পাওনা টাকার দ্বন্দ্বে খুনের দায়ে ঠিকাদারের মৃত্যুদণ্ড

চার বছর আগে পাওনা টাকা নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার জেরে খুনের ঘটনায় এক ঠিকাদার ব্যবসায়ীকে মৃত্যুদণ্ড সাজা দিয়েছেন আদালত। ২০২০ সালের অক্টোবরে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ সিরাজাম মুনীরার আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ের সময় আবদুর রহমান আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মৃত্যুদণ্ড সাজাপ্রাপ্ত আসামি আব্দুর রহমান (৪০) গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থানার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। ঠিকাদারি ব্যবসায় যুক্ত তিনি।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, খুনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আব্দুর রহমানকে মৃত্যুদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। হত্যার পর লাশ গুমের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাসের সাজার আদেশ দিয়েছেন আদালত। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার আরেক আসামি নাছির উদ্দিন খালাস পেয়েছেন।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর বিকেলে চট্টগ্রামের পাহাড়তলি থানার অলঙ্কার মোড়সংলগ্ন আলিফ গলি এলাকায় বিজয় কুমার বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তির লাশ পাওয়া যায়। কর্কশিট ও পেপার দিয়ে মরদেহটি মোড়ানো ছিল।
বিজয়ের বাড়ি কুমিল্লায়। তিনি ইপিজেড থানার নেভি হাসপাতাল গেট এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। ইপিজেড থানার নেভি গেট ওয়েল ফেয়ার মার্কেটের নিচতলায় বিকাশ এজেন্ট বিজয়ের চাঁদনী এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড গিফট শপ নামের একটি দোকান ছিল।
বিজয়ের মরদেহ উদ্ধারের সপ্তাহখানেক ইপিজেড থানার সেলার্স কলোনি ২ নম্বর গেট এলাকার রংধনু স্কুল গলির বাসা থেকে আব্দুর রহমানকে (৪০) গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তার অফিস ছিল নেভী ওয়েল ফেয়ার মার্কেটেই। বিজয়ের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক ছিল।
তদন্তে বেরিয়ে আসে, প্রতিমাসে সাত হাজার টাকা লাভ হিসাবে দেড় লাখ টাকা আব্দুর রহমানকে ঋণ দিয়েছিলেন বিজয়। আব্দুর রহমান ঠিকমতো টাকা দিতে না পারায় দুজনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়। ২০২০ সালের ১৪ অক্টোবর আব্দুর রহমান টাকা পরিশোধের কথা বলে বিজয়কে তার প্রতিষ্ঠানে ডেকে নেন। সেখানে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে আব্দুর রহমান ধাক্কা দিলে বিজয় মাটিতে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যান।
ওই সময় গলায় ইন্টারনেটের তার পেচিয়ে বিজয়কে হত্যা করা হয়। পরদিন সকালে বিজয়ের লাশ বস্তার ভেতরে করে কর্কশিট ও পেপার মুড়িয়ে অলঙ্কার মোড়সংলগ্ন আলিফ গলিতে ফেলে দিয়ে আসেন আব্দুর রহমান ও তার কর্মচারী নাছির।
এ ঘটনায় বিজয়ের ভাই সঞ্জয় কুমার বিশ্বাস বাদী হয়ে নগরীর পাহাড়তলী থানায় হত্যা মামলা করেন। তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ১০ এপ্রিল আদালতে অভিযোগ পত্র দেয় পুলিশ। ২০২২ সালের ২০ এপ্রিল দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করলে বিচারকাজ শুরু হয়। মামলায় ১৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত আব্দুর রহমানকে মৃত্যুদণ্ড সাজা দেন।