জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা দেওয়ার তাগিদ
সীমিত ডিকার্বনাইজেশন সক্ষমতার বেশির ভাগ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশের সবুজ শিল্প বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এই সহায়তা দিতে তিনি উন্নত দেশগুলোকে তাগিদ দিয়েছেন।
ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও রেয়াতি ডিকার্বনাইজেশন অর্থায়নের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কাজে লাগিয়ে ক্লাইমেট ক্লাবের সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেসউইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়েছে, মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে কপ২৯ সম্মেলনে জার্মানি ও চিলি আয়োজিত উচ্চ পর্যায়ের জলবায়ু ক্লাব নেতাদের সভায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন আরও বেশি দ্রুত ও টেকসই উপায়ে কমানো এবং ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক গ্রিনহাউজ গ্যাসের নির্গমন ৪৩ শতাংশ কমাতে ও ২০৫০ সালের মধ্যে নেট-শূন্যে পৌঁছাতে বিশ্বের তাপমাত্রা প্রাক-শিল্পযুগের চেয়ে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তিতে সীমিত রাখতে ব্যাপক আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ প্রয়োজন।
বিশেষ করে উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোতে কম কার্বন নিঃসরণের উপযোগী প্রযুক্তি ব্যবহারের আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা। বলেন, ব্যাপক ভিত্তিতে ডিকার্বনাইজেশন প্রযুক্তির জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিনিয়োগ প্রয়োজন। অর্থায়নের সীমিত সুযোগ রয়েছে, এমন দেশ, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো দুর্বল উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এ ধরনের বিনিয়োগ শিল্পের জন্য একটি বাধা হতে পারে। তাই এসব দেশের অনুকূলে পর্যাপ্ত সহায়তা দিতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের মতো উদীয়মান উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতের শিল্পের জন্য রেয়াতি অর্থের সুযোগ লাভকে উৎসাহিত করে শিল্প ডিকার্বনাইজেশনের ক্ষেত্রে অর্থায়নের জন্য আর্থিক ব্যবস্থার বিকাশের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। বলেন, প্যারিস চুক্তির আর্টিকেল ৬.৮-এর অধীনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, সক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রযুক্তি হস্তান্তর নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
আমদানিতে সুষম কার্বন খরচ আরোপ করে একটি সুষম ক্ষেত্র তৈরি করতে কার্বন মূল্য নির্ধারণ বা সীমা সমন্বয় করের ওপর আন্তর্জাতিক চুক্তির ওপর জোর দিয়ে ড. ইউনূস বলেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে (এলডিসি) তাদের বিশেষ পরিস্থিতি ও উন্নয়ন চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে অগ্রাধিকারমূলক ব্যবস্থার প্রয়োজন হবে।
কার্বন নির্গমন বিশ্বব্যাপী স্বল্প-কার্বন প্রযুক্তিভিত্তিক উদ্ভাবনের জন্য প্রণোদনা কমিয়ে দিতে পারে, কারণ কিছু খাত টেকসই ব্যবস্থা অনুশীলনের তুলনায় ব্যয়কে অগ্রাধিকার দিতে পারে— এমনটি মনে করছেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, এসব ঝুঁকি প্রশমিত করার জন্য অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার সঙ্গে ডিকার্বনাইজেশন প্রচেষ্টার ভারসাম্য বজায় রাখতে কার্বন সীমা সমন্বয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মতো নীতিগুলো অপরিহার্য।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কার্বন নিঃসরণ প্রশমন নীতিমালা নেওয়া হচ্ছে খণ্ডিতভাবে। এসব নীতিমালা শিল্প কর্মকাণ্ডকে এমন একটি জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে যেখানে কার্বনসংক্রান্ত কোনো নীতি নেই বা থাকলেও কঠোরভাবে প্রয়োগ নেই। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে কার্বন নির্গমন বাড়বে এবং সার্বিকভাবে কার্বন নির্গমন কমানোর যে বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা, সেটিও বাধাগ্রস্ত হবে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, একটি ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবর্তনকে সমর্থন করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে ও উদীয়মান বাজারে নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি করতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন।