top ad image
top ad image
home iconarrow iconমাঠের রাজনীতি

বাঘ বাড়ছে সুন্দরবনে, জরিপের ফল প্রকাশ মঙ্গলবার

বাঘ বাড়ছে সুন্দরবনে, জরিপের ফল প্রকাশ মঙ্গলবার

ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে সুন্দরবনের বাঘ গণনার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ শেষ হয়েছে আগেই। চলছিল সেসব তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাইয়ের কাজ। দীর্ঘ সময় লাগলেও অবশেষে সেই বাঘ জরিপের ফলাফল প্রস্তুত। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশের জন্য আরও একদিন অপেক্ষা করতে হলেও বন বিভাগের সংশ্লিষ্টরা আভাস দিয়েছেন, ছয় বছর আগের সবশেষ জরিপের চেয়ে নতুন জরিপে বাঘের সংখ্যা বেশি পাওয়া যাবে।

বাঘের সংখ্যা বাড়লে সেটি সুখবর হয়ে আসবে বলে মন্তব্য করছেন পরিবেশবিদরা। তবে বাঘের বেঁচে থাকার জন্য প্রতিকূলতাগুলো আগের মতোই থাকায় উদ্বেগও জানিয়েছেন তারা। বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বাঘকে বাঁচানোর জন্য তারা আরও অনেক উদ্যোগ নিচ্ছেন।

স্বাধীনতার পর সুন্দরবনে সর্বোচ্চ ৪৫০টি বাঘের উপস্থিতির কথা জানা যায় ১৯৮৪ সালের জরিপ থেকে। এরপর থেকে বাঘের সংখ্যা ছিল ধারাবাহিকভাবে কমতির দিকে। ২০১৫ সালের প্রথম ক্যামেরা ট্র্যাপিং জরিপে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা পাওয়া যায় মাত্র ১০৬টি। ২০১৮ সালের দ্বিতীয় ক্যামেরা ট্র্যাপিং জরিপে এই সংখ্যা কিছুটা বাড়ে— সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা দাঁড়ায় ১১৪টিতে।

ছয় বছর পর তৃতীয়বারের মতো ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে বাঘের জরিপ শুরু হয় ২০২৩ সালের নভেম্বরে। এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলে জরিপের কাজ। জরিপ থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই শেষে ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবসে ফল ঘোষণার কথা ছিল। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষ করা যায়নি। শেষ পর্যন্ত আগামীকাল মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) জরিপের ফল প্রকাশ করবেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ান হাসান।

SundarBan-Tiger-Photo-01

বন বিভাগ বলছে, সুন্দরবনের খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটে ৬৩৯টি গ্রিডে এক হাজার ২০০ ক্যামেরা বসিয়ে বাঘের ছবি সংগ্রহ করা হয়। ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ে প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর সাড়ে ১০ লাখের বেশি ছবি পাওয়া যায়। এর মধ্যে থেকে সাড়ে ৭ হাজার বাঘের ছবি নিয়ে চলে বিশ্লেষণ। সুনির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ না করলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তরা বলছেন, ছয় বছর ব্যবধানে এবারের জরিপেও বাঘের সংখ্যা বেড়েছে।

সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক ও বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (পশ্চিম) ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, ‘এর আগে বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে বাঘ জরিপ হয়। কিন্তু এ বছর দেশীয় প্রযুক্তি ও দেশের অর্থায়নে খুলনার চারটি রেঞ্জেই ক্যামেরার ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে আমরা এই জরিপ পরিচালনা করেছি। ২০১৫ ও ২০১৮ সালের তুলনায় এ বছর বাঘের সংখ্যা বাড়বে বলেই আমরা আশা করছি।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলার খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়ক মাহফুজুর রহমান মুকুল বলেন, ‘এখন মানুষ অনেক সচেতন হয়েছে। বাঘ যে আমাদের রক্ষাকবচ, তা সাধারণ মানুষ বুঝেছে। এ জন্য বাঘ দেখলে এখন আর মানুষ পিটিয়ে মারে না। এ কারণে বাঘের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে মনে করছি।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ন সম্পাদক মো. নুর আলম শেখ বলেন, ‘বাঘের খাবার হরিণ ও শূকরের অপর্যাপ্ততা রয়েছে। এ ছাড়া সুন্দরবনের বিভিন্ন খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করা হয়। এই বিষের পানি খেয়ে বাঘ অনেক সময় মারা যায়। আন্তর্জাতিক চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের তৎপরতাও রয়েছে, যারা বাঘের দেহাংশ পাচার করে থাকে। এসব চক্র একটা সময় পর্যন্ত যথেষ্ট সক্রিয় ছিল। এ কারণে বাঘের সংখ্যা বাড়েনি। বাঘ বাঁচাতে হলে বাঘের আবাসস্থল সুন্দরবনকে এসব কিছু থেকেই রক্ষা করতে হবে।’

নুর আলম শেখ আরও বলেন, ‘সর্বশেষ জরিপ নিয়ে ধারণা করা হচ্ছে, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বাড়ছে। এটি বড় সুখবর। কিন্তু অতিমাত্রায় ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের কারণে বাঘের আবাসস্থল নষ্ট হয়ে গেছে। লবণাক্ততা বেড়েছে। তাই সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বাড়ার আভাস মিললেও এর টিকে থাকার হুমকিগুলো আগের মতোই রয়েছে। সেদিকে নজর দিতে হবে।’

SundarBan-Tiger-Photo-02

বন বিভাগ অবশ্য বাঘের আবাসস্থল সংরক্ষণের মাধ্যমে বাঘকে টিকিয়ে রাখা ও বংশবিস্তারের অনুকূল পরিবেশ করে দিতে নানা উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছে। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের বলেন, ‘ঝড়, বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস বাঘের আবাসস্থল ধ্বংস করে দিচ্ছে। এসব বিপর্যয় থেকে বাঘকে রক্ষা করতে সুন্দরবনে বাঘের কেল্লাও নির্মাণ করা হচ্ছে।’

এদিকে বাঘ জরিপের খরচ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাপা জাতীয় পরিষদ সদস্য ও বিভাগীয় সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মো. বাবুল হাওলাদার। তিনি বলেন, ‘প্রতি তিন বছর পরপর বাঘ গণনার জন্য কোটি কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। এখানে বড় ধরনের অর্থ অপচয় হচ্ছে। জরিপের নামে, বাঘ গণনার নামে অর্থ লুটপাট হচ্ছে। এগুলো বন্ধ করতে হবে। সুন্দরবন বাঁচাতে ১০ বছর পর পর একবার বাঘ গণনা করলে সুন্দরবনের ওপর চাপ কমবে।’

কোন বছরে বাঘের সংখ্যা ছিল কত

বন বিভাগের তথ্য থেকে জানা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের জরিপে সুন্দরবনে বাঘ পাওয়া যায় ৩৫০টি। এরপর ১৯৮২ সালে জরিপে বাঘের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪২৫টিতে। ১৯৮৪ সালে সুন্দরবন দক্ষিণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ১১০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় জরিপ চালিয়ে ৪৩০ থেকে ৪৫০টি বাঘ থাকার কথা জানানো হয়। এখন পর্যন্ত সেটিই কোনো একটি সময়ে দেশে বাঘের সর্বোচ্চ সংখ্যা।

এরপর ১৯৯২ সালে ৩৫৯টি বাঘ থাকার তথ্য জানায় বন বভিাগ। ১৯৯৩ সালে সুন্দরবনের ৩৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় প্যাগমার্ক (বাঘের পায়ের ছাপ) পদ্ধতিতে জরিপ চালিয়ে সুন্দরবনে বাঘ পাওয়া যায় ৩৬২টি। একই পদ্ধতিতে ১৯৯৬-৯৭ সালের জরিপে বাঘের সংখ্যা উল্লেখ করা হয় ৩৫০টি থেকে ৪০০টি। পরে ২০০৪ সালেরি জরিপে বাঘের সংখ্যা পাওয়া যায় ৪৪০টি। ২০১৫ সালে এসে প্রথম ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় বাঘ গণনার জন্য, ততদিনে বাঘের সংখ্যা তলানিতে নেমে এসেছে।

এদিকে সুন্দরবন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৫০টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে স্বাভাবিকভাবে মারা গেছে ১০টি। ১৪টি বাঘ পিটিয়ে মেরেছে স্থানীয় জনতা। একটি নিহত হয়েছে ২০০৭ সালের সুপার সাইক্লোন সিডরে। বাকি ২৫টি বাঘ হত্যা করেছে চোরাশিকারিরা।

r1 ad
r1 ad
top ad image