শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে— দ্য ন্যাশনালকে প্রধান উপদেষ্টা

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, আমরা তাকে (হাসিনা) বিচারের আওতায় আনব। এটি অবশ্যই করা হবে। তা না হলে জনগণ আমাদের ক্ষমা করবে না। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের খুঁজে বের করে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে এবং আইনের মুখোমুখি করা হবে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রীয় ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা দ্য ন্যাশনালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। দুবাইয়ের ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্টস সামিটের (ডব্লিউজিএস) এক ফাঁকে অধ্যাপক ইউনূস এ সাক্ষাৎকার দেন।
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস সাক্ষাৎকারে আরও বলেন, ‘আমরা ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছি, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ করতে হবে।’
জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে অপরাধ সংগঠিত হওয়ার বিপুল প্রমাণ আছে। এর মধ্যে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনও রয়েছে। জাতিসংঘ এটিকে নথিভুক্ত করেছে এবং আমাদের কাছে শেখ হাসিনা, তার সরকার ও ঘনিষ্ঠ সমর্থকদের অপরাধের প্রচুর প্রমাণ রয়েছে।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছি এবং আশা করছি এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। এটি অবশ্যই করা হবে, অন্যথায় জনগণ আমাদের ক্ষমা করবে না।’
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ১৪ শতাধিক প্রাণহানি ঘটে থাকতে পারে। এর মধ্যে ১২ থেকে ১৩ শতাংশ শিশু। পুলিশ জানিয়েছে, এই সহিংসতায় তাদের ৪৪ জন সদস্যও নিহত হয়েছেন।
দ্য ন্যাশনাল পত্রিকার সাক্ষাৎকারে আরও নানা প্রসঙ্গ উঠে আসে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রাখতে চাই। কারণ দেশটিতে ১২ লাখ বাংলাদেশি কর্মরত, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রধান উপদেষ্টা সাক্ষাৎকারে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে সংস্কার করে চলেছে। এসব সংস্কারের লক্ষ্য জনকল্যাণ ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে একটি নিরাপদ রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলা, যেখানে বাংলাদেশের ১৭ কোটি ৪০ লাখ মানুষ যেন প্রকৃত অর্থে ক্ষমতাবান হন।
জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা দ্রুত পুনরুদ্ধার এবং অর্থনীতিকে সচল করা। আমরা রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে আলোচনা করছি— কোন সংস্কার এখন বাস্তবায়ন করা হবে, কোনটি ভবিষ্যতে হবে এবং কোন সংস্কার প্রস্তাব তারা গ্রহণ করতে চান না।
তিনি বলেন, এটাই আমাদের সরকারের কাজের সীমা। এরপর আমরা ১৬ বছর পর প্রথমবারের মতো একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজন করব। জনগণ একে উদ্যাপন করবে এবং আমাদের কাজ শেষ হবে।