গোষ্ঠী স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ জাতিকে বিভক্ত করেছে সরকার: জি এম কাদের

অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনেজাতীয় পার্টির অবদান অস্বীকার করতে চাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের)।
তিনি বলেন, ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম করেছে। কিন্তু এই সরকার আমাদের কারও অবদান স্বীকার করছে না। কোনো বিষয়ে আমাদের মতামত গ্রহণ করা হচ্ছে না। বর্তমান সরকার একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ জাতিকে বিভক্ত করে চলেছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির এক সভায় তিনি এ কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করছিলেন তিনি।
জি এম কাদের বলেন, আমরা সংসদে ও রাজপথে আওয়ামী লীগের সব অন্যায়-অবিচার, দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম। প্রতিটি অন্যায় ও জুলুমের প্রতিবাদ করেছি। ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আমরা দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে মাঠে ছিলাম। আন্দোলনে যোগ দিয়ে রংপুরে আমাদের নেতাকর্মীরা হামলা ও মামলার শিকার হয়েছে। গ্রেফতার হয়ে জেল খেটেছে। রংপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আমাদের দুজন নেতা শহিদ হয়েছেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অন্যায়ভাবে সভা, সমাবেশ ও মিছিলের মতো স্বাভাবিক রাজনীতিতে বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন জাপা চেয়ারম্যান। বলেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা হচ্ছে।
জি এম কাদের আরও বলেন, বড় দুটি রাজনৈতিক দল সবসময় জাতীয় পার্টিকে ধ্বংস করতে চেয়েছে। ১৯৯০ সালের পর আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর মামলা-হামলা দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। আমাদের অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। আমাদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। এসব এখন আবার নতুন করে শুরু হয়েছে। আর একটি দল আমাদের দলের মধ্যে বিভক্তি তৈরি করে আমাদের দুর্বল করার চেষ্টা করেছে। সব বাধা-বিপত্তি মোকাবিলা করে জাতীয় পার্টি জনগণের সকল অধিকারের প্রশ্নে মাঠে ছিল, মাঠে থাকবে।
সরকারের বিরুদ্ধে বিভাজন তৈরির অভিযোগ তুলে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, সরকার এর মধ্যে দিয়ে দেশকে অন্ধকারের পথে নিয়ে যাচ্ছে। ঘৃণা ও প্রতিহিংসার প্রসার ঘটিয়ে দেশকে সংঘাত ও সহিংসতার পথে নেওয়া হচ্ছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা কারও নিয়ন্ত্রণে নেই। দেশ অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে চলছে। কে কোথায় বেইজ্জত হবে, কার বাড়ি-ঘর ভাঙচুর হবে, বা কে কখন দূর্বৃত্তের হাতে নিহত হবে, কেউ বলতে পারে না।
মানুষকে শান্তি দেওয়ার লক্ষ্যে রাজনীতি করছেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সামাজিক অস্থিরতা বাড়ছে। সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হচ্ছে। ফলশ্রতিতে অর্থনীতির বিপর্যস্ত হাল। দেশে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। সাধারণ মানুষ পরিবর্তন চায়। আমরাই দেশের মানুষকে দুর্নীতি ও দুঃশাসন থেকে মুক্তি দেবো। সেই লক্ষ্যেই আমাদের বর্তমান রাজনীতি।
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সভায় বক্তব্য রাখেন পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসরিন জাহান রত্না, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, সৈয়দ দিদার বখত, লিয়াকত হোসেন খোকা, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, শেরীফা কাদের, মাশরুর মওলা, জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া।
অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান মাহমুদ, অ্যাডভোকেট লিয়াকত আলী খান, ইঞ্জি. মোস্তফা মহসিন, ভাইস চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন আহমেদ মুক্তি, আহমেদ শফি রুবেল, হুমায়ুন খান, যুগ্ম মহাসচিব এ বি এম লিয়াকত হোসেন চাকলাদার, আলহাজ আব্দুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট জুলফিকার হোসেন, আবু সাঈদ স্বপন, সাংগঠনিক সম্পাদক নির্মল চন্দ্র দাশ, নুরুচ্ছফা সরকার, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মো. মশিউর রহমান বাবু, অ্যাডভোকেট খন্দকার মো. ফায়েকুজ্জামান ফিরোজ, যুগ্ম সম্পাদক বাহাদুর ইসলাম ইমতিয়াজ, শেখ মুহাম্মদ শান্ত, নুর-ই আলম মিয়া যাদু, আসমা সুলতানা, ডা. সেলিমা খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট খন্দকার হাবিবুর রহমান বাচ্চু, সরোয়ার হোসেন শাহীন, মো. মোজাম্মেল হক, মো. শরিফুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ আল মামুন, নজরুল ইসলাম হেমায়েত, সোলায়মান সামি, অ্যাডভোকেট আলিফ হোসেন, জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক ওমর ফারুক সুজন।