বন্যায় বিপর্যস্ত সুনামগঞ্জ, ত্রাণের জন্য হাহাকার
![বন্যায় বিপর্যস্ত সুনামগঞ্জ, ত্রাণের জন্য হাহাকার](https://cdn.rajneete.com/original_images/bny_EsFvN9H.jpg)
পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণে সিলেট বিভাগে সৃষ্ট বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। প্রতিদিনই প্লাবিত হয়ে পানির নিচে তলিয়ে গেছে খামারের মাছ ও হাঁস। আমন, আউশ, ইরি ধানি জমি। এ ছাড়া বাড়িঘর, শিক্ষাঙ্গন, মসজিদ, মন্দির ও কবরস্থানও প্লাবিত হয়ে ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে।
এদিকে চরম খাদ্যের অভাবে দিন পার করছেন পানিবন্দি মানুষ। বানভাসিদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণের কথা বলা হয়েও তা সকলের কাছে পৌঁছায়নি বলে জানা যায়। এতে ঘরবন্দি লোকজনের আর্তনাদ বাড়ছে।
বৃহস্পতিবার (২০ জুন) ভোর পর্যন্ত সুনামগঞ্জ জেলার প্রধান নদী সুরমা, কালনী, কুশিয়ারা ও যাদুকাটা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, বুধবার বিকেল ২টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত পানি স্থির ছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দিনে মাঝে মাঝে বৃষ্টি বন্ধ হলেও মুহূর্তেই কালো হয়ে উঠছে আকাশ। নামে অবিরাম বর্ষণ এবং বর্ষণের সঙ্গে শুরু হয় গর্জন। ভোগান্তি আর আতঙ্ক এখন বানবাসীদের নিত্য সঙ্গী। পানিবন্দি হয়ে পড়ায় অনেকেই বাসা বাড়ি ছেড়ে ঠাঁই নিয়েছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। নেই পর্যাপ্ত খাবার। বলা চলে, এমন সংকটে পানিবন্দি লোকজন খাবারের জন্য হাহাকার করছেন।
এদিকে, সুনামগঞ্জ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও জেলা আনসার ভিডিপি কার্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রে বুধবার (১৯ জুন) দিনব্যাপী শুকনো খাবারসহ ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন সুনামগঞ্জ ৪ (সদর বিশ্বম্ভরপুর) আসনের সংসদ সদস্য ড. মোহাম্মদ সাদিক ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী।
অন্যদিকে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে ছাতক উপজেলার জামুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইসলামপুর উচ্চ বিদ্যালয়, দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের শরীফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ আশ্রয়কেন্দ্রে ৫ হাজার পরিবারের মাঝে পুলিশ প্রশাসনের প্রস্তুতকৃত রান্না করা খাবার বিতরণসহ ত্রাণসামগ্রী প্রদান করেছেন সুনামগঞ্জ ৫ আসনের সংসদ সদস্য এম মুহিবুর রহমান মানিক।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ছাতক উপজেলায় ১৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ভারতের মেঘালয়, আসাম ও ছেরাপুঞ্জিসহ সীমান্তে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে সুনামগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে।
বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন কর্তৃক পরিচালিত কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান ইমন গণমাধ্যমকে বলেন, জেলার ১১টি উপজেলায় ৬ লাখ লোক পানিবন্দি রয়েছেন। জেলার ৫৪১টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১৮ হাজার বন্যার্ত ভিকটিম আশ্রয় নিয়েছেন। এ পর্যন্ত বরাদ্দ রয়েছে জিআর ৫০০ মেট্রিক টন চাল ও জিআর ক্যাশ হিসেবে ৩৫ লাখ টাকা।
সুনামগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ খালেদুল ইসলাম বলেন, বন্যা মোকাবিলায় আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে। এরই মধ্যে বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোতে পানি বিশুদ্ধকরণ সাড়ে তিন লাখ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া পানি বিশুদ্ধকরণ মোবাইল ওয়াটার ট্রিটম্যান্ট প্ল্যান্ট এর আওতায় প্রতিটি গাড়িতে ৬ হাজার লিটার করে ২ টি গাড়িতে ১২ হাজার বিশুদ্ধ পানি এবং ১৪ লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট প্রস্তুত রয়েছে। এদিকে পানিতে নিমজ্জিত হয়ে প্রায় ৩ হাজার নলকূপ নষ্ট হয়েছে।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান, অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলায় ১ হাজার ৬ শত ৭৭ হেক্টর আউশ ধান ও ৪ শত ১৩ হেক্টর সবজি বন্যার পানিতে ডুবে গেছে।
উপজেলাভিত্তিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করতে ২ থেকে ৩ দিন সময় লাগবে বলেও জানান তিনি।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, জেলার গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে ধারনা করা হচ্ছে ১২ উপজেলায় প্রচুর গোখাদ্য বন্যার পানিতে ভেসে গেছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, পাহাড়ি ঢল ও অতি বৃষ্টিতে সুনামগঞ্জের সুরমা নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে কয়েক লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। ইতোমধ্যে যারা আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের জন্য ১০ মেট্রিকটন চাল এবং ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও শুকনো খাবার বরাদ্দসহ বণ্টন করা হয়েছে। এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী মজুত আছে। জেলা প্রশাসন বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে।