জাপায় ঐক্য বজায় রাখতে জিএম কাদেরের প্রতি রওশনের আহ্বান
জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সাবেক বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদ বলেছেন, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে যেসব নেতাকর্মী জাতীয় পার্টির রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট তাদের দল থেকে বহিষ্কার বা অব্যাহতি প্রদান খুবই দুঃখজনক।
সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তথাকথিত দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের ভঙ্গুর অজুহাত তুলে দলের নিবেদিত প্রাণ কর্মী ও সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অনতিবিলম্বে অব্যাহতিপ্রাপ্ত ও বহিষ্কৃত নেতা-কর্মীদের দলে ফিরিয়ে এনে স্ব স্ব পদে বহালের আহ্বান জানাচ্ছি।
রওশন বলেন, যে মুহুর্তে প্রয়োজন সকল স্তরের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মাধ্যমে নির্বাচনে বিপর্যয় এড়িয়ে দলকে শক্তিশালী করা, সেই মুহুর্তে নিবেদিত প্রাণ নেতা-কর্মীদের দল থেকে বের করে দিয়ে দলকে ন্যাপ মোজাফফর, ন্যাপ ভাসানী ও মুসলীম লীগে রূপান্তর করার সামিল। তাই অনতিবিলম্বে দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে পার্টির চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।
নাম উল্লেখ না করলেও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এবং এইচ এম এরশাদের ভাই জি এম কাদেরের প্রতি রওশন এরশাদ এই আহ্বান জানান।
জি এম কাদের রবিবার জানান, জাতীয় পার্টি সংসদে বিরোধী দল হতে যাচ্ছে। একইভাবে সোমবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও জানান জাতীয় পার্টি হচ্ছে বিরোধী দল। এরই মধ্যে রওশন এরশাদ এমন বিবৃতি দেন।
উল্লেখ্য, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছ থেকে পাওয়া আসন নিয়ে জাতীয় পার্টিতে বিরোধ এখন তুঙ্গে। আসন না পেয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সভা ডেকে ক্ষোভ ঝাড়ছেন সাবেক সংসদ সদস্যরা। প্রকাশ্যে দলের শীর্ষ নেতাদের সমালোচনা করায় একের পর এক দলের পদ-পদবি থেকে নেতাদের বহিষ্কার করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) পর্যন্ত জাতীয় পার্টির সব পদ থেকে অন্তত চার নেতাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তারা হলেন- দলের কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায়। দুজনই জাতীয় পার্টিতে রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
এ ছাড়া জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শফিকুল ইসলাম সেন্টু এবং সাবেক এমপি, পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহিয়া চৌধুরীকেও দলের সব পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এদিকে পদত্যাগ করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের একজন উপদেষ্টা, যদিও তিনি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়েছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ২৬টি আসন পাওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়েছিল জাতীয় পার্টি। নির্বাচনে ১১টি আসনে জয়ী হন দলটির প্রার্থীরা। বাকি আসনগুলোতে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে পরাজিত হন তারা। পরাজিত প্রার্থীদের ৯০ শতাংশই জামানত হারিয়েছেন। সমঝোতার বাইরে প্রায় আড়াই শ আসনের একটিতেও জিততে পারেননি জাপা প্রার্থীরা।
গত ১৪ জানুয়ারি ঢাকার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইউস্টিটিউশন মিলনায়তনে নির্বাচনে অংশ নেয়া জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থীদের এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম সেন্টু বলেন, ‘নির্বাচন উপলক্ষে সরকার জাতীয় পার্টিকে ভরপুর দিয়েছে। সরকার কোনো কার্পণ্য করেনি। টাকা-পয়সা দিয়েছে। আসনও বেশি ছাড় দিতে রাজি ছিলো সরকার। কিন্তু আপনি চেয়ারম্যান ও মহাসচিব তা আনতে ব্যর্থ হয়েছেন। মহাসচিবের ব্যর্থতার কারণে আজকে জাতীয় পার্টির এই অবস্থা।’