সালিশে মারধরের শিকার নারীকে বাঁচাতে গিয়ে যুবক খুন

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় সালিশি বৈঠকে মারধরের শিকার নারীকে বাঁচাতে গিয়ে যুবক খুন হয়েছে। এ সময় আরও তিন জনকে গুরুতর আহত করা হয়। বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) রাতে উপজেলার নবীপুর পশ্চিম ইউনিয়নের নবীপুর বাজারে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
নিহত রাজিব হোসেন (৩২) উপজেলার রহিমপুর গ্রামের মৃত খলিল মিয়ার ছেলে। আহতরা হলেন- নবীপুর গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী মোজাফ্ফর হোসেন (৫০), তার ছেলে আক্তার হোসেন (৩০) ও জসিম উদ্দিন (৫৫)। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ শুক্রবার কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ঘটনাস্থল থেকে মারুফ (১৯) নামের একজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছেন স্থানীয়রা। তিনি উপজেলার মোচাগড়া গ্রামের আবুল কালামের ছেলে।
আহত আক্তারের স্ত্রী রাবেয়া বেগম জানান, তার ননদ নিলুফা বেগম উপজেলার যাত্রাপুর গ্রামের শিরিন বেগম থেকে ১০ হাজার টাকা ধার নেন। ধারের টাকা দিতে না পারায় এই টাকার জন্য বেশ কয়েকবার সালিশি বৈঠক হয়। পাওনা টাকার জন্য বৃহস্পতিবার রাতে তার ননদ ও স্বামীকে তুলে নেওয়ার জন্য শিরিন ৮/১০ জনের একটি দল নিয়ে তার শ্বশুরবাড়িতে আসেন। এ সময় তাদের সঙ্গে হাতাহাতি হয়। স্থানীয়রা বিষয়টি মীমাংসার জন্য উভয়পক্ষকে নিয়ে নবীপুর বাজারে কামাল মাস্টারের অফিসে সালিশ বৈঠকে বসেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সালিশ চলাকালে অফিসের বাইরে শিরিন বেগমের সঙ্গে আসা মারুফ, মারফতসহ কয়েকজন আক্তারের স্ত্রী রাবেয়া বেগমকে লাথি মেরে ফেলে দেন। এ সময় রাজিব নামের একজন রাবেয়াকে রক্ষা করতে যান। এতে মারুফ, মারফত রাজিবের বুকে ও শরীরে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। তাকে বাঁচাতে এলে আক্তার হোসেন, তার বাবা মোজাফ্ফর ও কাকা জসিম উদ্দিনকেও কুপিয়ে গুরুতর আহত করে।
নিহতের ভাই আলমগীর হোসেন বলেন, আমার ভাই ফার্নিচারের নকশার কাজ করতো। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর তার বন্ধুর সঙ্গে সালিশ বৈঠক দেখতে যায়। সেখানে ঘাতকের হাত থেকে এক নারীকে বাঁচাতে গিয়ে ভাড়াটে খুনির হাতে নির্মমভাবে খুন হন। সে বিয়ে করেছে তিন বছর। দুই বছরের একটি শিশু পুত্র আছে। আমরা এই হত্যাকারীসহ জড়িতদের ফাঁসি চাই।
সালিশদার কামাল মাস্টার বলেন, বিচার প্রায় শেষ। এমতাবস্থায় দুই অপরিচিত ছেলে ভিতরে ঢুকে। ধর বলে একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেই আচমকা আক্রমণ করে। প্রথমে মনে হয়েছে কিল ঘুষি দিচ্ছে। তাৎক্ষণিক রক্তপাত দেখে লক্ষ্য করা গেছে ওর হাতে চকচকে ধারালো অস্ত্র। কিলার ভাড়াটে ও দুর্ধর্ষ। তাকে আটক করে আইনের হাতে সোপর্দ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মুরাদনগর থানার ওসি মাহবুবুল হক বলেন, হত্যার ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।