সরকার সরিয়ে না দিলে নিজে পদত্যাগ করব না: কুয়েট উপাচার্য\n
কুয়েটের ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মুনতাসির বিল্লাহ নকিবসহ অনশনরত আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমাদের অনেক ভাই হাসপাতালে ভর্তি। তবুও কেউ অনশন ভাঙতে রাজি হয়নি। কেউ অনশন ভাঙব না।
এদিকে বুধবার দুপুরে কুয়েটের ১০২তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়। কুয়েটের জনসংযোগ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শাহেদুজ্জামান শেখ বলেন, সিন্ডিকেট সভায় দুটিচ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে— ৩৭ শিক্ষার্থীর সাময়িক বহিষ্কারের আদেশ প্রত্যাহার এবং হলগুলো খুলে দেওয়া। তবে একাডেমিক কার্যক্রম পূর্বঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ি ৪ মে থেকে চালু হবে।
সিন্ডিকেটের অন্যান্য সিদ্ধান্তের ব্যাপারে শাহেদুজ্জামান শেখ বলেন, শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙার জন্য আহ্বান জানানো হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছেন কুয়েট ক্যাম্পাসে। ছবি: রাজনীতি ডটকম
এর আগে সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে কুয়েট ক্যাম্পাসে আসেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার। তিনিও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অনশন প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন। তবে শিক্ষার্থীরা তার অনুরোধ প্রত্যাখান করে তাদের হলের পানি ও ইন্টারনেট বন্ধের কথা কাছে তুলে ধরেন।
উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের বলেন, আমার সঙ্গে ইউজিসির দুজন সদস্য এসেছেন। তারা ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে কুয়েট প্রশাসনকে অবহিত করবেন। তোমাদের এসব অসুবিধা দ্রুত সমাধান করা হবে।
তবে শিক্ষার্থীরা উপদেষ্টার আহ্বানে সাড়া দেননি। তারা বলেন, অতীতে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নানা আশ্বাস দিয়ে অনশন ভাঙানো হয়েছে। কিন্তু পরে আর সেসব আশ্বাস বা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা হয়নি। ফলে তারা সেসব অভিজ্ঞতা থেকে দাবি পূরণ হওয়ার আগ পর্যন্ত অনশন ভাঙতে রাজি নন।
শিক্ষার্থীরা উপদেষ্টাকে বলেন, আমরা দুই মাস ধরে আন্দোলন করছি। কিন্তু আমাদের দাবি মানা হচ্ছে না। আমরা এ বিষয়ে আর সময় দিতে চাই না। আপনারা আপনাদের কাজ করতে থাকেন। আমরা লাশ হয়ে গেলেও ভিসির পদত্যাগ ছাড়া অনশন ভাঙব না।
উপদেষ্টা সাড়ে ১০টার দিকে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। তবে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষক সমিতির অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে তাদের সঙ্গে কোনো সভা করেননি। এমনকি কুয়েটের প্রশাসনিক ভবনে তাকে নেওয়ার চেষ্টা করা হলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।
এরপর ইউজিসির সদস্যদের সঙ্গে কুয়েট প্রশাসনের সভা হয়। পরে সাড়ে ১২টার দিকে জরুরি সিন্ডিকেটে বসিয়ে ৩৭ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার ও হল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তের আগেই শিক্ষার্থীরা তালা ভেঙে হলে ঢুকে পড়েছিলেন।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। বহিরাগতরা ছাত্রদলের সঙ্গে মিলে শিক্ষার্থীদের বেধড়ক মারধর করেছে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তারা তালা ঝুলিয়ে দেন।
বুধবার সকালে কুয়েটে অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেন শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার। ছবি: রাজনীতি ডটকম
ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে কমিটিও করা হয়। ওই দিন রাতেই খানজাহান আলী থানায় অজ্ঞাতনামা ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করে প্রশাসন।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সব রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনকে লাল কার্ড দেখান শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তারা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা খুলনা থেকে ঢাকায় গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেন। এতে হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার, উপাচার্যের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবি জানানো হয়।
২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের ৯৯তম (জরুরি) সভা সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। পরদিন সকাল ১০টার মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন।