরে আসার সম্ভাবনা কম। তা ছাড়া আমার শরীরের রোগ-জীবাণু ওদের বাসাকে সংক্রমিত করতে পারে। তাই পাখির বাসার কাছে ভিড়ি না।

মিনিটদশেক পর অপেক্ষার অবসান হলো। এসে গেছে মা ও বাবা শাহবুলি। মা পাখির লেজ বড় হয় না। বাবা পাখির লেজ বড় হয়। এর আগে লক্ষ্য করেছি আরও বেশ কয়েকটা পাখির বাসা আছে আশপাশে। কমলা দামা, শালিক, দোয়েল আর ফিঙ্গে। আসলে ফিঙের বাসার আশপাশে ছোট পাখিদের হাট বসে। কারণ, হলো নিরাপত্তা।

শাহ বুলবুলের বাসার ছবি তুললাম বেশ কয়েকটা। তখনই গোলমাল শুরু হলো। বাগানের পাখিরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তারস্বরে চিৎকার করছে, ছুটোছুটি করছে। কেন?

ভালো করে খেয়াল করে দেখি, একটি হাঁড়িচাঁচা পাখি এসেছে বাগানে। হাঁড়িচাঁচা শিকারি পাখি। এদের প্রধান খাবারই হলো অন্য পাখিদের ডিম ও ছানা। আকারেও বেশ বড়সড়। তাই এরা বাসায় হানা দিলে ছোট পাখিদের চিৎকার করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকে না। কিন্তু বাসাটা যদি হয় ফিঙের আশপাশে তাহলে আর দুর্ভাবনা নেই।

দেখতে বড়সড় হলেও ফিঙে খুব বড় পাখি নয়। চেরা-দুভাগ লেজটা লম্বা বলে আসল আকারের চেয়ে বড়ই দেখায় পাখিটাকে। ছোটখাটো পাখি, কিন্তু একে ভয় পায় তাবড়-তাবড় সব পাখি। সেটাই দেখলাম সে দিন। হাঁড়িচাঁচাকে দেখামাত্র শাঁ করে উড়ে গেল ফিঙে। নখর বাগিয়ে গিয়ে আক্রমণ করল। হাঁড়িচাঁচা সামান্য উড়ে গিয়ে বসল আরেক ডালে। কিন্তু ফিঙে ছাড়বার পাত্র নয়। একটা ভয় ধরানো ডাইভ দিয়ে আবার আক্রমণ শানাল।

কিন্তু হাঁড়িচাঁচা প্রথম দিকে পরোয়া করছিল না। বিরক্ত হয়ে ওডাল-ওডাল করছিল শুধু। ফিঙে বুঝতে পারে কঠিন একটা আক্রমণ শানাতে হবে। জোরে জোরে চিৎকার করে। একের পর এক আক্রমণ। ততক্ষণে ছোট পাখিদের ভয় কেটে গেছে। দামা, দোয়েল আর শাহবুললিরাও যোগ দিয়েছে আক্রমণে। শেষমেষ পাখিদের এই সম্মিলিত আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পালিয়ে বাঁচে হাঁড়িচাঁচা।

ছোট পাখিদের এ সাহস হতো না, যদি ফিঙে প্রথম আক্রমণটা না করত। শুধু হাঁড়িচাঁচাই নয়। কাক, বাজপাখি, ইগলদের মতো বড় বড় পাখিদের সঙ্গে ফাইট করতে পিছপা হয় না ফিঙে। এ জন্য একে ‘ফিঙেরাজা’ নামে ডাকা হয়।

তাই বলে একেবারে নিঃস্বার্থভাবে অন্যের জন্য কাজ করে ফিঙেরা। নিজের ডিম ছানার সুরক্ষা নিশ্চিত করাই তার একমাত্র উদ্দেশ্য। ফাঁকতালে প্রতিবেশীরাও বেঁচে যায়। এর জন্য অবশ্য বিনিময় মূল্যও নেয় ফিঙে। প্রতিবেশীর পাখিদের শিকার করে আনা খাবার কেড়ে খায় ফিঙেরা। অন্য পাখিরাও বিনিময় মূল্য দিতে খুব একটা রাগ করে না। খুশি হয়ে না দিলেও, এজন্য ফিঙের সঙ্গে বিবাদে জড়ায় না পাখিরা। অবশ্য বিবাদ করে পারবে কিনা, সে-ও এক প্রশ্ন।

r1 ad
r1 ad