top ad image
top ad image
home iconarrow iconঘরের রাজনীতি

ভোটের আগে ৩ শর্ত পূরণ করতে হবে: জামায়াতের আমির

ভোটের আগে ৩ শর্ত পূরণ করতে হবে: জামায়াতের আমির
বৃহস্পতিবার ইউরোপ সফর নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। ছবি: ভিডিও থেকে

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে আয়োজনের পক্ষে দলের অবস্থান তুলে ধরেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তবে নির্বাচন হওয়ার আগে তিন শর্ত পূরণ হতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। বলেছেন, এসব শর্ত পূরণের পরই নির্বাচন হতে হবে। এর জন্য কিছু সময় বেশি লাগলেও তাতে জামায়াতের আপত্তি নেই।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি দলের ইউরোপ সফর নিয়ে আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও ইইউ কমিশনসহ অংশীজনদের সঙ্গে জাতীয় নির্বাচন ও জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান নিয়ে কী আলোচনা হয়েছে— এমন প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের আমির নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে তিনটি শর্তের কথা তাদের জানিয়েছেন বলে মিট দ্য প্রেসে তুলে ধরেন। এগুলো হলো— দৃশ্যমান গ্রহণযোগ্য মৌলিক সংস্কার, জুলাই আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় জড়িতদের দৃশ্যমান বিচার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্য পারস্পরিক সম্মানের পরিবেশ তৈরি করা।

জামায়াতের আমির বলেন, মৌলিক কিছু বিষয়ে সংস্কার সাধন না করে নির্বাচন করা হলে সেই নির্বাচন গণতেন্ত্রের কোনো ভিত্তি রচনা করতে পারবে না। এর আগেও দেশে নির্বাচন হয়েছে, যা দেশ ও জাতি এবং বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। সে রকম কোনো নির্বাচন আমরা চাই না। হাজারও প্রাণের বিনিময়ে, হাজার হাজার মানুষের আহত হওয়ার বিনিময়ে, রক্তের বিনিময়ে যে পরিবর্তনের ধারায় আমরা এসেছি, তাতে সংস্কার অবশ্যই করতে হবে।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে যারা নিহত ও আহত হয়েছেন, তাদের হতাহতের জন্য যারা দায়ী তাদের বিচার দৃশ্যমান হওয়ার দাবি সবার। জাতির প্রত্যাশা, খুনিদের বিচার হবে, অপরাধীদের বিচার হবে। স্বজন তো আর ফিরে আসবে না, কিন্তু শহিদ পরিবারগুলো যেন ন্যূনতম সান্ত্বনা পায়, শহিদদের আত্মা যেন শান্তি পায় যে দেশে ন্যায় বিচার রয়েছে। এই বিচার দৃশ্যমান হতে হবে।

তৃতীয় শর্তের কথা তুলে ধরে জামায়াতের আমির বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে পরস্পরকে সম্মান করার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আমি জিতে গেলে নির্বাচন সুষ্ঠু, আমি হেরে গেলে দুষ্ট— এই মানসাকিতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তবে হ্যাঁ, নির্বাচনও এমন হতে হবে যেন তা নিয়ে কেউ সহজে প্রশ্ন তুলতে না পারে। এর জন্য অনেক সংলাপ প্রয়োজন। সরকার সংলাপ আয়োজন করতে পারে, রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে সংলাপ করতে পারে। দেশের সুশীল সমাজেরও দায়িত্ব রয়েছে। তারাও সেই দায়িত্বের জায়গা থেকে সংলাপ আয়োজন করতে হবে। এভাবে একাধিক জায়গা থেকে যখন সবার মধ্যে সংলাপ, আলোচনা হবে, তখন সেই সম্মানজনক পরিবেশ তৈরি হবে।

নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে বিএনপি ডিসেম্বরকে ‘কাট-অফ’ টাইম হিসেবে বিবেচনা করছে। জামায়াতের আমির বুধবারও মার্কিন কূটনীতিকদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর রমজানের আগেই নির্বাচন আয়োজনের কথা জানিয়েছিলেন। নির্বাচন নিয়ে জামায়াতের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নও রাখা হয় তার কাছে।

জবাবে শফিকুর রহমান বলেন, আমরা এককভাবে শুধু নির্বাচনের কথা বলিনি। নির্বাচনের জন্য সংস্কার তো প্রয়োজন হবেই। আমরা সম্ভাব্য একটি সময়ের কথা বলেছি। তবে বিএনপির মতো কঠোর অবস্থানে আমরা নেই। আমরা মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার পক্ষে। তার জন্য বাস্তবতা বিবেচনায় সময় বেশি লাগলে সেই সময় দিতে হবে। ভোটের অধিকারের জন্য আমরা ১৫/১৬ বছর ধরে অপেক্ষা করছি। যৌক্তিক কারণে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হলে সেটাও করব।

তিনি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বারবার বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। আমরা এর আগের সময়টাকে সংস্কার ও বিচারসহ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের আনুষাঙ্গিক প্রস্তুতির সময় হিসেবে বিবেচনা করছি। কিন্তু এই সময়ের সীমা যেন অতিক্রম করে না যায়, সে বিষয়েও আমরা সতর্ক দৃষ্টি রাখব।

ইউরোপ সফরে লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানস তারেক রহমানের বাসায় দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। সাক্ষাতে দলের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরও তার সঙ্গে ছিলেন। এরই মধ্যে এ সাক্ষাৎ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে জামায়াতের আমির বলেন, তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল তাকে দেখতে যাওয়া। অসুস্থ একজন সহকর্মীকে দেখতে যাওয়ার নৈতিক দায়িত্ব পালনই ছিল প্রধান বিষয়। তবে দুটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা বৈঠক করলে রাজনীতির বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে, সেটি স্বাভাবিক। আমাদের মধ্যেও হয়েছে। তবে এটি ছিল সাধারণ আলোচনা। কোনো ধরনের সিদ্ধান্তমূলক আলোচনা হয়নি।

আরেক প্রশ্নের জবাবে শফিকুর রহমান বলেন, খালেদা জিয়া কবে দেশে ফিরবেন সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কথা হয়নি। তবে সাধারণ যে আলোচনা হয়েছে তাতে আমরা অনুমান করেছি, তিনি হয়তো আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে দেশে আসতে পারেন। তবে তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয় নিয়ে তিনিও কিছু বলেননি, আমরাও কোনো প্রশ্ন তুলিনি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সংসদ নির্বাচনে জোট গঠনের বিষয়ে এখনো দলের মধ্যে আলোচনা বা সিদ্ধান্তের কোনো জায়গা তৈরি হয়নি বলে জানান জামায়াতের আমির। নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে কৌশলগত কোনো সম্পর্ক জামায়াতের থাকবে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দলটি এখনো গঠিত হচ্ছে। তারা দল হিসেবে গঠিত হোক, তাদের কার্যক্রম দেখে তারপর সার্বিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এর আগে মিট দ্য প্রেসের শুরুতে ইউরোপ সফরের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন ডা. শফিকুর রহমান। সফরে বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনীতি, কর্মসংস্থান নিয়ে বিস্তাারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি। বলেন, বাংলাদেশে বিদেশিদের বিনিয়োগ করার জন্য তারা আহ্বান জানিয়েছেন এবং এর পক্ষে নানা কারণ তুলে ধরেছেন।

r1 ad
r1 ad
top ad image