বিবিসি বাংলা
দেশে গত বছর আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পাকিস্তানের সঙ্গে ‘জট খোলা’ সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে বৃহস্পতিবার ঢাকায় বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিবরা। ‘ফরেন অফিস কনসালটেশন’ বা ‘এফওসি’ শীর্ষক এ বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মো. জসিম উদ্দিনের সাথে আলোচনায় অংশ নিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ইতোমধ্যেই ঢাকায় এসেছেন।
ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন প্রায় ১৫ বছর পর পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক হচ্ছে। তাই এবার সুনির্দিষ্ট এজেন্ডায় সীমাবদ্ধ না থেকে দুই দেশের মধ্যকার 'সব বিষয়ই' এ বৈঠকে উঠে আসবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই দেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক 'স্বাভাবিকীকরণের' আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে পররাষ্ট্র সচিবদের বৈঠকের মধ্য দিয়ে, যাতে গুরুত্ব পাবে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও উভয় দেশের জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যু।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ বৈঠকের পর চলতি মাসেই পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের ঢাকা সফরের সম্ভাবনা রয়েছে এবং এ বিষয়ে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখন কাজ করছে। ২০১২ সালের পর বাংলাদেশে এটি হবে কোনো পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম সফর।
পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে বর্তমানে ঢাকায় রয়েছেন পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. ইকবাল হুসেন খান। বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা বাসসকে তিনি বলেছেন, ইসলামাবাদ ঢাকার সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে বিশেষভাবে আগ্রহী।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ বুধবার ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন। তিনি আজ বৃহস্পতিবার এফওসি-র পরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
মি. হোসেন সম্প্রতি বলেছেন 'দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার' আলোচনাই হবে এসব বৈঠকে। প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালেই বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পারস্পারিক স্বীকৃতির ৫০ বছর পূর্ণ হয়েছে।
সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে সবশেষ বৈঠক হয়েছিলো শেখ হাসিনা সরকারের প্রথম মেয়াদে ২০১০ সালে। এরপর ধীরে ধীরে দুই দেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক ও যোগাযোগ তলানিতে গিয়ে ঠেকে। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধী বিচার ইস্যুকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কের চূড়ান্ত অবনতি ঘটে বাংলাদেশের।
২০১৩ সালে আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর উদ্বেগ জানিয়ে সংসদে প্রস্তাব পাস করেছিলো পাকিস্তান। এ ঘটনায় ঢাকায় পাকিস্তানি হাইকমিশনারকে ডেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলো বাংলাদেশ।
২০১৪ সালেও এই বিচার নিয়ে পাকিস্তানে সেখানকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এক বক্তব্য নিয়েও ঢাকায় তখনকার পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার আহমেদ হুসাইন দায়োকে তলব করে প্রতিবাদ করেছিলো সরকার।
পরে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতির পরও ঢাকায় পাকিস্তানের হাই কমিশনার সুজা আলমকে তলব করেছিলো বাংলাদেশ সরকার।
তবে ২০২০ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, যা নিয়ে সরগরম হয়েছিল রাজনৈতিক অঙ্গন। কিন্তু সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে তখন আর অগ্রগতি হয়নি।
এর আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে বড় ইস্যু ছিল একাত্তরের গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা, বাংলাদেশের সম্পদ ফিরিয়ে দেয়া এবং আটকেপড়া পাকিস্তানিদের ফিরিয়ে নেয়ার মতো বিষয়গুলো।
তবে এখন এসব বিষয়ের চেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে ব্যবসা বাণিজ্য ও যোগাযোগ বাড়ানোর মতো বিষয়গুলো নিয়ে। মো. ইকবাল হুসেন খান বাসসকে বলেছেন, ‘সারা বিশ্বে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই ধরনের বিষয় বিদ্যমান থাকে, তবে বর্তমান সম্পর্ক বা অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে বাধাগ্রস্ত করা উচিত নয়।’
পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক কূটনৈতিক ক্ষেত্রে দুই দেশের জন্য সবসময়ই বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে থাকে। কারণ দুই দেশের পররাষ্ট্র ক্ষেত্রের তারা প্রশাসনিকভাবে সর্বোচ্চ অধিকর্তা। এ কারণে এ ধরনের বৈঠকে সাধারণত দুই দেশের মধ্যকার সব বিষয়ই উঠে আসে।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে এ ধরনের বৈঠকে ১৫ বছর পর হচ্ছে বলে তাতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে বলে মনে করেন সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবির। ‘এখন দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য যেসব কাজ বা করণীয় সেগুলো আলোচনার মধ্য দিয়ে ঠিক করে একটা কমন গ্রাউন্ড তৈরি করাই হবে এবারের বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য,’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।
এর আগে জাতিসংঘ সম্মেলনের সময়ে সাইডলাইন বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ।
তারা দুজনই দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সংস্থা সার্ককে পুনরুজ্জীবনের মাধ্যমে আঞ্চলিক সহযোগিতার কথা বলেছিলেন তখন। যদিও এ অঞ্চলের আরেক প্রভাবশালী দেশ ভারত সার্কের বিষয়ে খুব একটা উৎসাহী নয় বলেই মনে করা হয়।
এখন বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর যে ভারতবিরোধী মনোভাব বিভিন্ন স্তরে কাজ করছে তাকে কাজে লাগাতে আঞ্চলিক রাজনীতিকে বাংলাদেশকে সাথে নিয়েই চলতে চাইছে পাকিস্তান।
আবার ভারতের সাথে 'দৃশ্যত শীতল' সম্পর্কের পাশাপাশি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের যে চেষ্টা এখন বাংলাদেশ সরকার করছে তার দিকেও দৃষ্টি আছে পাকিস্তানের নীতিনির্ধারক মহলের। কারণ চীনের সাথেও দেশটির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক সাহাব এনাম খান বলছেন, স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্বার্থে পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের ধারাবাহিক ও কার্যকর কূটনৈতিক সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ।
"আমার ধারণা দুই দেশের সম্পর্ক এখন নতুন মাত্রা পাবে। বিশেষ করে বাণিজ্য, কানেকটিভিটি ও সার্ক ইস্যুতে পাকিস্তানের ভূমিকা থাকা বাঞ্ছনীয়। পাকিস্তানের সাথে ইরান, মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সাথে যে কানেকটিভিটি আছে তা নিয়ে বাংলাদেশের আগ্রহ আছে," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।
অন্যদিকে পাকিস্তান গত অগাস্ট থেকেই বাংলাদেশে তুলাসহ কিছু পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধির সম্ভাবনার কথা বলছে। ইতিমধ্যেই দুই দেশের মধ্যে সরাসরি পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে।
আবার দেশটি যেহেতু আফগানিস্তান ও ইরান থেকে পণ্যের প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করে, তাই তারা মনে করে এসব দেশ থেকে পাকিস্তানের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য পণ্য আমদানির সুযোগ রয়েছে।
সাহাব এনাম খান বলছেন, সরকার দেশের অর্থনীতিতে যেসব দেশ জড়িত হতে পারে সেসব দেশকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে এবং সেই বিবেচনায় পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কে দুই দেশই লাভবান হবে বলে মনে করেন তিনি।
গত ১৫ বছর ‘শীতল’ কূটনৈতিক সম্পর্কের কারণে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসাবাণিজ্য, যোগাযোগ ও অন্য বিষয়ে স্বাভাবিক যে অগ্রগতি হওয়ার কথা সেটি হয়নি বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তাদের কারও কারও মতে, একযোগে কাজ করার ক্ষেত্র খোঁজাটাই হবে এবারের বৈঠকে দুই পররাষ্ট্র সচিবের মূল কাজ।
হুমায়ুন কবির বলছেন, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আঞ্চলিক দৃষ্টিভঙ্গি এখন সব জায়গাতেই গুরুত্বপূর্ণ এবং এ নিয়েই দুই দেশের কাজের সুযোগ আছে।
‘বাংলাদেশ ও পাকিস্তান একই অঞ্চলের এবং সার্কের সদস্য। যোগাযোগের ক্ষেত্রে কানেকটিভিটি থেকে দুদেশই লাভবান হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ ও সম্ভাবনা আছে যা দুই দেশের জন্যই লাভজনক হবে। পর্যটনও হতে পারে দুই দেশের নতুন ক্ষেত্র। দুই দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর উপায় খুঁজতে হবে আলোচনার টেবিলেই,’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।
এর আগে গত ডিসেম্বরে ঢাকায় বৈঠক করেছিলেন বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র সচিবরা। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি ও রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছিলো।
অন্যদিকে শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ।
এর এক মাসের মাথায় গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ অধিবেশনের সাইডলাইনে দু'জনের মধ্যে বৈঠক হয়, সেখান থেকেই দুই দেশের সম্পর্কের জট খোলার ইঙ্গিত আসে। ঢাকা ও ইসলামাবাদের উভয় দেশের কূটনীতিকরাও আরও সক্রিয় হয়ে ওঠেন।
এর পর নভেম্বরেই পাকিস্তানের করাচি থেকে কন্টেইনারবাহী একটি জাহাজ সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে আসলে তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এরপর থেকে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও বৃদ্ধির বিষয়টি জোরালোভাবেই উঠে আসে।
পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালে পাকিস্তান বাংলাদেশে প্রায় ৬৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল সুতা-কাপড় ও প্রস্তুত চামড়া ছিল প্রায় ৭৯ শতাংশ।
বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয়েছে, তার মূল্য ছিল ৬ কোটি ডলারের সামান্য বেশি। মূলত কাঁচা পাট, ওষুধ, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, চা ও তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছিলো বাংলাদেশ।
সম্পর্ক স্বাভাবিক গতিতে এগোতে পারলে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য আরও কয়েক গুণ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব, যাতে উভয় দেশই লাভবান হতে পারে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
দেশে গত বছর আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পাকিস্তানের সঙ্গে ‘জট খোলা’ সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে বৃহস্পতিবার ঢাকায় বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিবরা। ‘ফরেন অফিস কনসালটেশন’ বা ‘এফওসি’ শীর্ষক এ বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মো. জসিম উদ্দিনের সাথে আলোচনায় অংশ নিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ইতোমধ্যেই ঢাকায় এসেছেন।
ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন প্রায় ১৫ বছর পর পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক হচ্ছে। তাই এবার সুনির্দিষ্ট এজেন্ডায় সীমাবদ্ধ না থেকে দুই দেশের মধ্যকার 'সব বিষয়ই' এ বৈঠকে উঠে আসবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই দেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক 'স্বাভাবিকীকরণের' আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে পররাষ্ট্র সচিবদের বৈঠকের মধ্য দিয়ে, যাতে গুরুত্ব পাবে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও উভয় দেশের জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যু।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ বৈঠকের পর চলতি মাসেই পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের ঢাকা সফরের সম্ভাবনা রয়েছে এবং এ বিষয়ে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখন কাজ করছে। ২০১২ সালের পর বাংলাদেশে এটি হবে কোনো পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম সফর।
পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে বর্তমানে ঢাকায় রয়েছেন পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. ইকবাল হুসেন খান। বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা বাসসকে তিনি বলেছেন, ইসলামাবাদ ঢাকার সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে বিশেষভাবে আগ্রহী।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ বুধবার ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন। তিনি আজ বৃহস্পতিবার এফওসি-র পরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
মি. হোসেন সম্প্রতি বলেছেন 'দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার' আলোচনাই হবে এসব বৈঠকে। প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালেই বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পারস্পারিক স্বীকৃতির ৫০ বছর পূর্ণ হয়েছে।
সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে সবশেষ বৈঠক হয়েছিলো শেখ হাসিনা সরকারের প্রথম মেয়াদে ২০১০ সালে। এরপর ধীরে ধীরে দুই দেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক ও যোগাযোগ তলানিতে গিয়ে ঠেকে। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধী বিচার ইস্যুকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কের চূড়ান্ত অবনতি ঘটে বাংলাদেশের।
২০১৩ সালে আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর উদ্বেগ জানিয়ে সংসদে প্রস্তাব পাস করেছিলো পাকিস্তান। এ ঘটনায় ঢাকায় পাকিস্তানি হাইকমিশনারকে ডেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলো বাংলাদেশ।
২০১৪ সালেও এই বিচার নিয়ে পাকিস্তানে সেখানকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এক বক্তব্য নিয়েও ঢাকায় তখনকার পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার আহমেদ হুসাইন দায়োকে তলব করে প্রতিবাদ করেছিলো সরকার।
পরে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতির পরও ঢাকায় পাকিস্তানের হাই কমিশনার সুজা আলমকে তলব করেছিলো বাংলাদেশ সরকার।
তবে ২০২০ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, যা নিয়ে সরগরম হয়েছিল রাজনৈতিক অঙ্গন। কিন্তু সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে তখন আর অগ্রগতি হয়নি।
এর আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে বড় ইস্যু ছিল একাত্তরের গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা, বাংলাদেশের সম্পদ ফিরিয়ে দেয়া এবং আটকেপড়া পাকিস্তানিদের ফিরিয়ে নেয়ার মতো বিষয়গুলো।
তবে এখন এসব বিষয়ের চেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে ব্যবসা বাণিজ্য ও যোগাযোগ বাড়ানোর মতো বিষয়গুলো নিয়ে। মো. ইকবাল হুসেন খান বাসসকে বলেছেন, ‘সারা বিশ্বে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই ধরনের বিষয় বিদ্যমান থাকে, তবে বর্তমান সম্পর্ক বা অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে বাধাগ্রস্ত করা উচিত নয়।’
পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক কূটনৈতিক ক্ষেত্রে দুই দেশের জন্য সবসময়ই বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে থাকে। কারণ দুই দেশের পররাষ্ট্র ক্ষেত্রের তারা প্রশাসনিকভাবে সর্বোচ্চ অধিকর্তা। এ কারণে এ ধরনের বৈঠকে সাধারণত দুই দেশের মধ্যকার সব বিষয়ই উঠে আসে।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে এ ধরনের বৈঠকে ১৫ বছর পর হচ্ছে বলে তাতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে বলে মনে করেন সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবির। ‘এখন দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য যেসব কাজ বা করণীয় সেগুলো আলোচনার মধ্য দিয়ে ঠিক করে একটা কমন গ্রাউন্ড তৈরি করাই হবে এবারের বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য,’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।
এর আগে জাতিসংঘ সম্মেলনের সময়ে সাইডলাইন বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ।
তারা দুজনই দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সংস্থা সার্ককে পুনরুজ্জীবনের মাধ্যমে আঞ্চলিক সহযোগিতার কথা বলেছিলেন তখন। যদিও এ অঞ্চলের আরেক প্রভাবশালী দেশ ভারত সার্কের বিষয়ে খুব একটা উৎসাহী নয় বলেই মনে করা হয়।
এখন বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর যে ভারতবিরোধী মনোভাব বিভিন্ন স্তরে কাজ করছে তাকে কাজে লাগাতে আঞ্চলিক রাজনীতিকে বাংলাদেশকে সাথে নিয়েই চলতে চাইছে পাকিস্তান।
আবার ভারতের সাথে 'দৃশ্যত শীতল' সম্পর্কের পাশাপাশি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের যে চেষ্টা এখন বাংলাদেশ সরকার করছে তার দিকেও দৃষ্টি আছে পাকিস্তানের নীতিনির্ধারক মহলের। কারণ চীনের সাথেও দেশটির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক সাহাব এনাম খান বলছেন, স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্বার্থে পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের ধারাবাহিক ও কার্যকর কূটনৈতিক সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ।
"আমার ধারণা দুই দেশের সম্পর্ক এখন নতুন মাত্রা পাবে। বিশেষ করে বাণিজ্য, কানেকটিভিটি ও সার্ক ইস্যুতে পাকিস্তানের ভূমিকা থাকা বাঞ্ছনীয়। পাকিস্তানের সাথে ইরান, মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সাথে যে কানেকটিভিটি আছে তা নিয়ে বাংলাদেশের আগ্রহ আছে," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।
অন্যদিকে পাকিস্তান গত অগাস্ট থেকেই বাংলাদেশে তুলাসহ কিছু পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধির সম্ভাবনার কথা বলছে। ইতিমধ্যেই দুই দেশের মধ্যে সরাসরি পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে।
আবার দেশটি যেহেতু আফগানিস্তান ও ইরান থেকে পণ্যের প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করে, তাই তারা মনে করে এসব দেশ থেকে পাকিস্তানের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য পণ্য আমদানির সুযোগ রয়েছে।
সাহাব এনাম খান বলছেন, সরকার দেশের অর্থনীতিতে যেসব দেশ জড়িত হতে পারে সেসব দেশকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে এবং সেই বিবেচনায় পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কে দুই দেশই লাভবান হবে বলে মনে করেন তিনি।
গত ১৫ বছর ‘শীতল’ কূটনৈতিক সম্পর্কের কারণে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসাবাণিজ্য, যোগাযোগ ও অন্য বিষয়ে স্বাভাবিক যে অগ্রগতি হওয়ার কথা সেটি হয়নি বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তাদের কারও কারও মতে, একযোগে কাজ করার ক্ষেত্র খোঁজাটাই হবে এবারের বৈঠকে দুই পররাষ্ট্র সচিবের মূল কাজ।
হুমায়ুন কবির বলছেন, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আঞ্চলিক দৃষ্টিভঙ্গি এখন সব জায়গাতেই গুরুত্বপূর্ণ এবং এ নিয়েই দুই দেশের কাজের সুযোগ আছে।
‘বাংলাদেশ ও পাকিস্তান একই অঞ্চলের এবং সার্কের সদস্য। যোগাযোগের ক্ষেত্রে কানেকটিভিটি থেকে দুদেশই লাভবান হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ ও সম্ভাবনা আছে যা দুই দেশের জন্যই লাভজনক হবে। পর্যটনও হতে পারে দুই দেশের নতুন ক্ষেত্র। দুই দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর উপায় খুঁজতে হবে আলোচনার টেবিলেই,’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।
এর আগে গত ডিসেম্বরে ঢাকায় বৈঠক করেছিলেন বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র সচিবরা। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি ও রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছিলো।
অন্যদিকে শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ।
এর এক মাসের মাথায় গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ অধিবেশনের সাইডলাইনে দু'জনের মধ্যে বৈঠক হয়, সেখান থেকেই দুই দেশের সম্পর্কের জট খোলার ইঙ্গিত আসে। ঢাকা ও ইসলামাবাদের উভয় দেশের কূটনীতিকরাও আরও সক্রিয় হয়ে ওঠেন।
এর পর নভেম্বরেই পাকিস্তানের করাচি থেকে কন্টেইনারবাহী একটি জাহাজ সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে আসলে তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এরপর থেকে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও বৃদ্ধির বিষয়টি জোরালোভাবেই উঠে আসে।
পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালে পাকিস্তান বাংলাদেশে প্রায় ৬৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল সুতা-কাপড় ও প্রস্তুত চামড়া ছিল প্রায় ৭৯ শতাংশ।
বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয়েছে, তার মূল্য ছিল ৬ কোটি ডলারের সামান্য বেশি। মূলত কাঁচা পাট, ওষুধ, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, চা ও তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছিলো বাংলাদেশ।
সম্পর্ক স্বাভাবিক গতিতে এগোতে পারলে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য আরও কয়েক গুণ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব, যাতে উভয় দেশই লাভবান হতে পারে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
নির্বাচন বিলম্ব হলে ষড়যন্ত্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
১০ ঘণ্টা আগেজাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের রংপুর শহরের ‘দ্য স্কাই ভিউ’ বাসভবনে হামলার ঘটনায় সেনাবাহিনী সক্রিয়ভাবে তদন্তে নেমেছে। শনিবার মধ্যরাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং বিএনপির নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদও করেছে সেনাবাহিনী।
১১ ঘণ্টা আগেরাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে এক যুগ আগে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল ঘোষণা করেছেন আপিল বিভাগ। তবে দলটির প্রতীক দাঁড়িপাল্লা থাকবে কি না সে বিষয়ে কোনো আদেশ দেননি দেশের সর্ব্বোচ আদালত। জামায়াতের প্রতীকের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওপর ছেড়ে দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
১৩ ঘণ্টা আগেসড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা ফাওজুল কবির বলেন, আপনাদের (কর্মচারী) যে অবস্থান তা হলো এটি বাতিল করে দিতে হবে। এটা একটা অবস্থান। কিন্তু আপনারা একটা জিনিস মনে রাখবেন- আর একটা বিষয় হতে পারে এই অধ্যাদেশটি যে অপপ্রয়োগ হওয়ার সম্ভাবনা আছে, সেগুলোকে অ্যাড্রেস করা যায় কি না। সেটাও আপনারা একটু মাথায় রাখবেন।
১৩ ঘণ্টা আগে