বনশ্রীতে ব্যবসায়ীকে গুলি করে ২০০ ভরি স্বর্ণ ছিনতাই\n
রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ধানমন্ডিতে শংকর আলী হোসেন বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে ১০ থেকে ১২ জনের একদল দুর্বৃত্ত দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দলটি আশপাশের দোকানগুলোতে ভয়ভীতি দেখাচ্ছিল। আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা দ্রুত দোকান বন্ধ করে দেন। ১৫/২০ মিনিট পর দলটি এলাকা ছেড়ে রায়ের বাজারের দিকে চলে যায়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে স্থানীয়রা মসজিদে মাইকে সতর্ক বার্তা প্রচার করেন। হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম জানান, প্রাথমিকভাবে দুষ্কৃতিকারীদের পরিচয় জানা যায়নি।
এ ঘটনার কয়েক ঘণ্টার পর বনশ্রীতে আনোয়ার হোসেন (৫৫) নামে এক সোনা ব্যবসায়ীকে গুলি করে তার কাছে থাকা ২০০ ভরি সোনা ও নগদ এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, তিনটি মোটরসাইকেলে হেলমেট পরা সাতজন ওই ব্যবসায়ীর ওপর হামলা করে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে লাল হেলমেট পরিহিত একজন তাকে পিস্তল দিয়ে গুলি করে। আহত ওই ব্যবসায়ী এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এ দুই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা নগরবাসীকে আতঙ্কিত করে তোলে। এর সঙ্গে গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া চুরি, ধর্ষণের একাধিক ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গভীর রাত পর্যন্ত সরকারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে সমালোচনা করেন অনেকেই।
এর মধ্যেই সারা দেশে ছিনতাই, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগের দাবিতে মধ্যরাতে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাবি। দিবাগত রাত ১টার দিকে হল পাড়া থেকে ঢাবি শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে টিএসসির দিকে যান। সেখানে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তারা সোমবার দুপুর ১টার মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের আলটিমেটাম দেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘সুশীলতার দিন শেষ, বিচার চায় বাংলাদেশ, \'এক দুই তিন চার, জাহাঙ্গীর গদি ছাড়\', \'জুলাই রক্তের দাম চাই, নিরাপদ বাংলাদেশ চাই\'সহ নানা স্লোগান দেন।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ঢাবি শিক্ষার্থী সাকিব আহমেদ বলেন, দেশে চাঁদাবাজরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তার অর্থ, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না। আজ রাজু ভাস্কর্য থেকে ঘোষণা দিতে চাই, সোমবার দুপুর ১টার মধ্যে যদি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পদত্যাগ না করেন, আমরা মাঠপর্যায়ে ব্যবস্থা নেব। তারা প্রত্যেকে ছয় মাস ধরে কী করেছেন, তার হিসাব আমাদের দিতে হবে।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা দিবাগত রাত ২টায় গণমাধ্যম কর্মীদের বার্তা দেন, রাত আড়াইটা থেকে ৩টার মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা \'জরুরি সংবাদ সম্মেলন\' করবেন। পরে ৩টার দিকে নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা সার্বিক পরিস্থিতির জন্য জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ও তাদের \'দোসর\'দের দায়ী করেন। বলেন, তারাই দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা করছে।
অপরাধীদের \'ঘুম হারাম\' করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমরা যেভাবে হোক, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিহত করব। দিনে-রাতে যেখানে প্রয়োজন হবে, আমাদের বাহিনী সেখানে যাবে এবং এসব প্রতিহত করবে। আওয়ামী দোসর যারা এসব কাজ করছে, তাদের আমি ঘুম হারাম করে দেবো।
আজ সোমবার থেকেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির \'নিশ্চিত উন্নতি\' হবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমার বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়েছি, তারা টহল আরও বাড়াবে। আগামীকাল (সোমবার) থেকে যেন কোথাও কোনো অপরাধ না ঘটে, সেজন্য তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। বাহিনী কার্যকর কিছু করতে না পারলে তাদের বিরুদ্ধেও আমি অ্যাকশন নেব। তাই আপনারা (সাংবাদিক) দেশবাসীকে আশ্বস্ত করবেন, দিনে দিনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে এবং এটা অবনতি হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই।
ঢাবিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভের বিষয়েও সেই গভীর রাতে উপস্থিত সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। জবাবে উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর বলেন, আমার পদত্যাগের দাবি তো আজই প্রথম না। তারা যে কারণে আমার পদত্যাগ দাবি করে, আমি যদি সে বিষয়গুলো উন্নতি করে দিতে পারি.. তাহলে তো আর পদত্যাগের প্রশ্ন থাকছে না।