top ad image
top ad image
home iconarrow iconঘরের রাজনীতি

'সরকারের নৈতিক ও রাজনৈতিক পরাজয় হয়েছে'

'সরকারের নৈতিক ও রাজনৈতিক পরাজয় হয়েছে'

২০২৪ সালের জুলাই যেটা হয়েছে সেটা একটা গণঅভ্যুত্থান। এখানে শিশু, নারী, সাংবাদিক, ডাক্তার, প্রকৌশলী বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষেরা অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে সরকারের নৈতিক ও রাজনৈতিক পরাজয় নিশ্চিত হয়েছে বলে মনে করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বক্তারা। কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট অচলাবস্থা নিরসণের দাবিতে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে নাগরিক সংগঠন সুজন।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারের নৈতিক এবং রাজনৈতিক পরাজয় নিশ্চিত হয়েছে। ২০২৪ সালে যেটি হয়েছে— সেটা একটি গণঅভ্যুত্থান। ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে মাত্র ৬১ জন মানুষ মারা গেছে। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের চেয়ে চারগুণ বেশি মানুষ মারা গেছে। গণঅভ্যুত্থানের চরিত্র কাকে বলে? যেখানে সব শ্রেণি পেশার মানুষ থাকে। এখানে শিশু, নারী, সাংবাদিক, ডাক্তার, প্রকৌশলী বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষেরা এখানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।’

৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ১২ জন মারা গেছেন জানিয়ে এই অধ্যাপক বলেন, ‘আমরা এই আন্দোলনকে সাংস্কৃতিক না একটি রাজনৈতিক আন্দোলন বলি। মানুষের যে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ ছিল ৪৭ থেকে ৫২ পর্যন্ত সব ধরনের মানুষ সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ করেছে। ২০২৪ সালে গণঅভ্যুত্থান হয়ে গেছে। তার রেশ এখনও চলছে। এর মধ্য দিয়ে সরকারের নৈতিক এবং রাজনৈতিক পরাজয় নিশ্চিত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আপনার রাষ্ট্রের নিজস্ব নাগরিক মারবার জন্য আপনি হেলিকপ্টার ব্যবহার করেছেন। সেখান থেকে টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও গুলি ছোড়া হয়েছে। ঘরের মধ্যে শিশুকে মারা হয়েছে। সাংবাদিককে মারা হয়েছে। এটা যদি গণঅভ্যুত্থান না হয়, তাহলে গণঅভ্যুত্থান কোনটা আমি ঠিক জানি না।’

আওয়ামী লীগ চলে গেলে কী বিএনপি- জামায়াত আসবে, এমন প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আমরা বিএনপিকে দেখেছি ব্যর্থ হয়েছে। জামায়াতকে দেখেছি, জাতীয় পার্টিকে দেখেছি ব্যর্থ হয়েছে। সব রাজনৈতিক দল যারা ব্যর্থ হয়েছে, তাদের সবাইকে না বলতে হবে।’

দেশের সংবিধান নতুন করে লিখতে হবে মন্তব্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা আমাদের দেখাচ্ছে কীভাবে নতুন সংবিধান লিখতে হয়। নতুন রাজনৈতিক দল তৈরি করতে হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে মন্তব্য করে সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘অনেকগুলো মৌলিক অধিকার থেকে ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে আমরা সবাই বঞ্চিত। ভোটাধিকার থেকে আমরা সবাই বঞ্চিত। মৌলিক নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। নাগরিক হিসেবে যেগুলো আমাদের সংবিধানে স্বীকৃত, সেগুলো থেকে আমরা বঞ্চিত।’

তিনি বলেন, ‘ভোটাধিকার না থাকার কারণে সরকারের কোনও জবাবদিহি নেই। এজন্য তারা বল প্রয়োগের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করছে ‘

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও পরিবেশ সংগঠন বেলা’র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে সংকট নিরসনে কোনও কার্যকর ভুমিকা আমরা দেখছি না। সরকার কোনোভাবে একটা প্রলেপ লাগানোর চেষ্টা করছে। আজকে যে ক্ষতটা এই জাতির হৃদয়ে হয়ে গেছে, সেটা অনেক বেশি গভীর।’

এবার যদি বাংলাদেশে বিচার না হয়, তাহলে দেশ থেকে বিচার শব্দটা একেবারেই উঠে যাবে বলে মন্তব্য করে এই আইনজীবী বলেন, ‘এবার নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিচারের দাবি জানাতে হবে। বিচার না হওয়া পর্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক মহলের সংশ্লিষ্টতা নিশ্চিত করে বিচার না হওয়া অব্দি আমাদের চুপ হয়ে যাওয়া, অথবা সান্ত্বনা পাওয়ার কোনও সুযোগ নেই।’

এসময় অচলাবস্থা নিরসণে সরকারের প্রতি সুপারিশ জানানো হয় সুজনের পক্ষ থেকে। তাদের সুপারিশগুলো হলো:

নিহতদের নাম পরিচয়সহ বিস্তারিত বিবরণ সম্বলিত তালিকা প্রকাশ করা। নিরপেক্ষ ব্যক্তি ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সহিংসতার সব ঘটনার স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করা এবং দায়ীদের বিচারের ব্যবস্থা করা। একইসঙ্গে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি আন্তর্জাতিক তদন্তও হওয়া উচিত। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মামলা প্রত্যাহার, নতুন করে মামলা না দেওয়া এবং গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দেওয়া (কেননা, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের মন্ত্রীরাই বলছেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সহিংসতায় লিপ্ত হয়নি) এবং গায়েবি মামলা ও ব্লক রেইড দিয়ে ঢালাওভাবে গ্রেফতার বন্ধ করা।

আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদের নিরাপত্তা দেওয়া এবং ভবিষ্যতে হয়রানি না করার অঙ্গীকার করা, সহিংসতায় নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা এবং প্রয়োজনের নিরিখে পরিবারের কোনও সদস্যের চাকরির ব্যবস্থা করা। আহতদের সরকারি খরচে চিকিৎসাসেবা প্রদানসহ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।

শিক্ষার ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অবিলম্বে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষাঙ্গন-সহ জনজীবনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে কাউফিউ তুলে নিয়ে এবং ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার করে বাকস্বাধীনতা-সহ জনগণের সব মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের সিট বাণিজ্য বন্ধ করে যথাযথ নিয়মে প্রশাসনিকভাবে সিট বরাদ্দ করা, অছাত্রদের হলে অবস্থান নিষিদ্ধ করা এবং কমনরুম কালচার, র‌্যাগিং কালচার ইত্যাদি বন্ধ করা। ভবিষ্যতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের ছাত্রত্ব বাতিলের অঙ্গীকার করা। শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব বিকাশে সারা দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন করা, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিধান অনুযায়ী লেজুরবৃত্তির ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা এবং স্বাধীন ছাত্ররাজনীতির পরিবেশ সৃষ্টি করা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার বন্ধ করা এবং পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানো থেকে বিরত থাকা, গণতান্ত্রিক অধিকারসহ নাগরিকদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা এবং রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা এবং সংবিধানকে প্রকৃত অর্থেই অসাম্প্রদায়িক চরিত্রে ফিরিয়ে আনা।

r1 ad
r1 ad