৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে দুটি চিঠি দেবে বাংলাদেশ\n
প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে রোববারের (৬ এপ্রিল) বৈঠকটিতে অর্থ উপদেষ্টা, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, বাণিজ্য উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেনটেটিভ, বিডার নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকেও কয়েকজন প্রতিনিধি বৈঠকে অংশ নেন।
বৈঠক থেকে চিঠি দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রকে সেই চিঠি দেওয়ার উদ্দেশ্য কী? সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিরা জানাচ্ছেন, বাড়তি শুল্কহারের বিষয়টি মার্কিন সরকার যেন পুর্নবিবেচনা করে, সে বিষয়ে আলোচনা শুরুর জন্যই চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কেবল শুল্কহার পর্যালোচনা নয়, দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য আরও কীভাবে বাড়ানো যেতে পারে, চিঠিতে সে বিষয়েও আলোকপাত করা হবে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেবল পণ্য নয়, সেবাও আমদানি করার বিষয়ে জোর দেওয়া হবে। রোববারের বৈঠকে উপস্থিত ব্যবসায়ীরাও এ বিষয়ে আলোচনা শুরুর তাগিদ দিয়েছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণা করা শুল্কহার নিয়ে রোববার অনুষ্ঠিত জরুরি বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন উপদেষ্টারা। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর
ওই বৈঠক শেষে জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বিবিসি বাংলাকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বলেছে যে এটি নিয়ে সমঝোতা হতে পারে (নেগোশিয়েবল)। সেই জায়গা থেকেই আমরা (চিঠি) দিচ্ছি, যেন আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে পারি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন এই শুল্কহার ঘোষণা করেন গত বুধবার। তিনি জানান, যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্কহার আরোপ করে রেখেছিল, তাদের ওপর ‘রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ’ বা ‘পালটা শুল্ক’ ঘোষণা করেছেন তিনি। তবে তিনি ‘দয়া দেখিয়ে’ পালটা শুল্ক আরোপ করেছেন অর্ধেক হারে। আগামী ৯ এপ্রিল থেকে নতুন এই শুল্কহার কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য আরও বলেছেন, শুল্কহার নিয়ে আলোচনার পথ উন্মুক্ত। দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশ এ বিষয়ে আলোচনার জন্য তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। সেই তালিকাতেই যুক্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশও।
যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্কহারের বিষয়ে আলোচনা করতে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। বৈঠকে আরও তিনজন উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন। ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতিতে এ বৈঠক থেকেই যুক্তরাষ্ট্রকে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।
চিঠিতে শুল্ক পুর্নবিবেচনার পাশাপাশি দুদেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানির হার বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির বিবিসি বাংলাকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মূল উদ্বেগটা (কনসার্ন) হলো— আমরা তাদের কাছ থেকে কম আমদানি করি, রপ্তানি বেশি করি। সেই জায়গা থেকেই এবার আমদানি বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে।
ইউএসটিআরের হিসেবে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় এক হাজার ৬০ কোটি ডলারের বাণিজ্য হয়। এ বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২২০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানির বিপরীতে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে প্রায় ৮৪০ কোটি ডলারের পণ্য। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের আমদানি করা পণ্যের পরিমাণ রপ্তানি পণ্যের প্রায় এক-চতুর্থাংশ।
ট্রাম্পের বক্তব্যেও প্রাধান্য পেয়েছে, অন্য দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পণ্য আমদানি করে না। এ কারণেই বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য বা সেবা আমদানির সুযোগ খুঁজছে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করছি। আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। আমেরিকা থেকে কিছু আমদানি করতে হলে আমরা করবে। এতে বাণিজ্য ঘাটতি কমবে।
দুদেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেগুলো দূর করার চেষ্টা করা হবে বলেও জানান অর্থ উপদেষ্টা। বলেন, আমেরিকার ইকনোমি বেটার ইকনোমি। তাদের সঙ্গে আমাদের ট্যারিফ-নন ট্যারিফ প্রতিবন্ধকতা (ব্যারিয়ার) যেগুলো আছে, সেগুলো দূর করা হবে। এ জন্য আলোচনা করা হবে, যেন কোনো অসুবিধা না হয়।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদও একই কথা জানিয়ে বলেন, ট্রাম্পের এই শুল্ক পরিকল্পনায় গোটা বিশ্বের অর্থনীতিই বড় ধরনের নাড়াচাড়া খাবে। এটি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, আমরা কেউ জানি না। আমরা চেষ্টা করব যেন আমাদের তৈরি পোশাক শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, যেন আমরা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারি।
বাড়তি শুল্কহার পুর্নমূল্যায়ন ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্তে স্বস্তি জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। সরকার এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ায় সন্তোষও জানিয়েছেন তারা।
ব্যবসায়ী নেতা সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, সরকারের যে পরিকল্পনা, তাতে আমরা কিছুটা স্বস্তিতে আছি। আমাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা যদি না কমে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড যদি থাকে, তাহলে আমরা এটা ওভারকাম করতে পারব।
স্কয়ার টেক্সটাইলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার পর থেকেই আমরা অনেক চিন্তিত ছিলাম। এ বৈঠকের আলোচনা থেকে আমরা একটা নির্দেশনা পেয়েছি।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়াতে সম্ভাব্য পণ্য কী কী হতে পারে, সেদিকে নজর দেওয়ার কথা বলেছেন ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক খাতের বাইরেও অন্যান্য পণ্যের রপ্তানি বাড়ানোর দিকে মনোযোগী হতে বলেছেন তারা।