top ad image
top ad image
home iconarrow iconফিচার

জীবজন্তু

সেকালের বাদুড়

সেকালের বাদুড়
সেকালের বাদুড় টেরেক্টোডাইল

সেকালের জন্তুর কথা বলিলেই একটা কোনো কিম্ভতকিমাকার জানোয়ারের চেহারা মনে আসে। যে-সকল জন্তু এখন দেখিতে পাই না, অথচ যাহার কংকালচিহ্ন দেখিয়া বুঝিতে পারি যে সে এককালে পৃথিবীতে ছিল, তাহার চেহারা ও চাল-চলন সম্বন্ধে স্বভাবতই কেমন একটা কৌতুহল জাগে। তাহার উপর যদি তাহার মধ্যে কোনো অদ্ভুত বিশেষত্বের পরিচয় পাই, তবে তো কথাই নাই।

সেকালের বাদুড়সেকালের জন্তুর কথা বলিলেই একটা কোনো কিম্ভতকিমাকার জানোয়ারের চেহারা মনে আসে। যে-সকল জন্তু এখন দেখিতে পাই না, অথচ যাহার কংকালচিহ্ন দেখিয়া বুঝিতে পারি যে সে এককালে পৃথিবীতে ছিল, তাহার চেহারা ও চাল-চলন সম্বন্ধে স্বভাবতই কেমন একটা কৌতুহল জাগে। তাহার উপর যদি তাহার মধ্যে কোনো অদ্ভুত বিশেষত্বের পরিচয় পাই, তবে তো কথাই নাই। কথা বলিলেই একটা কোনো কিম্ভতকিমাকার জানোয়ারের চেহারা মনে আসে। যে-সকল জন্তু এখন দেখিতে পাই না, অথচ যাহার কংকালচিহ্ন দেখিয়া বুঝিতে পারি যে সে এককালে পৃথিবীতে ছিল, তাহার চেহারা ও চাল-চলন সম্বন্ধে স্বভাবতই কেমন একটা কৌতুহল জাগে। তাহার উপর যদি তাহার মধ্যে কোনো অদ্ভুত বিশেষত্বের পরিচয় পাই, তবে তো কথাই নাই।

সেকালের ‘বাদুড়’ লিখিলাম বটে, কিন্তু তাহার চেহারা দেখিলে সবসময় বাদুড় বলিয়া চিনিবে কিনা সন্দেহ। কারণ, সে সময়ের এক-একটা জন্তুকে আজকালকার কোনো নামে পরিচিত করা অনেক সময়েই অসম্ভব। মনে করো একটা জন্তু, তার সাপের মতো গলা, কচ্ছপের মতো পিঠ, কুমিরের মতো দাঁত, তিমির মতো ডানা আর গিরগিটির মতো মাথা তখন তাহাকে কি নাম দিবে? সেইজন্য বাদুড় বলিতে খুব সাবধানে বলা দরকার—যেন আজকালকার নিরীহ চামচিকা গোছের কিছু একটা মনে করিয়া না বসো।

আজকাল যে-সকল বাদুড় দেখিতে পাও তাহাদের চেহারা ও চাল-চলনের মধ্যে কত তফাত। কোনোটার কান খরগোশের মতো লম্বা, কোনোটার কান ইঁদুরের মতো গোলপানা, কোনোটার মুখ শেয়ালের মতো, কোনোটার মুখ ভেংচিকাটা সঙের মতো,কারও নাক পদ্মফুলের মতো ছড়ানো, কারও নাক নাই বলিলেও হয়। কিন্তু সেকালের যে জানোয়ারগুলাকে বাদুড় বলিতেছি তাহাদের মধ্যে আরো অদ্ভুত রকমারি দেখা যাইত। এক-একটাকে দেখিয়া মনে হয় যেন বাদুড় পাখি আর কুমিরে মিলিয়া খিচুড়ি পাকাইয়াছে। এগুলিকে সাধারণভাবে বলা হয় টেরোড্যাক্টাইল (pterodactyl) অর্থাৎ যাহার আঙুলে পাখা।

পাহাড়ের গায়ে যে-সব পাথরের স্তর থাকে তাহারা চিরকালই পাথর ছিল না। অনেক পাথর এক সময় মাটির মতন নরম ছিল। সেই নরম মাটিতে জানোয়ারের কংকাল জমিয়া অনেক সময়ে একেবারে পাথর হইয়া থাকে—এইরকম পাথরকে এক কথায় জীবশিলা বলা যাইতে পারে। এক সময় ছিল যখন পৃথিবীতে পাখি বা বাদুড় কিছুই দেখা যায় নাই তখন সরীসৃপের যুগ ছিল। অদ্ভুত কুমির বা গোসাপ তখন ভয়ংকর মূর্তি ধরিয়া পৃথিবীতে দৌরাত্ম্য করিত। সেই অতি প্রাচীন যুগের পাথরে এ-সকল বাদুড়ের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায় না -যা কিছু পাওয়া যায় সবই আরো আধুনিক যুগের। 'আধুনিক’ বলাতে মনে করিও না যে মাত্র কয়েক শত বা সহস্র বৎসরের কথা বলিতেছি—সে ‘আধুনিক' যুগ কয় লক্ষ বৎসর আগেকার তাহা আমি জানি না।

যতরকম ‘বাদুড় পাওয়া গিয়াছে তাহার মধ্যে সবচাইতে পুরাতনটি যে মাংসাশী ছিলেন, ইহার দাঁতের মধ্যে তাহার যথেষ্ট পরিচয় পাওয়া যায়। ইহার নাম রাখা হইয়াছে ‘ডাইমর্ফোডন’ (Dimorphodon) অর্থাৎ দ্বিমূর্তিদন্তী।

সবগুলি বাদুড়ই যে প্রকাণ্ড বড়ো হইত তাহা নহে, কিন্তু সবচাইতে বড়াগুলি যে খুবই বড়ো তাহাতে সন্দেহ নাই। দক্ষিণ আমেরিকায় যে-সকল বাদুড়ের চিহ্ন পাওয়া গিয়াছে তাহার এক-একটি ডানা মেলিলে পঁচিশ ফুট চওড়া হয়। ইহাদের মাথার উপরে অদ্ভুত এক প্রকাণ্ড শিং ছিল। এই শিংটা তাহার কি কাজে লাগিত তাহা জানি না, কিন্তু ইহাতে তাহার বিদঘুটে চেহারার কোনো উন্নতি হইয়াছিল বলিয়া বোধ হয় না। এত বড়ো জন্তুটা উড়িলে পরে তাহার ডানা ঝাপটাইবার শব্দ নিশ্চয়ই বহু দূর হইতে শোনা যাইত। ইহারা কোনোরূপ শব্দ করিত কিনা বলিতে পারি না কিন্তু আওয়াজ করিলে সেটা খুব সুমিষ্ট হইত কিনা সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। ইহাদের মখে নাকি দাঁত থাকিত না, কিন্তু তাহাতেও আশ্বস্ত হইবার বিশেষ কোনো কারণ দেখি না, কারণ ইহার যে ঠোঁট ছিল তাহাতে সাংঘাতিক ধার! সুতরাং তাহার ঠোকর দু-একটা খাইলে আর বেশি খাইবার দরকার হইত না। মোট কথা, এ জন্তুটা যে সেকালেই লোপ পাইয়াছে এটা আমাদের পক্ষে সৌভাগ্যের কথা বলিতে হইবে।

r1 ad
r1 ad