top ad image
top ad image
home iconarrow iconমাঠের রাজনীতি

একদিন পর ৫৭ জেলে ও ৬ ট্রলার ছেড়ে দিল মিয়ানমার

একদিন পর ৫৭ জেলে ও ৬ ট্রলার ছেড়ে দিল মিয়ানমার

বঙ্গোপসাগরের সেন্টমার্টিনের অদূরে মাছ ধরতে গিয়ে মিয়ানমার নৌবাহিনীর গুলিতে মারা গেছেন বাংলাদেশি এক জেলে। একই সঙ্গে দুইজন জেলে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গুলিবর্ষণের পর বাংলাদেশি ৬টি ট্রলারকে ধরেও নিয়ে গিয়েছিল তারা। ওই ট্রলারে ৫৮ জন জেলে ছিলেন। একদিন পর বৃহস্পতিবার তাদের দুই দফায় ছেড়ে দিয়েছে মিয়ানমার নৌবাহিনী।

বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে একটি ট্রলারে একজন জেলের গুলিবিদ্ধ মরদেহ ও দুইজন গুলিবিদ্ধ জেলেসহ ১১ জন জেলে টেকনাফের সর্বশেষ সীমান্ত শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে ফিরে আসে। অন্য ৫টি ট্রলারকে ছেড়ে দেয়ার পর প্রথমে সেন্টমার্টিনে, পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে পৌঁছে। এসব ট্রলারে ৪৭ জন জেলে ছিলেন।

টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন, কোস্টগার্ডের টেকনাফ স্টেশন, সেন্টমার্টিন স্টেশন ও শাহপরীরদ্বীপ পুলিশ ফাঁড়ি এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশি ৬ ট্রলার ও ৫৮ মাঝি-মাল্লাকে মিয়ানমার নৌবাহিনী ধরে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে প্রশাসন ও কোস্টগার্ড তাদের ফিরিয়ে আনতে জোর চেষ্টা শুরু করে। দীর্ঘ চেষ্টার পর প্রথমে একটি ট্রলার ও পরে অন্য ৫টি ট্রলার ছেড়ে দেয় মিয়ানমার।

গত বুধবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দাদের মালিকানাধীন ওই ৬টি ট্রলার সেন্টমার্টিনের অদূরে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে মিয়ানমার নৌবাহিনীর কবলে পড়ে। ওই সময় বাংলাদেশি ট্রলার লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে মিয়ানমার।

মিয়ানমার নৌবাহিনীর গুলিতে নিহত হন বাংলাদেশি এক জেলে। মো. ওসমান নামের ওই জেলে শাহপরীর দ্বীপের কোনারপাড়া এলাকার বাচ্চু মিয়ার ছেলে। তিনি শাহপরীর দ্বীপের বাজারপাড়া এলাকার সাইফুল কোম্পানির মালিকানাধীন ট্রলারের জেলে। আহত গুলিবিদ্ধ দুই জেলেও ওই ট্রলারে সাগরে গিয়েছিলেন।

গুলিবিদ্ধ জেলেরা হলেন- শাহপরীর দ্বীপ বাজার পাড়ার বাসিন্দা রাজু ও আরেকজন মাঝের পাড়ার মো. রফিক। তবে অন্য জেলেদের নাম ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ট্রলার মালিকরা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমের মৌলভীর শিল নামের বঙ্গোপসাগরের মোহনায় মর্মান্তিক এই ঘটনা ঘটে।

ধরে নিয়ে যাওয়া ৬টি ট্রলারের মালিক হলেন- শাহপরীর দ্বীপের মিস্ত্রী পাড়ার মুসলিম মিয়ার ছেলে মতিউর রহমান, মৃত আলী হোছনের ছেলে আবদুল্লাহ, তাঁর ভাই আতা উল্লাহ, উত্তরপাড়ার ছৈয়দ মাঝির ছেলে মো. আছেম ও বাজার পাড়ার সাইফুল কোম্পানি। প্রথম ফিরে আসা ট্রলারটিতে একটি মরদেহসহ ১২ জন ও সন্ধ্যায় ফেরত আসা ৫টি ট্রলারে ৫৮ জন জেলে ছিলেন।

টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের ইউপি সদস্য আবদুস সালামও এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, তার এলাকার ৬টি ট্রলার সেন্টমার্টিনের অদূরে বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে যায়। এসময় মিয়ানমারের নৌবাহিনী গুলিবর্ষণ করে। এতে একজন মারা যায়। এছাড়া আরো দুইজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর তিনি পেয়েছেন।

টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘সেন্টমার্টিনের কাছাকাছি মাছ শিকার করে ফেরার সময় একটি ট্রলারকে গুলি করে মিয়ানমার নৌবাহিনী। ট্রলারে থাকা একজন জেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। আরও দুজন গুলিবিদ্ধ রয়েছেন।’

ট্রলারের মালিক মো. কায়সার বলেন, সেন্টমার্টিনের কাছাকাছি মাছধরা শেষে শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাট দিয়ে ফিরছিলাম। এ সময় নাইক্ষ্যংদিয়া সংলগ্ন অংশে মিয়ানমার নৌবাহিনীর একটি জাহাজ আমার ট্রলার বরাবর অতিক্রম করছিল। মিয়ানমার নৌবাহিনীর ওই জাহাজ থেকে হঠাৎ আমার ট্রলার লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে আমাদের এক জেলে মারা গেছে আর দুই জেলে গুলিবিদ্ধ হয়।

তিনি বলেন, আমরা নাফ নদের বাংলাদেশের জলসীমায় ছিলাম এবং হাত উঁচু করে বাংলাদেশি পতাকা দেখিয়ে তাদের গুলি না করতে ইশারা করছিলাম। এরপরও তারা মানেনি; গুলি করতে থাকে।

আহত জেলে মোহাম্মদ রফিক সাংবাদিকদের বলেন, অলি আহমেদ ট্রলার নিয়ে গত চারদিন আগে ১০ জন মাঝিমাল্লা নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে গিয়েছিলাম। বৃহস্পতিবার ফেরার পথে সাগরে মিয়ানমারের অংশে অবস্থান নেয়া মিয়ানমার নৌবাহিনীর একটি জাহাজ সংকেত দিয়ে তাদের দিকে যেতে বলে। ওটা মিয়ানমারের পানিসীমা হওয়ায় আমরা সেন্টমার্টিন দ্বীপের দিকে চলে আসতে থাকি। এ সময় পরপর গুলিবর্ষণ করে তারা। এ ঘটনায় দুজন গুলিবিদ্ধ হয়। আরেকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। অন্যরা অক্ষত আছে।

এ ব্যাপারে বিজিবির টেকনাফস্থ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ জানান, সেন্টমার্টিনের অদূরে বঙ্গোপসাগরের মিয়ানমার সীমান্তে নৌবাহিনীর গুলিতে একজন নিহত এবং আরও দুইজন আহত হওয়ার খবর পেয়েছি। এ ঘটনায় বিস্তারিত খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

বিষয়টি টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আদনান চৌধুরীও নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সেন্টমার্টিনের কাছে মিয়ানমার নৌবাহিনীর গুলিতে এক বাংলাদেশি জেলে নিহত ও দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়। ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেদের ছেড়ে দিয়েছে মিয়ানমার নৌবাহিনী। কোস্ট গার্ড গিয়ে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে এসেছে।

শাহপরীর দ্বীপ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই নাজমুল হক জানান, নিহত ও গুলিবিদ্ধ জেলেসহ ১১ জন মাঝিমাল্লা নিয়ে একটি ট্রলার দুপুর দুইটার দিকে শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘাটে ফিরেছে। অন্য ৫টি ট্রলার ৪৭ জন জেলে নিয়ে ফিরে আসে সন্ধ্যা ৬টার দিকে।

r1 ad
r1 ad
top ad image