তারল্যসংকটে থাকা ৯ ব্যাংকের গ্রাহকদের ভোগান্তি\n
কোন ধরনের প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক প্রয়োজন হতে পারে সে প্রশ্নে বেক্সিমকোর উদাহরণ দিয়ে মি. হোসেন বলেন, “বেক্সিমকো এতো ডিফল্ট করেছে যে বেক্সিমকো যদি একশ টাকা আর্ন করে ব্যাংক আর ওটা দিতে চায় না। বলে ওর কাছে আমি ১০ হাজার টাকা পাব। ব্যাংকের অবস্থা তো খারাপ। ব্যাংকের অবস্থা তো লোন নিতে নিতে খারাপ।”
ফলে সংকট পরিস্থিতি মোকাবেলা করতেই এই উপায় ভেবেছেন উল্লেখ করে বলেন, “তো সামথিং হ্যাজ টু কাম আপ। ওই কথাই আমি বলে রাখছি। এটা এখন দেখবো যে কীভাবে করা যায়। প্রয়োজনে আইন যদি না থাকে তাহলে অর্ডিন্যান্স তৈরি করবো।”
প্রশাসক নিয়োগের বিষয়ে কারখানা মালিকরা কী ভাবছেন?
গত পাঁচই অগাস্ট দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, চট্টগ্রাম চেম্বার, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) পর্ষদ ভেঙে প্রশাসক নিয়োগ দেয় সরকার।
সেই ধারাবাহিকতায় দেশের শীর্ষ রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-তেও প্রশাসক বসায় সরকার। পর্ষদ ভেঙ্গে দিয়ে গত ২০শে অক্টোবর রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেনকে প্রশাসক হিসেবে বিজিএমইএ-তে নিয়োগ দেয়া হয়।
এই সংগঠনগুলোতে মূলত শেখ হাসিনার সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী, এমনকি আওয়ামী লীগের পদ-ধারী ব্যক্তিও নেতৃত্বে ছিলেন। কর্ণফুলী ইপিজেডের ‘ডেনিম এক্সপার্ট’ গার্মেন্টসের মালিক ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন রুবেলের মতে কোন প্রেক্ষাপটে সরকার প্রশাসক নিয়োগের কথা ভাবছে সেটা বিবেচ্য বিষয়।
উদাহরণ তুলে ধরে মি. রুবেল বলেন, “মনে করেন একটা গার্মেন্টসে মালিক নিরুদ্দেশ বা ঋণ দেখে চলে গেছে দেশ থেকে এমতাবস্থায় ইন্ডাস্ট্রি তো বন্ধ করা যাবে না। ইন্ডাস্ট্রি চালাইতে হবে। কারণ ওই গার্মেন্টসের সাথে এতোগুলা শ্রমিকের জীবন জড়িত এবং আরও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এবং ইন্ডাস্ট্রির সুনাম জড়িত।”
“ডেফিনিটলি এ ধরনের ক্ষেত্রে সরকার যদি চিন্তা করে এটা বন্ধ না করে সরকারি প্রশাসক দিয়ে বা ফাইন্যান্স করে সরকার চালাবে সেটা ভালো উদ্যোগ, সেটা হতেই পারে,” বলেন এই পোশাক শিল্প মালিক।
“কিন্তু নরমাল প্রেক্ষাপটে একটা ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে যেখানে মালিক আছে সেখানে এভাবে দিয়ে কতটুকু পজিটিভ রেজাল্ট আসবে সেখানে মালিক হিসেবে আমি সন্দেহ পোষণ করি,” যোগ করেন মি. রুবেল।
ব্যক্তি মালিকানাধীন এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে মালিকের ইচ্ছাকৃত কোন ভুল না থাকলে সংকট থেকে উদ্ধারে সরকার মনিটরিং করতে পারে বলে মন্তব্য করেন মি. রুবেল।
তিনি বলেন, “মালিক আছে কিন্তু কোনো না কোনো কারণে সে বিপদে পড়েছে, ইচ্ছাকৃতভাবে না করলে সেক্ষেত্রে এটাকে সাধুবাদ জানানোর কোনো কারণ দেখছি না। এটাকে সরকার সাপোর্ট দিতে পারে। নিবিড় তত্ত্বাবধানে রেখে কমিটি করে বলবে তারা দেখবে। প্রয়োজনে লোন দিয়ে হোক যেভাবে হোক সাপোর্ট দিয়ে সংকট থেকে বের করে নিয়ে আসুক।”
‘প্রশাসক নিয়োগ সাময়িক সমাধান’
গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান জানান বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি সাময়িক সমাধান।
মি. খান বলেন, “ফরেনসিকের ব্যাপার আছে। কেস বাই কেস ডিসিশন হবে। শেয়ার হোল্ডিং সিস্টেম থাকলে শেয়ার হোল্ডাররা সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। রিস্ট্রাকচার করতে হলে সম্পদ যেটুকু আছে সেটার ভিতরে দিয়েই করতে হবে।”
তবে সরকার এ ধরনের পদক্ষেপ নিলে শ্রমিকদের আস্থার জায়গা তৈরি করা জরুরি, যাতে সার্বিকভাবে পুরো পোশাক খাত বিপদে না পড়ে-এমনটাই মনে করেন করেন মি. খান।
“কারণ তৈরি পোশাক খাত একটা সংবেদনশীল খাত। যদি অল্প সংখ্যক কারখানাতেও অসুবিধা হয় তবে এটা দেশের ভাবমূর্তি এবং সার্বিকভাবে রপ্তানির ভাবমূর্তিকে প্রভাবিত করে। ফলে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য সরকারকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে,” বলেন মি. খান।
প্রশাসক বসেছিল যেসব প্রতিষ্ঠানে
বাংলাদেশে এর আগেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সংকটের হাত থেকে তোলার জন্য প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছিল সরকারি বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ। গত পাঁচই অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পনের দিন পরই মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস ‘নগদ’ এ প্রশাসক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
আগামী এক বছরের জন্য ডাক বিভাগের ডিজিটাল লেনদেন সেবা ‘নগদে’ বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসে কর্মরত পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান দিদারকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
নগদের পর্ষদ ভেঙ্গে দিয়ে এ প্রশাসককে সহায়তা করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক পদমর্যাদার আরও ছয় কর্মকর্তাকে নগদ ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে নিয়োগ দেয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তদারককারী কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পরে ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যায় নগদের কর্মকর্তারা।
প্রশাসক নিয়োগের ওই সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল দেয় হাইকোর্ট। এটি এখন বিচারাধীন রয়েছে। ২০২০ সালে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে না পারায় ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সে প্রশাসক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে এরকম বেশ কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে অবসায়ন চেয়ে গ্রাহকরা উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন বিভিন্ন সময়ে। সংকট সমাধানে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেড নামে এরকম আরেকটি ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আদালত আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে পরিচালনা বোর্ড গঠন করে দিয়েছে।
১৯৯৪ সালে রাজধানীর শাহবাগের আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেটে কয়েকটি দোকান ভাড়া নিয়ে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করে যুবক।
১৮৬১ সালের সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্টের আওতায় আরজেএসসি থেকে নিবন্ধন নেয় প্রতিষ্ঠানটি এবং পরে উচ্চ সুদের বিনিময়ে আমানত সংগ্রহ ও ঋণদান কর্মসূচি চালু করে। এক তদন্তে প্রতারণামূলক কার্যক্রমসহ অবৈধ ব্যাংকিং-এর প্রমাণ পায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০১৩ সালে যুব কর্মসংস্থান সোসাইটি যুবকে প্রশাসক নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছিল।