top ad image
top ad image
home iconarrow iconমাঠের রাজনীতি

সিলেটে বন্যা পরিস্থিরি উন্নতি, বাড়ি ফিরছে মানুষ

সিলেটে বন্যা পরিস্থিরি উন্নতি, বাড়ি ফিরছে মানুষ

বৃষ্টি কমে যাওয়ায় নদনদীর পানি কমতে শুরু করায় সিলেট ও সুনামগঞ্জে ধীরে ধীরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। প্লাবিত সড়ক ও বাড়িঘর থেকে পানি নেমে যাওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়েছে অনেকে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, সুরমা নদীর সিলেট ও সুনামগঞ্জ পয়েন্ট এবং কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার নিচে নেমেছে। দুই নদীর অন্যান্য পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার উপরে থাকলেও ধীরে ধীরে কমছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, গত দু’দিন ধরে সিলেটের আকাশে সূর্য ওঠেছে, কোথাও বৃষ্টি হয়নি। ফলে, নদনদী ও হাওরের পানি কমতে শুরু করেছে।

সিলেট জেলা প্রশাসন বলছে, গত দুদিনে সিলেট জেলায় ৬ হাজার ৩৯২ জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি ফিরেছে। একই সময়ে সুনামগঞ্জ জেলায় বাড়ি ফিরেছে ৩ হাজার ৭২৩ জন।

তবে, এখনও দুই জেলায় ৪০ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে। এরমধ্যে সুনামগঞ্জ জেলায় ২০ হাজার ১২৬ জন এবং সিলেট জেলায় ২২ হাজার ৬২৩ জন।

দুই জেলায় ১৭ লাখ ৫৭ হাজার ২২২ জন মানুষ এখনও পানিবন্দি রয়েছে। যার মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলায় ৭ লাখ ৯২ হাজার ৭৫৭ জন এবং সিলেট জেলায় ৯ লাখ ৬৪ হাজার ৪৬৫ জন।

সিলেট জেলা প্রশাসন জানায়, পাহাড়ি ঢল ও অতি বৃষ্টিতে জেলার ১৩ উপজেলা, সিলেট সিটি করপোরেশন ও চারটি পৌরসভায় বানের পানি ঢুকে প্লাবিত হয়। এতে ৯ লাখ ৬৪ হাজার ৪৬৫ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। পানিতে তলিয়ে যায় গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, বিশ^নাথসহ বিভিন্ন উপজেলা ও গ্রামীণ সড়ক।

দুর্গত মানুষের জন্য এখন পর্যন্ত ১ হাজার ১৭৫ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন চাল (জিআর) বিতরণ করা হয়েছে। নগদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। শিশু খাদ্যের জন্য ১৯ লাখ টাকা, গো-খাদ্যের জন্য ১৯ লাখ টাকা। এছাড়া ৪ হাজার ৭৯৫ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার ও আজ শনিবার জেলার ছয় উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে দেড় হাজার প্যাকেট রান্না করা খাবার এবং পাঁচশ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

এদিকে, সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যনগর উপজেলা ছাড়া সবগুলো উপজেলা ও সুনামগঞ্জ শহর প্লাবিত হয়েছে। জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে ১১টিতে ৮২টি ইউনিয়ন ও সুনামগঞ্জ পৌরসভা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। তবে, এখন পানি কমতে শুরু করেছে। যদিও, সুরমার নদীর পানি এখনও ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, সুরমার কানাইঘাট পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩ সেন্টিমিটার পানি কমছে। আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় এই পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তবে, সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমার নিচে নেমেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এই পয়েন্টে পানি কমেছে ২৩ সেন্টিমিটার। ছাতক পয়েন্টে পানি কমেছে ২৭ সেন্টিমিটার, সুনামগঞ্জ পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার ও দিরাই পয়েন্টে ৭ সেন্টিমিটার। সুনামগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পাউবো আরও জানায়, আজ সন্ধ্যায় কুশিয়ারা নদীর অমলশীদ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ১০১ সেন্টিমিটার এবং শেরপুর পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে, শেওলা পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সিলেট সিটি মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘সিলেট নগরে বন্যার্ত মানুষের সহযোগিতায় সিটি করপোরেশনের সেচ্ছাসেবক টিম কাজ করছে। পানি নেমে যাওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরছে মানুষ। তবুও আমরা সার্বক্ষণিক সতর্ক আছি। মানুষের সহযোগিতায় আমাদের টিম সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে। আশ্রয়কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন জন্মেজয় দত্ত জানান, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বন্যার পানি উঠেছিল। পানি নেমে যাওয়ায় চিকিৎসাসেবা প্রদান স্বাভাবিক হয়েছে। এছাড়া জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে বন্যাদুর্গত মানুষের চিকিৎসাসেবায় আমাদের মেডিকেল টিম কাজ করছে।

সিলেট আবহাওয়া অফিস জানায়, গত দুদিন সিলেটে বৃষ্টি হয়নি। আগামী ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। তবে, এতে বন্যা পরিস্থিতিতে প্রভাব পড়বে না।

r1 ad
r1 ad