top ad image
top ad image
home iconarrow iconঘরের রাজনীতিarrow iconবিশ্ব রাজনীতি

বাংলাদেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন অমর্ত্য সেন, আস্থা রাখছেন ‘বন্ধু’ ড. ইউনূসের দক্ষতায়

বাংলাদেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন অমর্ত্য সেন, আস্থা রাখছেন ‘বন্ধু’ ড. ইউনূসের দক্ষতায়
নিজ বাসভবনে অমর্ত্য সেন। পিটিআই ফাইল ছবি

ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ঘটনাবলি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন ভারতের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. অমর্ত্য সেন। তিনি জানিয়েছেন, এই রাজনৈতিক পালাবদেলের প্রভাব নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। তবে ড. ইউনূসের দক্ষতার ওপরও আস্থা রাখছেন তিনি।

অধ্যাপক ইউনূসকে নিজের বন্ধু অভিহিত করেই নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন বলছেন, তিনি নানা ধরনের উদ্যোগই গ্রহণ করছেন। তবে যে পরিস্থিতি দেশে তৈরি হয়েছে, সে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য তাকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।

ভারতের বার্তা সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন ড. অমর্ত্য সেন। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমে নিজ বাসভবনে দেওয়া এ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মতো সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলোকে এতদিন নিয়ন্ত্রণে রেখে এসেছে। এখনো বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িকতার প্রতিই সম্মান প্রদর্শন করা উচিত।

অমর্ত্য সেনের জন্ম কলকাতায় হলেও তার পূর্বপুরুষের বাড়ি মানিকগঞ্জে। বেড়ে ওঠা ও প্রথম স্কুল ঢাকায়। ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে তার নাড়ির টান রয়েছে। অমর্ত্য সেন নিজেও বহুবার বাংলাদেশকে ঘিরে তার স্মৃতিকাতরতার কথা জানিয়েছেন, বলেছেন বাংলাদেশের প্রতি ভালোবাসার কথা।

অমর্ত্য সেন সাক্ষাৎকারে বলেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি আমাকে খুব প্রভাবিত করছে। কারণ আমার পরিচয়ের সঙ্গে বাঙালিত্ব ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। ঢাকায় আমি অনেক সময় কাটিয়েছি, আমার স্কুলের শুরুটাই ওখানে। তাছাড়া মার পূর্বপুরুষের ভিটে মানিকগঞ্জে অনেকবার গিয়েছি। আমার মায়ের বংশের আদিনিবাসও বাংলাদেশ। আমি বিক্রমপুর, বিশেষ করে সোনারগাঁওয়ে অনেক গিয়েছি।

তিনি বলেন, আমার ব্যক্তিজীবনের ওপর সব স্থানের গভীর প্রভাব রয়েছে। তাই অন্য আরও অনেকের মতো আমিও নিজেও উদ্বিগ্ন যে বাংলাদেশ এর সামনে থাকা চ্যালেঞ্জগুলো কীভাবে মোকাবিলা করে পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাবে।

স্বাধীনতার পর থেকে শুরু করে পাঁচ দশকে বাংলাদেশের বিভিন্ন অর্জনের কথা তুলে ধরেন অমর্ত্য সেন। বলেন, বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় একপর্যায়ে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে। জন্মহার নিয়ন্ত্রণ ও গড় আয়ুতেও ভারতের তুলনায় অনেক ভালো করেছে বাংলাদেশ। আর্থসামাজিক নানা অগ্রগতিরও সাক্ষী হয়েছে। বিশেষ করে সরকার এবং ব্র্যাক বা গ্রামীণ ব্যাংকের মতো বেসরকারি সংস্থাগুলোর সম্মিলিত চেষ্টায় নারী অধিকারে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে।

অমর্ত্য সেনের প্রত্যাশা, এসব অগ্রগতি ধরে রাখবে বাংলাদেশ। এর মধ্যে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেন তিনি। বলেন, অনেক দেশেই এ ধরনের পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী ক্ষমতা নিয়ে থাকে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সেটি না করায় বাহিনীকে ধন্যবাদও জানান তিনি।

আবার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়েও সতর্ক করেন দিয়েছেন এই অর্থনীতিবিদ। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করে থাকে, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করলে তাদের সেই কই ভুলের পুনরাবৃত্তি করা হবে বলে মনে করছেন তিনি।

অমর্ত্য সেন বলেন, বাংলাদেশের এখন উচিত কোনো নির্দিষ্ট দল বা গোষ্ঠীকে অপাঙ্ক্তেয় করে রাখার পরিবর্তে র্ত ঐকবদ্ধভাবে কাজ করার ঐতিহ্যের সর্বোচ্চত্ম ব্যবহার নিশ্চিত করা। বৃহত্তর পরিসরে দেখতে হবে। আমি আশা করি, বাঙালির স্বাধীনতা ও বহুত্ববাদের প্রতিশ্রুতি অব্যাহত থাকবে। আমি আরও আশা করি, আগামী নির্বাচন অন্যদের দাবির তুলনায় আরও অনেক বেশি অবাধ হিসেবে দৃশ্যমান হবে।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস প্রসঙ্গেও জানতে চাওয়া হয় অমর্ত্য সেনের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, ইউনূস আমার বন্ধু। আমি জানি সে অত্যন্ত সক্ষম একজন ব্যক্তি এবং নানা দিক থেকেই উল্লেখযোগ্য একজন মানুষ। অসাম্প্রদায়িকতা ও গণতান্ত্রিক প্রতিশ্রুতি নিয়ে এরই মধ্যে সে শক্তিশালী অবস্থান দেখিয়েছে।

তবে অন্য বিষয়গুলোও বিবেচনায় রাখছেন তিনি। অমর্ত্য সেন বলেন, কেউ যদি হঠাৎ করে কোনো দেশের প্রধান হয়ে যায়, ঠিক যেমন ইউনূস হয়েছে, তাহলে আপনাকে বিভিন্ন গোষ্ঠীকে বিবেচনায় নিতে হবে। এখানে ইসলামী দল আছে, হিন্দু গোষ্ঠীগুলোও রয়েছে। তারপরও আমি ইউনূসের দক্ষতার ওপর দৃঢ় আস্থা রাখি।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা এবং মন্দিরে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান অমর্ত্য সেন। সরকারেরই এসব হামলা ঠেকানোর দায়িত্ব বলেও মত দেন তিনি।

অমর্ত্য সেন তিনি বলেন, বাংলাদেশ ঐতিহাসিকভাবে সংখ্যালঘুদের প্রতি নিজেদের আচরণ ও জামায়াতের মতো সাম্প্রদায়িক শক্তি নিয়ন্ত্রণে রাখা নিয়ে গর্ব করতে পারে। দুঃখজনক বিষয়, ভারতেও মসজিদে হামলার ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশ হোক বা ভারত, উভয়কেই এ ধরনের ঘটনা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।

r1 ad
r1 ad
top ad image