মুনাফা কমেছে অধিকাংশ সাধারণ বীমা কোম্পানির

সর্বশেষ ২০২৩ হিসাব বছরে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ সাধারণ বীমা কোম্পানি ব্যবসায়ীকভাবে খারাপ করেছে। এ সময় বেশিরভাগ কোম্পানির কর-পরবর্তী নিট মুনাফায় ভাটা পড়েছে। মূলত প্রিমিয়াম আয় কম হওয়ায় এসব কোম্পানির নিট মুনাফাও কমেছে। তবে আলোচ্য হিসাব বছরেও অবলিখন মুনাফায় ভর করে কিছু কোম্পানি ভালো করেছে। কোম্পানিগুলোর সর্বশেষ হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
দেশে ৮২টি বীমা কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে ৪৬টি সাধারণ ও ৩৬টি জীবন বীমা কোম্পানি। এসব কোম্পানির মধ্যে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে ৫৮টি কোম্পানি। যার ৪৩টি সাধারণ ও ১৫টি জীবন বীমা কোম্পানি। তালিকাভুক্ত ৪৩ বীমা কোম্পানির মধ্যে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩৩টি কোম্পানি তাদের সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২৩ হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে ১৮টি কোম্পানির মুনাফা সর্বশেষ হিসাব বছরে কমেছে। বিপরীতে বেড়েছে ১৫ কোম্পানির মুনাফা।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলো প্রধানত অগ্নি ও সহযোগী বীমা, সামুদ্রিক কার্গো বীমা এবং মোটর গাড়ির বীমা থেকে আয় করে থাকে। এর মধ্যে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) দ্বারা মোটর গাড়ির বীমা বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে এ খাত থেকে কোম্পানিগুলোর আয় আসছে না। আর সামুদ্রিক কার্গো বীমা অনেকটা ডলারের দামের ওপর নির্ভর করে। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে ডলার সংকটের কারণে কোম্পানিগুলো এ খাত থেকেও ভালো ব্যবসা করতে পারেনি। যার ফলে অধিকাংশ সাধারণ বীমা কোম্পানি ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাবিত পড়েছে। তবে এ সময়েও বেশ কিছু কোম্পানি মূল ব্যবসার বাহিরে ভালো অবলিখন মুনাফা করে তাদের নিট মুনাফায় প্রবৃদ্ধি আনতে সক্ষম হয়েছে।
মুনাফা হারানো শীর্ষস্থানীয় পাঁচ কোম্পানি
সাধারণ বীমা খাতের বড় কোম্পানিগুলোর মধ্যে গ্রীণ ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২৩ হিসাব বছরে ৬১ কোটি ২১ লাখ টাকা কর পরবর্তী নিট মুনাফা করেছে। আগের হিসাব বছরে যেখানে এ মুনাফা হয়েছিল ৭৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা। সে হিসেবে বছরের ব্যবধানে কোম্পানির নিট মুনাফা কমেছে ১১ কোটি ৯২ লাখ টাকা বা ১৬ দশমিক ৩০ শতাংশ। ১৯৮৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত গ্রীণ ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের মোট শেয়ার সংখ্যা ১০ কোটি ১ লাখ ৮৮ হাজার ১৯৪টি। এর মধ্যে ৩০ দশমিক ৫১ শতাংশ শেয়ার উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে রয়েছে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ২০ দশমিক ৮০ শতাংশ, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে বাকি ৪০ দশমিক ০৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স ২০২৩ হিসাব বছরে নিট মুনাফা করেছে ৪৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরে যেখানে মুনাফা হয়েছিল ৫১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। অথাৎ বছরের ব্যবধানে কোম্পানির নিট মুনাফা কমেছে ৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা বা সাড়ে ১১ শতাংশ। ২০০১ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের মোট শেয়ার সংখ্যা ৮ কোটি ৮৯ লাখ ১০ হাজার ৩৮২টি। এর মধ্যে ৪৫ দশমিক ৬২ শতাংশ শেয়ার উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে রয়েছে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে বাকি ২৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
২০২৩ হিসাব বছরে ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের নিট মুনাফা হয়েছে ৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরে যেখানে মুনাফা হয়েছিল ১৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। সে হিসেবে বছরের ব্যবধানে এ কোম্পানিটির নিট মুনাফা কমেছে ৪ কোটি ১১ লাখ টাকা বা ৩০ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। ১৯৯৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের মোট শেয়ার সংখ্যা ৮ কোটি ৩৮ লাখ ৮০ হাজার ৫৮১টি। এর মধ্যে ৪১ দশমিক ১১ শতাংশ শেয়ার উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে রয়েছে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৩ দশমিক ১৭ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে বাকি ৩৫ দশমিক ৭২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স সর্বশেষ সমাপ্ত হিসাব বছরে নিট মুনাফা করেছে ৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরে যেখানে মুনাফা হয়েছিল ১৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে কোম্পানির নিট মুনাফা কমেছে ৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা বা ৪২ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ১৯৯৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের মোট শেয়ার সংখ্যা ৪ কোটি ৩১ লাখ ১০ হাজার ১৪৪টি। এর মধ্যে ৪৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ শেয়ার উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে রয়েছে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৬ দশমিক ২৮ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে বাকি ২৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
সর্বশেষ সমাপ্ত হিসাব বছরে নিটল ইন্স্যুরেন্সের নিট মুনাফা হয়েছে ৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরে যা হয় ৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। সে হিসেবে বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির নিট মুনাফা কমেছে ২ কোটি ৬১ লাখ টাকা বা ৩০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। ২০০৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নিটল ইন্স্যুরেন্সের মোট শেয়ার সংখ্যা ৪ কোটি ২ লাখ ৭ হাজার ৬৩৯টি। এর মধ্যে ৩৫ শতাংশ শেয়ার উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে রয়েছে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে বাকি ৩৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।