নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা প্রধান উপদেষ্টার এখতিয়ার: আসিফ নজরুল
টক-শোতে আগামী বছরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন নিয়ে দেওয়া বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
তিনি বলেছেন, তিনি কেবল একটি সম্ভাবনার কথা বলেছেন, যার সঙ্গে বিভিন্ন ‘ফ্যাক্টর’ যুক্ত রয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার সম্পূর্ণ এখতিয়ার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে আইন উপদেষ্টা এ ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। তার এই ব্যাখ্যা প্রধান উপদেষ্টার প্রেসউইং থেকেও গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে।
ব্যাখ্যায় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘সম্প্রতি একটি টিভি আলোচনায় আমি বলেছি, নির্বাচন হয়তো আগামী বছরের মধ্যে সম্ভব হতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে অনেকগুলো ফ্যাক্টর রয়েছে। সেখানে এসব ফ্যাক্টর পুরোপুরি ব্যাখা করার সুযোগ পাইনি। কিন্তু আমাদের সরকারের কথা থেকে সবাই বুঝবেন যে নির্বাচনের জন্য সংস্কার ও রাজনৈতিক সমঝোতার কথা বলা হয়। এগুলোই সেই ফ্যাক্টর।’
কিছু ‘ফ্যাক্টরে’র কথা টিভি আলোচনাতেও বলেছেন উল্লেখ করে আসিফ নজরুল বলেন, ‘সংস্কারের কথা আমিও অনুষ্ঠানে বলেছি। আরও কিছু ফ্যাক্টর আমি অনুষ্ঠানটিতে ব্যাখা করেছি, যেমন— সার্চ কমিটি ও নির্বাচন কমিশন গঠন, ভোটার তালিকা প্রণয়ন ইত্যাদি। এসব ফ্যাক্টর ঠিক থাকলে নির্বাচন হয়তো হতে পারে আগামী বছর। বলেছি, এটাও আমার প্রাথমিক অনুমান।’
তার বক্তব্যকে গণমাধ্যমে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি ব্যাখ্যায় লিখেছেন, ‘এই শর্তভিত্তিক ধারণা ও অনুমানকে কিছু গণমাধ্যম নির্বাচনের ঘোষণা হিসেবে দেখাচ্ছে। বিনয়ের সঙ্গে বলছি, এটা সঠিক নয়।’
নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার এখতিয়ার প্রধান উপদেষ্টার— এ কথা উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা লিখেছেন, ‘নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত সিদ্ধান্ত (পলিসি ডিসিশন)। এর সময় সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে ঠিক হবে। তিনিই একমাত্র এটা ঘোষণার এখতিয়ার রাখেন।’
দায়িত্ব গ্রহণের প্রায় দুই মাসের মধ্যে অন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টারা জাতীয় নির্বাচন কবে হবে-সেই প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছেন। উপদেষ্টাদের অনেকেই এই প্রশ্নটি এড়িয়ে যান।
এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আইয়ের এক অনুষ্ঠানে দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী নির্বাচনের সময় জানতে চাইলে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল আগামী বছর নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাবনার কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, আগামী বছরের মধ্যে নির্বাচন করাটা হয়তো সম্ভব হতে পারে। অনেক ফ্যাক্টর রয়েছে। এটা প্রাইমারি অ্যাজাম্পশন (প্রাথমিক অনুমান)।’
এর আগে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া প্রথম ভাষণে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, কখন নির্বাচন হবে সেটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। দায়িত্ব নেওয়ার এক মাস পর দেওয়া আরেক ভাষণে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কারে ছয়টি কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন।
এদিকে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান গত ২৪ সেপ্টেম্বর বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, নির্বাচন যেন আগামী ১৮ মাসের মধ্যে হতে পারে সে জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সম্পন্ন করতে ‘পরিস্থিতি যাই হোক না কেন’ তিনি মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাবেন।
তবে বিএনপি বরাবরই যত দ্রুতসম্ভব নির্বাচন দাবি করে আসছে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনের আগে সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা সম্প্রতি বিএনপি ও জামায়াতসহ বেশ কয়েকটি দলের সঙ্গে সংলাপ করেছেন। আজ শনিবারও কয়েকটি দলের সঙ্গে সংলাপ করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস।