top ad image
top ad image
home iconarrow iconমাঠের রাজনীতি

রাজশাহীতে লিটন-শাহরিয়ার দ্বন্দ্বে ‘বিভক্ত’ আওয়ামী লীগ

রাজশাহীতে লিটন-শাহরিয়ার  দ্বন্দ্বে ‘বিভক্ত’ আওয়ামী লীগ

রাজশাহীতে দীর্ঘদিন ধরে দুটি বলয়ে বিভক্ত হয়ে পড়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব এবার প্রকাশ্য ও সহিংস রূপ নিয়েছে।

বলয় দুটির নেতৃত্বে থাকা রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপির পুরোনো বিরোধ সামনে আসায় উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে।

বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ও বক্তব্যে দলীয় সমঝোতা বিনষ্টের জন্য উভয় পক্ষই পরস্পরকে দুষছে।

গত ২২ জুন দলের দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত হয়ে বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুলের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে লিটন ও শাহরিয়ারের মাঝে কোন্দল চরমে পৌঁছেছে। ‘বিভক্ত’ রাজশাহী আওয়ামী লীগে বিরাজ করছে উত্তেজনা।

রাজশাহীতে দুটি বলয়ে বিভক্ত আওয়ামী লীগের এক বলয়ে আছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী-৩ আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, রাজশাহী-২ আসনের এমপি ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শফিকুর রহমান বাদশা, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনীল কুমার, রাজশাহী-৪ আসনের সাবেক এমপি এনামুল হক প্রমুখ।

আরেক বলয়ে রয়েছেন রাজশাহী-৫ আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রতিমন্ত্রী আব্দুল ওয়াদুদ দারা, রাজশাহী-৬ আসনের এমপি ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, রাজশাহী-১ আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী-৩ আসনের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আয়েন উদ্দিন প্রমুখ।

সম্প্রতি রাজশাহী-৬ আসনের এমপি ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বাবুলের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে মদদদাতা হিসেবে দায়ী করে বক্তব্য দিলে বিভেদ আরও স্পষ্ট হয়ে উঠে। এতে শাহরিয়ার আলমের শাস্তির দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠে রাজশাহী।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও চলছে পাল্টাপাল্টি কথার লড়াই। এতে রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের দুটি বলয়ের মাঝে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

গত ২২ জুন বাঘায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ঘণ্টাব্যাপী এই সংঘর্ষে স্থানীয় এমপি শাহরিয়ার আলমের অনুসারী বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুলসহ উভয় পক্ষের অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হন। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বুধবার বিকেলে মারা যান বাবুল।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বাঘা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বাবুলের জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় মরদেহ সামনে রেখে বক্তব্য দিতে গিয়ে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘খুনি আক্কাস (পৌর মেয়র), খুনি মেরাজ (ইউপি চেয়ারম্যান)। তাদের পেছনে মদতদাতা আছে। দুই বছর আগে আক্কাস বহিষ্কৃত হয়েছিল আওয়ামী লীগ থেকে। খায়রুজ্জামান লিটন নিজের মুখে সেই কথা এখানে বলেছিলেন। এস এম কামাল বলেছিলেন, সে বহিষ্কৃত। এ ঘোষণার সাত দিনের মাথায় খায়রুজ্জামান লিটনের গাড়িতে আক্কাস ও মেরাজকে ঘুরতে দেখা গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পেছন থেকে মদতদাতা হিসেবে আসাদুজ্জামান আসাদ, এএইচএম খায়রুজ্জামান এবং লায়েব উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা হবে। তাঁদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব। আমাদেরও দায়িত্ব আছে।’

শাহরিয়ার আলম যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রতিমন্ত্রী ও রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াদুদ দারা, রাজশাহী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার। এছাড়া, শাহরিয়ার আলমের ঠিক পেছনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকার। তখন তাকে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

অনিল কুমার সরকার অভিযোগ করে বলেন, তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে জানাজার স্থান থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নিহত বাবুলকে শ্রদ্ধা জানাতে একটি ফুলের তোড়া নিয়ে গিয়েছিলেন। সেটিও মরদেহে দিতে দেওয়া হয়নি।

পরে শাহরিয়ারের বক্তব্যের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি বলেন, ‘বাবুল যখন ছাত্রনেতা, তখন থেকেই তাকে আমি পাশে পেয়েছি। তাকে হত্যার মতো নিন্দনীয়-নৃশংস হত্যার সঙ্গে আমি কোনোভাবে জড়িত থাকার কোনো কারণ নেই, কোনো সুযোগ নেই। জানাজায় আমার নাম ধরে এলাকার বর্তমান এমপি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ঈর্ষাপরায়ণভাবে এ রকম উক্তি করতে পারেন, সেটা আমার বোধগম্য নয়। তার কাছ থেকে এটা আশা করিনি।’

মেয়র লিটন বলেন, ‘মনে হচ্ছিল যেন এই লাশটির দরকার ছিল একটি রাজনৈতিক পক্ষের। যেটাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক কোনো প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা যায়। এ রকম একটা ষড়যন্ত্র বা চক্রান্ত একটা গোষ্ঠীর ছিল বা আছে বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত হওয়া দরকার।’

এদিকে, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে নিয়ে অপপ্রচার ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে রাজশাহীতে নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।

শনিবার রাজশাহী-৬ আসনের সংসদ সদস্য ও বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহরিয়ার আলমকে দল থেকে বহিস্কারের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের রাজশাহী জেলা ও মহানগর ইউনিট কমান্ড। মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে অংশ নেয় সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ ৭১ ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড।

এর আগে শুক্রবার শাহরিয়ার আলমের এ ধরনের বক্তব্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন লিটনপন্থি হিসেবে পরিচিত রাজশাহী মহানগর যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা। এসময় তারা শাহরিয়ার আলমকে রাজশাহীতে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে তার কুশপুত্তলিকা দাহ করেন।

আবার, শাহরিয়ার আলম পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, ‘শনিবারই রাজশাহীতে যাব, কীভাবে ঠেকায় দেখব।’ যদিও রাজশাহীতে তার আসার খবর পাওয়া যায়নি।

r1 ad
r1 ad