top ad image
top ad image
home iconarrow iconঘরের রাজনীতি

জাতীয় নাগরিক পার্টি

ভাই হারানোর পর আ. লীগকে ‘ঘৃণা’, বাড়িতে যান না নিভা

ভাই হারানোর পর আ. লীগকে ‘ঘৃণা’, বাড়িতে যান না নিভা
জাতীয় নাগরিক পার্টির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব নাহিদা সারওয়ার নিভা। ফাইল ছবি

গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিবের পদ পাওয়া নাহিদা সারওয়ার নিভাকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। তাঁর পরিবারের আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টতা টেনে একটা পক্ষ তাকে ঘায়েলের চেষ্টাও করছে।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরিবারের আওয়ামী লীগ ঘরানার বাইরে গিয়ে নিভার নিজস্ব রাজনৈতিক চিন্তায় বেড়ে ওঠার শুরুটা আরও বহু বছর আগে। পরিবারের সদস্যদের আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা নিয়ে ‘বিরক্ত’ নিভা চার বছরেরও বেশি সময় ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থাকা মায়ের বাসায়ও আসছেন না।

নিভারা দুই ভাই ও তিন বোন। ভাইদের মধ্যে বড়জন দিয়াজ ইরফান চৌধুরী ছাত্রলীগের সোহাগ-জাকির কমিটির সহসম্পাদক ছিলেন। ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকার বাসা থেকে দিয়াজের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। দিয়াজের লাশ উদ্ধারের তিন দিন পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন চৌধুরীসহ ১০ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন মা জাহেদা আমীন চৌধুরী।

মামলার অন্য আসামিরা সবাই সে সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। নিভার পরিবারের সদস্যরাও আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। নিভার বড় বোন জুবাঈদা ছরওয়ার নিপা উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ছোট ভাই মিরাজ ইরফান চৌধুরী ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে ঢাকসু নির্বাচনে লড়েছিলেন। পরিবারের অন্যরা আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের রাজনীতির করলেও নিভা ও তার মেজ বোন সাঈদা ছরওয়ার নিশা আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে কখনো যুক্ত ছিলেন না।

তবে নিভার মধ্যে রাজনীতি সচেতনতা আসতে শুরু করে ২০১৬ সালে বড় ভাইকে হারানোর পর থেকে। দিয়াজ ইরফান ছিলেন পুরো পরিবারের আশা ভরসার প্রতীক। তিনি পরিবারের হাল ধরবেন এমন আশায় দিন গুণছিলেন মা আর ভাই-বোনেরা। এর মধ্যেই তাঁকে নির্মমভাবে খুন হতে হলে অনেকটাই ভেঙে পড়েন সবাই। ছেলে হত্যার পর বিচার চেয়ে প্রশাসন ও নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন মা জাহেদা আমীন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দেখা করে শেখ হাসিনা পর্যন্ত পৌঁছার চেষ্টাও করেছিলেন তিনি। তবে পারেননি। বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনশন পালন করতে গিয়ে কয়েকবার অসুস্থও হয়ে পড়েন এই নারী। কিন্তু দিয়াজ হত্যার পর আওয়ামী লীগ আরও প্রায় ৮ বছর দেশ শাসন করলেও দিয়াজ হত্যার বিচার হয়নি।

নিভার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভাইয়ের মৃত্যুর পর মায়ের কষ্ট খুব কাছ থেকে দেখেছেন নিভা। ছাত্রলীগের রাজনীতি করার পরও তার ভাইকে সেই দলেরই একটা অংশ হত্যা করেছে, এই বিষয়টি ভীষণভাবে আহত করে নিভাকে। এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার পরও ভাই হত্যার বিচার না হওয়ায় আওয়ামী-লীগ ছাত্রলীগের রাজনীতি নিয়ে ঘৃণাও তৈরি হয় নিভার মনে।

এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলায় আহতদের হাসপাতালে নেওয়ার পথে ‘হেলমেটবাহিনীর’ তার ওপর নারকীয় হামলা চালায়। এতে গুরুতর আহত হন তিনি। এরপর থেকে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত থাকা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও যোগাযোগ কমিয়ে দিতে শুরু করেন নিভা।

২০২৪ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলে শুরু থেকেই আন্দোলনের যুক্ত হন নিভা। এই আন্দোলনের অন্যতম ফ্রন্ট ফাইটার হিসেবে তিনি ব্যাপক অবদান রাখেন বলে তার সহযোদ্ধাদের কথায় উঠে এসেছে। ৫ আগস্টের পর গড়ে ওঠা জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যও করা হয়েছিল নিভাকে। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার ঘোষিত জাতীয় নাগরিক পার্টির ‘টপ-টেনে’ জায়গা হয়েছে এই তরুণীর। তিনি জ্যেষ্ঠ যুক্ত সদস্য সচিবের দায়িত্ব পেয়েছেন।

নিভার বড় বোন জুবাঈদা ছরওয়ার নিপার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘নিভা সর্বশেষ বাড়িতে এসেছিল ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর আমার নানা মারা গেলে তাঁকে দেখতে এসেছিল। এরপর থেকে সে আর চট্টগ্রামের বাড়িতে আসেনি। তবে তাঁর আচরণে আমরা বুঝতে পারি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হাতে ভাই হারানোর বিষয়টি সে কোনোভাবেই মন থেকে মেনে নিতে পারেনি। আবার আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার পরও ভাই হত্যার বিচার না হওয়ায় সে খুব কষ্ট পেয়েছিল। ভাই হারানো এবং ভাই হত্যার বিচার না পাওয়ার পরও আমরা আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় সে পরিবারের সবাইকে ফেসবুক থেকে ‘আনফ্রেন্ডও’ করে দিয়েছে এবং যোগাযোগও বন্ধ করে দিয়েছে। সে আওয়ামী লীগের রাজনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল জানতাম তবে এতদূর এগিয়ে গেছে তা আজ জানলাম।’

পরিবারের আরেকজন সদস্য বলেন, যোগাযোগ না করায় একবার নিভার ঢাকার কর্মস্থলে গিয়েছিলেন মা ও ভগ্নিপতি। এতে বিরক্ত হন নিভা। পরে তার ছোট ভাই বাসার ঠিকানা জানায় সেই বাসাও বদলে ফেলেন নিভা। মূলত নিভা আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের একটা অংশের কুকীর্তি, শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের চিত্র নিজ চোখে দেখেছেন। এটি হয়তো পরিবারের বাইরে গিয়ে ভিন্ন রাজনৈতিক চিন্তা করতে তাঁকে উদ্ধুব্ধ করেছে।

নিভার মা জাহেদা আমীন চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ও (নিভা) ওর মতো রাজনৈতিক চিন্তায় বড় হতে চাচ্ছে। আমি তার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে চাইনি।

r1 ad
r1 ad
top ad image