top ad image
top ad image
home iconarrow iconঅর্থের রাজনীতি

চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিক

অধিকাংশ সিরামিক কোম্পানির মুনাফায় ভাটা

অধিকাংশ সিরামিক কোম্পানির মুনাফায় ভাটা

চলতি ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাস (জানুয়ারি-মার্চ) ব্যবসায়িকভাবে ভালো করতে পারেনি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিরামিক খাতের অধিকাংশ কোম্পানি। এসময়ে বেশিরভাগ কোম্পানির আয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি নিট মুনাফায় পতন হয়েছে। মূলত কোম্পানিগুলোর বিক্রি কমে যাওয়া ও বিভিন্ন ধরনের ব্যয় বৃদ্ধির কারণে মুনাফায় ভাটা পড়েছে। এমনকি লোকসানে থাকা একটি কোম্পানির নিট লোকসানের বোঝা এসময়ে আরো বড় হয়েছে। কোম্পানিগুলোর সর্বশেষ প্রকাশিত প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

খাত সশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ব বাজারে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, জাহাজীকরণ ব্যয় বৃদ্ধি, ডলার বাজারে অস্থিরতা এবং গ্যাসের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এ খাতের কোম্পানিগুলোর জন্য বাধা স্বরূপ। তাছাড়া দেশের বাজারে চাহিদার তুলনায় এ খাতে উৎপাদন বেশি হওয়ায় বেশিরভাগ কোম্পানির বিক্রি ধারাবাহিকভাবে কমছে। এ বিক্রি হ্রাস ও ব্যয় বৃদ্ধির কারণে কোম্পানিগুলোর মুনাফায় ভাটা পড়েছে।

দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিরামিক খাতের কোম্পানির সংখ্যা ৫টি। সেগুলো হলো ফু-ওয়াং সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, মুন্নু সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, আরএকে সিরামিকস (বাংলাদেশ) লিমিটেড, শাইনপুকুর সিরামিকস লিমিটেড ও স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এর মধ্যে তালিকাভুক্ত একমাত্র বহুজাতিক কোম্পানি আরএকে সিরামিকস বাংলাদেশের হিসাব বছর গণনা করা হয় জানুয়ারি-ডিসেম্বর সময়ে। সে হিসেবে জানুয়ারি-মার্চ সময় এ কোম্পানিটির প্রথম প্রান্তিক। আর স্থানীয় কোম্পানিগুলো অর্থবছরের সঙ্গে মিল রেখে হিসাব বছর গণনা করে। এ কোম্পানিগুলোর জন্য জানুয়ারি-মার্চ সময় তৃতীয় প্রান্তিক।

চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ফু-ওয়াং সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজের বিক্রি হয়েছে ২৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ২৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির বিক্রি বেড়েছে ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা বা ২৪ দশমিক ৭২ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৮৩ লাখ টাকা। এর আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা হয়েছিল ১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির নিট মুনাফা কমেছে ৯৫ লাখ টাকা। শতকরা হিসেবে যা কমেছে ৫৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

সর্বশেষ তৃতীয় প্রান্তিকে ফু-ওয়াং সিরামিকের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৬ পয়সা। এর আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা হয়েছিল ১৩ পয়সা। গত ৩১ মার্চ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১১ টাকা ৯৭ পয়সায়।

মুন্নু সিরামিকের চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে বিক্রি বাবদ আয় হয়েছে ৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যেখানে আয় হয়েছিল ১৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির আয় কমেছে ১৪ কোটি ২১ লাখ টাকা। শতকরা হিসেবে যা কমেছে ৭৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৭ লাখ টাকা। এর আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা হয়েছিল ৬৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির নিট মুনাফা কমেছে ৮৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ। টাকার অংকে যা কমেছে ৫৮ লাখ।

তৃতীয় প্রান্তিকে মুন্নু সিরামিকের ইপিএস হয়েছে ২ পয়সা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা হয়েছিল ১৭ পয়সা। গত ৩১ মার্চ শেষে কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ৮০ টাকা ৪৯ পয়সায়।

চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে এ খাতের একমাত্র বহুজাতিক কোম্পানি আরএকে সিরামিকস বাংলাদেশের বিক্রি হয়েছে ১৭৭ কোটি ৭ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা হয়েছিল ২০০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে কোম্পানির বিক্রি কমেছে ২৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বা ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির নিট মুনাফা হয়েছে ৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা হয়েছিল ১৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। সে হিসেবে বছরের ব্যবধানে কোম্পানির মুনাফা কমেছে ১১ কোটি ৩ লাখ টাকা। শতকরা হিসেবে যা কমেছে ৭০ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানির ইপিএস হয়েছে ১১ পয়সা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা হয়েছিল ৩৭ পয়সা। গত ৩১ মার্চ শেষে কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ১৭ টাকা ৪০ পয়সায়।

দেশীয় কোম্পানি শাইনপুকুর সিরামিকসের চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে বিক্রি বাবদ আয় হয়েছে ৫১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা হয়েছিল ৫৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। সে হিসেবে বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির আয় কমেছে ২ কোটি ২৯ লাখ টাকা বা ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির নিট মুনাফা হয়েছে ১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা হয়েছিল ৮৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে কোম্পানির নিট মুনাফা বেড়েছে ৫৩ লাখ টাকা। শতকরা হিসেবে যা বেড়েছে ৫৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে এ একটি মাত্র কোম্পানির মুনাফা আলোচ্য সময়ে বেড়েছে। মূলত কোম্পানির উৎপাদন ব্যয় কমার পাশাপাশি বিক্রি বাবদ ব্যয়, মার্কেটিং ও ডিস্ট্রিবিউশন ব্যয় কম হওয়া এবং অন্যান্য আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় আলোচ্য সময়ে ভালো মুনাফা অর্জন সম্ভব হয়েছে।

সর্বশেষ প্রান্তিকে কোম্পানির ইপিএস হয়েছে ১০ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যা হয়েছিল ৬ পয়সা। গত ৩১ মার্চ শেষে কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ৩১ টাকা ১৮ পয়সায়।

চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজের কর পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছে ২ কোটি ১১ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে এ লোকসান হয়েছিল ১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। সে হিসেবে বছরের ব্যবধানে কোম্পানির নিট লোকসান বেড়েছে ৭৯ লাখ টাকা। শতকরা হিসেবে এ লোকসান বেড়েছে ৬০ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

এ বিষয়ে স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কোভিড-১৯ এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর বিশ্ব বাজারে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, জাহাজীকরণ ব্যয় বৃদ্ধি, ডলার বাজারে অস্থিরতা এবং গ্যাসের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি কারণে তাদের ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। এছাড়া তাদের কারখানা সাময়িক বন্ধ ছিলো। এতে চাহিদা অনুসারে পণ্যের বিক্রি সম্ভব হয়নি। এসব কারণে আলোচ্য সময়ে তাদের লোকসান আরো বেড়ে গেছে।

তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৩ টাকা ২৬ পয়সা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যেখানে লোকসান হয়েছিল ২ টাকা ৩ পয়সা। গত ৩১ মার্চ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি দাঁয় দাঁড়িয়েছে ৩০ টাকা ১৩ পয়সা।

r1 ad
r1 ad