বিদেশের কারাগারে বন্দি সাড়ে ১১ হাজার বাংলাদেশি
বিদেশের কারাগারে ১১ হাজার ৪৫০ জন বাংলাদেশি বন্দি রয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। সোমবার (১ জুলাই) জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ফরিদা ইয়াসমিনের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ তথ্য জানান।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়।
মন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী, ৩১টি দেশে বাংলাদেশি বন্দি আটক রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আটক আছে সৌদি আরবে, ৫ হাজার ৭৪৬ জন। প্রতিবেশী দেশ ভারতে আটক আছে এক হাজার ৫৭৯ জন। অন্যান্য দেশের মধ্যে তুরস্কে ৫০৮ জন, ওমানে ৪২০ জন, কাতারে ৪১৫ জন, গ্রিসে ৪১৪ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৪০৪ জন, দক্ষিণ আফ্রিকায় ৩৮৫ জন, মিয়ানমারে ৩৫৮ জন।
গার্মেন্টস পণ্য রফতানিতে যুক্তরাষ্ট্র কখনোই শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা দেয়নি
জাতীয় পার্টির মুজিবুল হকের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র কখনোই শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা দেয়নি। জিএসপি সুবিধাকালীন সময়েও গার্মেন্টস পণ্য এর আওতাবহির্ভূত ছিল। এ সুবিধা ছাড়াই উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্য রফতানির একক বৃহত্তম বাজারে পরিণত হয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র তাদের জিএসপি পদ্ধতি পুনঃপ্রবর্তন করেনি। জিএসপি সুবিধা আবার চালু হলে তাতে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি এবং গার্মেন্টস পণ্যকেও জিএসপির আওতায় আনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কোনও বিশেষ আঞ্চলিক চুক্তি/সহায়তা কার্যক্রম ছাড়া কোনও দেশই যুক্তরাষ্ট্রে গার্মেন্টস পণ্য রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায় না। সংরক্ষিত মহিলা আসনের সরকারদলীয় এমপি ফরিদা ইয়াসমিনের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, বর্তমানে বিশ্বের ৬০টি দেশে বাংলাদেশের ৮৪টি কূটনৈতিক মিশন রয়েছে, যার মধ্যে ৮০টির কার্যক্রম চালু রয়েছে। এর মধ্যে ৪৭টি দূতাবাস, ১৪টি হাইকমিশন, ১২টি কনস্যুলেট, ৩টি স্থায়ী মিশন, ৪টি উপ-হাইকমিশন এবং ৪টি সহকারী হাইকমিশন রয়েছে। তিনি জানান, অন্তত আরও ৯টি নতুন মিশন স্থাপনের লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
পশ্চিম এশিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের ৬০ শতাংশ আধাদক্ষ ও অদক্ষ
চট্টগ্রাম-১১ আসনের সরকারদলীয় এমপি আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পশ্চিম এশিয়া বাংলাদেশের প্রধান রফতানির বাজার এবং রেমিট্যান্সের প্রধান উৎস। সরকারের গত দেড় দশকের নিরলস প্রচেষ্টায় ২০০৯ থেকে মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমশক্তি দ্বিগুণ রফতানি হয়েছে। উল্লেখ্য, এ অঞ্চলে শ্রমশক্তির প্রায় ৬০ শতাংশ আধাদক্ষ ও অদক্ষ কর্মী নিয়োজিত আছে এবং অঞ্চলটি ৬০ শতাংশ রেমিট্যান্সের উৎস।
তিনি বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১১ লাখ ৮১ হাজার ৫৩ জন বাংলাদেশি নাগরিক কর্মসংস্থান ভিসা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বৈধভাবে যায়। অবৈধ হয়ে পড়া এসব বাংলাদেশির মানবিক সাহায্যের পাশাপাশি এ দেশে বৈধতা দিতে নিরবচ্ছিন্ন কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো হয়। ২০১৮ সালে সাধারণ ক্ষমার আওতায় সরকার প্রায় ৪০ হাজার বাংলাদেশির জেল ও জরিমানা মওকুফ করিয়ে দেশে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ প্রদান করে। কারোনাকালে কাজ হারিয়ে অবৈধ হওয়া কর্মীদের একটি বড় অংশ নিয়োগকর্তা পরিবর্তনের মাধ্যমে বৈধ হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। এর বাইরে ২০২০-২২ মেয়াদে ভিজিট ভিসা থেকে কর্মী ভিসায় রূপান্তরের সুযোগ নিয়ে প্রায় ৩ লাখ বাংলাদেশি নাগরিক বৈধ কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৩ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতে কর্মী ভিসা সংকুচিত থাকলেও নিরবচ্ছিন্ন কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় ২০২১ সাল থেকে আবার বাংলাদেশি কর্মী পাঠানো বেড়েছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, কিছু কিছু প্রবাসী বেশি উপার্জনের লোভে তাদের নিয়োগকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে জর্ডানে অবৈধ হয়ে যায়। বাংলাদেশ দূতাবাস, আম্মান শ্রমিকদের পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা কমানোর জন্য নিয়োগকারীদের সহযোগিতায় তাদের কর্মক্ষেত্রে পোস্ট অ্যারাইভাল সেশনসহ নিয়মিত সেশনের আয়োজন করে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রে র্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলমান
চট্টগ্রাম-১১ আসনের সরকারদলীয় এমপি এম আবদুল লতিফের অপর এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় র্যাবের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে শুরু থেকে অদ্যাবধি ক্রমাগত প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। র্যাবের বিরুদ্ধে আনীত কথিত অভিযোগগুলোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের কাছে পদ্ধতিগতভাবে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ও বিধিগত প্রক্রিয়া চলমান আছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুবিবেচনা আশা করছে।
স্বতন্ত্র এমপি আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগারের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া বাংলাদেশি নাগরিকদের দেশে প্রত্যাবাসনের জন্য সংশ্লিষ্ট দূতাবাস আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইএমও) সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে তাদের উদ্ধার করে দেশে প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করে থাকে। ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও আইএমও’র প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় অনিয়মিত এক হাজার ৪৭৯ জন বাংলাদেশিকে ফেরত আনা হয়। সুদান থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১২০০ জন প্রবাসী বাংলাদেশিকে উদ্ধার করে। পরে সরকারি খরচে দেশে ফেরত আনার ব্যবস্থা করে।
সরকারদলীয় এমপি মাইনুল হোসেন খানের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম (সিটিটিসি) বিভাগ সার্বক্ষণিক কার্যক্রম ও তদারকি অব্যাহত রেখেছে, যার ফলে সারা দেশে স্বস্তি বিরাজ করছে এবং বিশ্বদরবারে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।