এবারের বাজেট গতানুগতিক : সংসদে জিএম কাদের
প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটকে গতানুগতিক বাজেট আখ্যা দিয়ে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, আগের ৪-৫ বছরের বাজেটে যে ধরনের ধ্যান ধারনার উপর ও যে প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয়েছিল, যে ধরনের ভাষা ব্যবহার করা হয়েছিল মোটামুটি সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বর্তমান প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে।
আজ জাতীয় সংসদে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, এ বছরের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অন্যান্য বছরের চেয়ে অনেক বেশী সঙ্কটময়। বর্তমান পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বে কম বেশি অর্থনৈতিক মন্দা ও যা থেকে প্রায় দেশই উত্তরনের পথে।
আমাদের দেশের চরম অর্থনৈতিক দুর্দশা আমলে নিয়ে সে অনুযায়ী কোন দিক নির্দেশনা বা উদ্যোগ এ বাজেটে লক্ষ্য করা যায় না উল্লেখ করে বিরোধী দলের নেতা বলেন, সবগুলি না হলেও কিছু কিছু সমস্যা বাজেটে চিহ্নিত করার প্রয়াস লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু বাজেট প্রণয়নে বরাদ্দ, রাজস্ব আহরণে যে কর প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে চিহ্নিত সমস্যাসমূহ সমাধানের পরিবর্তে অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যা বৃদ্ধি করবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং হামাস-ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের কারণে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে ৬ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করেন।
বিরোধী দলের নেতা বলেন, বিশ্বব্যাপী কোভিড মহামারীর প্রকোপ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি কারণে সারা বিশ্বে বড় ধরনের অর্থনেতিক মন্দার ধাক্কা লেগেছিল। ধীরে ধীরে প্রায় দেশই এর থেকে উত্তরনে সক্ষম হয়েছে। অনেক দেশ উত্তরনের পথে অগ্রসরমান। কিন্তু বাংলাদেশের চিত্র ভিন্ন।
সামষ্টিক অর্থনীতিতে যে অস্থির চিত্র তার কিছু কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বৈদেশীক মুদ্রার রিজার্ভের ঘাটতি, টাকার বিনিময় হারের পতন, সীমিত রপ্তানির প্রবৃদ্ধ, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, ক্রমবর্ধমান সুদের হার, উচ্চ নন-পারফরমিং ঋণ, সরকারের সংকুচিত আর্থিক ক্ষমতা, এডিপি ব্যয়ের হ্রাস, বৈদেশিক ঋন পরিশোধের ক্রমবর্ধমান চাপ, বাজেট ঘাটতি অর্থায়নের জন্য ব্যাংক ঋনের উপর অতি নির্ভরশীলতা, বিদেশি বিনিয়োগের পতন, বেসরকারি বিনিয়োগে স্থবিরতা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি হ্রাস বড় কারণ।
জিএম কাদের বলেন, ‘কোন দেশের রিজার্ভকে নিরাপদ মাত্রায় রাখতে হলে কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান রিজার্ভ রাখতে হয়। সে ক্ষেত্রে আমাদের রিজার্ভ বেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় নেমে এসেছে বলা যায়। রপ্তানি আয় ও প্রবাসি আয় যতক্ষণ না দেশের মোট আমদানি ব্যয়ের সমান বা বেশি না হবে ততক্ষণ না পর্যন্ত রিজার্ভের ক্রমাবনতি অব্যাহত থাকবে। ইতোমধ্যে আইএমএফ এর ঋণের ছাড় ও অন্যান্য বিদেশি সাহায্য বা অন্যান্য ঋনের অর্থে হঠাৎ রিজার্ভ বৃদ্ধি হতে পারে। কিন্তু এই রিজার্ভ আবার কমতে থাকবে যতক্ষন পর্যন্ত না রপ্তানি ও প্রবাসী আয় আমদানি ব্যায়ের চেয়ে বেশি থাকবে। এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় বর্তমানে আমদানি ব্যয় যথেষ্ট পরিমানে নিয়ন্ত্রণ করার পরেও রিজার্ভ ধরে রাখা যাচ্ছেনা। মনে রাখতে হবে আমদানি ব্যয় একটা পর্যায়ের নিচে কখনই নামানো সম্ভব হবে না। যেহেতু দেশে আমদানী চাহিদার একটি নিম্নতম স্তর আছে। এ ছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হ্রাস এবং আমদানি হ্রাস পেলে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি হয়, টাকার অবমূল্যায়ন হয় এবং মূল্যস্ফীতি হয়।ফলে আমদানি ব্যয় সংকোচনের ফলে সর্বনিম্ন স্তরে নিয়ে আসার মাধ্যমে যদি রিজার্ভের স্থিতিশীল অবস্থা ধরে রাখা না যায়; তাহলে সার্বিক অর্থনীতিতে বিশৃঙ্খল অবস্থা দেখা দিবে।’