top ad image
top ad image
home iconarrow iconমাঠের রাজনীতিarrow iconখবরাখবর

শোকাচ্ছন্ন জারিয়া গ্রাম বিচারের দাবিতেও উত্তাল

শোকাচ্ছন্ন জারিয়া গ্রাম বিচারের দাবিতেও উত্তাল
মেয়েটির বাড়িতে ভিড় জমিয়েছেন প্রতিবেশীসহ গ্রামবাসী। ছবি: সংগৃহীত

মাগুরার শ্রীপুরে জারিয়া যেন শোকের গ্রাম। এই গ্রামের আট বছর বয়সী যে মেয়েটি চঞ্চলতায় মাতিয়ে রাখত বাড়ি থেকে শুরু করে গ্রাম, আজ তারই নিথর দেহের জন্য যে অপেক্ষা সবার। সন্ধ্যার আঁধার যতটা নয়, তার চেয়েও গভীর যেন সেই মেয়েটির জন্য শোকের আবহ।

বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দুপুরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছে বোনের বাড়িতে গিয়ে বোনের শ্বশুর বাড়ির আত্মীয়দের হাতে ধর্ষণের শিকার মেয়েটি।

সে খবর জারিয়া গ্রামে পৌঁছাতে সময় লাগেনি। তখন থেকেই মেয়েটির বাড়িতে ভিড় জমাতে শুরু করেছেন প্রতিবেশীসহ গ্রামবাসী। শিশুটির ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ বাবা বাকরুদ্ধ। ভাইবোন আর আত্মীয়-স্বজনদের আহাজারিতে ভারী গোটা গ্রামের বাতাস।

এমন মর্মান্তিক খবরে গ্রামের সবার চোখেও অশ্রু। মেয়েটির চেনাপরিচিত যারা, তারাও শোকস্তব্ধ। তবে সেই শোকের মধ্যেও সবার চোখে বিচারের দাবি। মেয়েটির এমন পরিণতির জন্য যারা দায়ী, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাইছেন সবাই। তাদের সবার এক দাবি— ধর্ষকদের ফাঁসি হোক। বিচারে যেন কালক্ষেপণ না করা হয়।

মেয়েটির প্রতিবেশী রোকেয়া খাতুন বলেন, ও সবার খুব প্রিয় ছিল। এতটুকু একটা মেয়ে এভাবে চলে যাবে, আমরা ভাবতেও পারি না। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে আমাদের শিশুরাও নিরাপদ থাকবে না।

আরেক প্রতিবেশী সাহানা বলেন, ও আমার ছেলের সমবয়সী। প্রচণ্ড মেধাবী ছিল। সেই সঙ্গে খুবই হাসিখুশি। সবাই ওকে পছন্দ করত।

Mother-Of-The-Child-At-Magura-Stadium-13-03-2025

মাগুরা স্টেডিয়ামে মেয়েটির মায়ের আহাজারি। ছবি: সংগৃহীত

সেই মেয়েটির মৃত্যুর জন্য দায়ীদের শাস্তি দাবি করে সব্দালপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য রূপ কুমার বলেন, আমরা শুধু ফাঁসি চাই না, এটা যেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে হয়, সেই দাবি সরকারের কাছে রাখছি।

ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পান্না খাতুন বলেন, আমাদের একটাই দাবি— হিটু শেখসহ চার আসামির ফাঁসি।

এই হিটু শেখই মেয়েটির ধর্ষণ ও হত্যা মামলার প্রধান আসামি। তিনি শিশুটির বোনের শ্বশুর। মামলায় তিনি ছাড়াও তার স্ত্রী এবং দুই ছেলে আসামি। তারা সবাই আদালতের আদেশে রিমান্ডে রয়েছেন।

এ দিন সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে শিশুটির মরদেহ নিয়ে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার অবতরণ করে মাগুরা স্টেডিয়ামে। সেখানেও নেমেছিলেন মানুষের ঢল। সেখানেও শোক ধারণ করেই ধর্ষকদের সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে সোচ্চার ছিলেন সবাই।

মাগুরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, আমরা এই ঘটনায় ভীষণ ক্ষুব্ধ। আমরা শিশুটির মৃত্যুর সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে ফাঁসির দাবি জানাই। ধর্ষকদের দ্রুত ফাঁসি না দেওয়া হলে আমরা মাগুরায় কঠোর আন্দোলন করব।

মাগুরা জেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক লাবণী জামান বলেন, আমরা মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে ধর্ষকের অবিলম্বে ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি। বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত জেলা মহিলা পরিষদ সবসময় শিশুটির পরিবারের পাশে থাকবে।

শিশুটির মরদেহ মাগুরায় পৌঁছানোর পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে শহরের নোমানী ময়দানে তার প্রথম জানাজা হয়। পরে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় নিজ গ্রামে, সেখানেই দাফন করা হবে তাকে। শিশুটির মৃত্যুর খবর পেয়েই সেই গ্রামের বাড়িতে কবর খুঁড়ে অপেক্ষা করছেন স্বজনরা।

মাগুরা সদরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে গত বুধবার (৫ মার্চ) দিবাগত রাত ২টার দিকে ধর্ষণের শিকার হয় মেয়েটি। বোনের শ্বশুর বাড়ির আত্মীয়দের হাতেই ধর্ষণের শিকার হয় সে। এ ঘটনায় শিশুটির মা গত ৮ মার্চ মাগুরা সদর থানায় চারজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলা করেন। মেয়েটির মৃত্যুতে সেটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়েছে।

আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতাল ও পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল তাকে। পরে সংকটাপন্ন অবস্থায় শনিবার (৮ মার্চ) সন্ধ্যায় তাকে ঢাকা সিএমএইচের শিশু আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।

চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টার পরও শিশুটির শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। বুধবারই গ্লাসগো কোমা স্কেলে (জিসিএস) তার চেতনার মাত্রা ৪ থেকে ৩-এ নেমে আসে, যেটিকে জীবিত অবস্থায় চেতনার সর্বনিম্ন মাত্রা হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা।

এর মধ্যেই বুধবার চারবার ও বৃহস্পতিবার তিনবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় মেয়েটির। বৃহস্পতিবার প্রথম দুবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়ার পর সিপিআর দিয়ে শিশুটির হৃৎস্পন্দন ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু তৃতীয়বার আর তাকে ফেরানো যায়নি। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছে শিশুটি।

এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি আসামিদের দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছেন।

r1 ad
r1 ad
top ad image