top ad image
top ad image
home iconarrow iconফিচার

বিজ্ঞান

নগররক্ষীর প্যারাডক্স

নগররক্ষীর প্যারাডক্স

মিথ্যা বললে যখন মৃত্যুর খড়্গ নেমে আসবে নিশ্চিত, তখন সত্যিটা বলে ফেলাই উত্তম। কিন্তু আপনার জানা নেই, কোনটা বললে সত্যি বলা হবে, আর কোনটাকে প্রশ্নকারী মিথ্যা বলে মনে করবে, তখন কী করবেন? একটা প্যারাডক্স ছুড়ে দিন, প্রশ্নকারী কুপোকাত! সেই প্যারাডক্সটা কী বোঝার জন্য আমরা একটা গল্প ফাঁদতে পারি।

ধরা যাক, প্রাচীনকালে বাদগাদ নগরীতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হতো। আল হাকিমি নামে এক লোক থাকতেন পাশের শহরে, ভদ্রলোকের ছোট ভাই বাস করেন বাগদাদে। এক রাতে বিপাকে পড়ে গেলেন হাকিমি। কারণ, তার মা বেশ অসুস্থ। তিনি তার ছোট ছেলেকে দেখতে চান। সময় ফুরিয়ে আসছে তার, তাই বড় ছেলের কাছে আবদার করলেন, যে করেই হোক, সেই রাতেই যেন ছোট ছেলেকে হাজির করা হয় তার সামনে।

হাকিমি এখন কী করেবেন?

তিনি জানেন, বাগদাদের নগররক্ষীরা ভীষণ কড়া। শহরে ঢুকতে গেলেই তাকে জেরা করা হবে–কী জন্য শহরে এসেছে। হাকিমি বলতেই পারেন, তার মা অসুস্থ, ছোট ভাইকে দেখতে চান, তিনি ছোট ভাইয়ের কাছেই যাচ্ছেন, তাকে আনতে। কিন্তু হাকিমি যে সত্যি বলছেন, তা নগররক্ষীরা নিশ্চিত হবেন কী করে? প্রমাণ করতে গেলে বড্ড হ্যাপা। নানা, প্রটোকল। ততক্ষণ মা বেঁচে থাকবেন তো! এই হ্যাপায় তিনি যেতে চান না। তাই ভাবলেন প্যারাডক্স দিয়েই ঘায়েল করবেন নগররক্ষীকে।

বাগদাদের মূল ফটকের দিকে এগিয়ে গেলেন হাকিমি। কাছাকাছি আসতেই নগররক্ষী পথ আটকাল হাকিমির।

‘কী চাও?’ নগররক্ষী জানতে চাইল।

‘শহরে ঢুকতে চাই।’ জবাবে বললেন হাকিমি।

‘এখনকার নিয়ম জানো তো?’

‘না।' জেনেও মিথ্যা বললেন হাকিমি।

‘শোনো তাহলে,’ বলল নগররক্ষী, ‘আমি একটা প্রশ্ন করব, প্রশ্নের উত্তর যদি সত্যি বলো, তাহলে নগরে ঢুকতে পারবে। আর যদি আমার মনে হয় তুমি মিথ্যা বলেছ, তাহলে শূলে চড়বে।’

‘আমি সত্যি না মিথ্যা বলছি, বুঝবেন কী করে?’ হাকিমি প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন।

‘পঞ্চাশ বছর মানুষ চরিয়ে খাচ্ছি মশাই, আমি বুঝব না, কোনটা সত্যি, কোনটা মিথ্যা?’

হাকিমি বুঝলেন, এর সঙ্গে তর্ক করে লাভ নেই, এর খামখেয়ালিতে প্রাণ গিয়েছে অনেকের, আজ তার প্রাণও যেতে পারে। কিন্তু তিনি প্রস্তুত হয়েই এসেছেন। বললেন, ‘বলুন কী প্রশ্ন?’

‘বলো এখানে কী করতে এসেছ?’

‘শূলে চড়ে মরতে এসেছি।’

নগররক্ষী প্রথমে হা হা হা করে হেসে ওঠে। তারপর বলে, ‘চল ব্যাটা তোকে শূলে চড়ানোর ব্যবস্থা করি।’ ওটা ছিল নগররক্ষীর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া। আগপিছ না ভেবেই বলেছিল।

‘কিন্তু জনাব, আমি তো সত্যি কথাই বলেছি।’ হাকিমি তাকে মনে করিয়ে দেন।

‘ঠিকই তো,’ মাথা চুলকে বলে নগররক্ষী। ‘এ-তো ভারী বিপদ। কিন্তু তোমার কথা মিথ্যাও তো হতে পারে।’ নগররক্ষী তর্কে জেতার জন্য বলে।

‘মিথ্যা হলে তো শূলে চড়াবেন, ঠিক তো?’ হাকিমি বলেন।

‘হ্যাঁ,’ মাথা নাড়ে নগররক্ষী।

‘শূলেই যদি চড়ান, তাহলে আমার কথা মিথ্যা হয় কী করে?’

‘সত্যিই তো।’ নগররক্ষী ম্যাথা নাড়ে ফের, ‘সত্যিই যদি হয় তোমার কথা তাহলে, তাহলে তোমাকে শূলে চড়াই কী করে! আবার শূলেই যদি না চড়াই, তোমার কথা মিথ্যা হয়ে যায়…’ বিড়বিড় করে প্রলাপ বকতে শুরু করে নগররক্ষী। তারপর হঠাৎ হাকিমির হাত চেপে ধরে বলে, আমাকে মাফ করে দাও ভাই, তোমার নগরে ঢুকে কাজ নেই। বাড়ি ফিরে যাও, ভাইয়ের নাম, ঠিকানা দিয়ে যাও, আমি লোক পাঠিয়ে তাকে ডেকে আনছি। আর বলছি তোমার মায়ের কথা।’

r1 ad
r1 ad