ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
একটু অসাবধানতা বা অসতর্কতায় শেষ হয়ে যেতে পারে সবকিছু। প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় উপাদান আগুন, যা কখনো কখনো হতে পারে মৃত্যুর বড় কারণ। আগুনে ছাই হতে পারে আপনার সম্পদ, সহায়-সম্বল এবং মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু। তাই আগে-পরে সাবধানতা অবলম্বন করাই আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়।
অনেক সময় আগুন লেগে যাওয়ার পর তাড়াহুড়ায় বা কিছু ভুলের কারণে ঘটতে পারে হতাহতের ঘটনা। কঠিন পরিস্থিতিতে বুদ্ধি কাজ করে না অনেক সময়। তাই অন্যের বা আপনার অসতর্কতায় আগুন লেগে গেলে যতটা সম্ভব মাথা ঠাণ্ডা রেখে পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে হয়তো বেঁচে থাকা সম্ভব, ক্ষতি কমতে পারে। তবে মনে রাখবেন, যে আগুন আপনার পক্ষে নেভানো সম্ভব নয়, তা নেভাতে যাবেন না।
দেশে গত নয় বছরে কমপক্ষে এক লাখ ৯০ হাজারের বেশি অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেছে, যাতে হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ১১ ও ১২ এপ্রিল ঈদের ছুটিতে দেশে এক ডজনের বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
আগুন যাতে না লাগে সেজন্য সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। এরপরও যদি আগুন লেগে যায়, তাহলে সতর্কতার সঙ্গে তা নেভানো এবং নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করতে হবে।
হঠাৎ আগুন লাগলে কোন কাজগুলো করবেন, কোনগুলো করবেন না
বিচলিত না হয়ে শান্ত থাকুন
কারও কথা শুনে বিচলিত না হয়ে প্রথমে বোঝার চেষ্টা করুন সত্যিই আগুন লেগেছে কি না। পরিস্থিতি যতটা শান্ত রাখা যায়, বিপদ থেকে মুক্তির সম্ভাবনা তত বেশি বাড়ে। আগুনের পরিমাণ কম থাকলে দ্রুত অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করে তা নিভিয়ে ফেলুন। সতর্কতার অংশ হিসেবে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা শিখে রাখুন। এটা প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব।
বৈদ্যুতিক আগুনে পানি দেবেন না
বৈদ্যুতিক লাইনে, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি বা রাসায়নিক দ্রব্য থেকে আগুন লাগলে তাতে পানি দেওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে বহনযোগ্য কার্বন ডাই-অক্সাইড বা ড্রাই কেমিক্যাল পাউডার এক্সটিংগুইশার ব্যবহার করুন। না পেলে শুকনো বালু ব্যবহার করুন।
তেলের আগুনে পানি বিপজ্জনক
তেল–জাতীয় পদার্থ থেকে লাগা আগুনে পানি ব্যবহার করা বিপজ্জনক। বহনযোগ্য ফোম–টাইপ ফায়ার এক্সটিংগুইশার,শুকনো বালু, ভেজা মোটা কাপড় বা চটের বস্তা দিয়ে চাপা দিন। এ ধরনের আগুনের ওপর বেকিং সোডা বা লবণ ঢেলে দেওয়ার চেষ্টা করুন।
রান্নার পাত্রে পানি ঢালবেন না
আগুন যদি রান্না করার পাত্রে সূত্রপাত হয়, তাহলে তা ঢাকনা দিয়ে দ্রুত ঢেকে দিন। জ্বলতে থাকা কড়াইয়ে পানি ঢালবেন না বা ফায়ার এক্সটিংগুইশার ব্যবহার করবেন না।
গায়ে আগুন: দৌঁড় না দিয়ে গড়াগড়ি
আপনার কাপড়ে আগুন ধরে গেলে ভুলেও দৌঁড় দেবেন না। কারণ বাতাসে আগুন আরও বেশি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তাই পোশাকে আগুন লাগলে যত দ্রুত সম্ভব মাটিতে শুয়ে পড়ুন। গড়িয়ে গড়িয়ে যেদিকে যেতে চান সেদিকে যান। দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে সামনে পেছনে গড়াগড়ি করতে থাকুন, যতক্ষণ না আগুন নিভে যায়। কাপড় দিয়ে নাক ঢাকুন, হাতের কাছে পানি থাকলে কাপড় ভিজিয়ে নিন।
ধোঁয়ার ভেতর মুখ ঢেকে বের হবেন
ধোঁয়ার ভেতরে মুখ না ঢেকে বের হবেন না। হেঁটেও বের হবেন না। যদি পুরো বাড়ি ঘন কালো ধোঁয়ায় ভরে যায়, তবে নিচু হয়ে বা হামাগুড়ি দিয়ে অথবা গড়াতে গড়াতে বের হতে হবে। মুখ সম্পূর্ণ ঢেকে ধোঁয়ার নিচ দিয়ে বের হয়ে আসতে হবে। নইলে ধোঁয়ার বিষাক্ত গ্যাস চোখে-মুখে ঢুকে গিয়ে বিপদ বাড়তে পারে। ধোঁয়া শ্বাসের সঙ্গে ভেতরে ঢুকলেই বিপদ আসে, শ্বাসনালি পুড়ে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে।
সিঁড়ি বিপজ্জনক হলে ভরসা বারান্দা বা জানালা
ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন পথ পরিহার করুন। সিঁড়ি দিয়ে নামা বিপজ্জনক হলে বারান্দা বা জানালার কাছে চলে যান, এতে হাতে বেশি সময় পাওয়া যায়।
সিঁড়িতে ধোঁয়া দেখতে পেলে ওপরে উঠবেন না, ছাদে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। ধোঁয়া বাতাসের চেয়ে হালকা, তাই তা দ্রুত ওপরের দিকে ওঠে। ধোঁয়ার ভেতর দিয়ে যেতে বাধ্য হলে উপুড় হয়ে বা হামাগুড়ি দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করবেন। ধোঁয়া ওপরে ওঠে বলে নিচের বাতাসে অক্সিজেন বেশি থাকে।
দামি কিছু রক্ষায় সময়ক্ষেপণ করবেন না
আগুন যদি অনেকটা ছড়িয়ে যায় তাহলে, নেভানো সহজ নাও হতে পারে। এ ক্ষেত্রে দ্রুত ভবন ত্যাগ করুন। কারণ আগুন ছড়িয়ে পড়লে বের হওয়া সুযোগ নাও পেতে পারেন। আগুন লেগে গেলে দামি কিছু বাঁচাতে গিয়ে সময়ক্ষেপণ করবেন না। এ সময় এক সেকেন্ড সময়ও মূল্যবান। মনে রাখবেন, সবচেয়ে দামি হলো নিজের জীবন, সবার আগে সেটি রক্ষা করতে হবে। নিজে এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে দ্রুত নিরাপদে বের হয়ে আসুন।
বাতাস চলাচলের পথ বন্ধ করেন
আপনি যদি ঘরের মধ্যে বন্দি হয়ে পড়েন তাহলে ডাস্ট টেপ, ভেজা তোয়ালে বা কাপড় দিয়ে দরজা ও তার আশেপাশের সব ফাঁকা জায়গা ও বাতাস চলাচলের পথ বন্ধ করে দেবেন।
কাঁচের জানালা-দরজা ভেঙে ফেলুন
ভবন থেকে বের হওয়ার রাস্তা খুঁজে পেলে ভেজা রুমাল বা কাপড় নাকে–মুখে পেঁচিয়ে আশপাশে কাঁচের জানালা, দরজা থাকলে তা ভেঙে বাতাস চলাচলের উপযোগী করে নিতে হবে। এতে করে ধোঁয়া বাইরে চলে যাবে।
উজ্জ্বল রঙের কাপড় দেখাতে থাকবেন
জানালার বাইরে উজ্জ্বল রঙের কাপড় ঝুলিয়ে দিন এবং নাড়াচাড়া করতে থাকুন যাতে অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা বুঝতে পারেন আপনি ভেতরে আছেন।
ধোঁয়ায় কিছু দেখা না গেলে ও একাধিক সদস্য থাকলে একজনের পেছনে আরেকজন হামাগুড়ি দেবেন, একে–অন্যের কাপড় বা পা ধরে এগোবেন।
চিকিৎসা নিতে দেরি করবেন না
আগুন না নেভা পর্যন্ত বাড়ির ভেতর আবার ঢোকার চেষ্টা করবেন না। সামান্য আহত হলেও চিকিৎসা নিতে অবহেলা করবেন না। তাই আহত হয়ে থাকলে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছানোর ব্যবস্থা নিতে হবে তখনই।
পূর্বপ্রস্তুতি থাকতে হবে
হঠাৎ আগুন লাগলে কী করবেন তার পূর্বপ্রস্তুতি থাকতে হবে। দরজা, জানালা, সিঁড়ির অবস্থান ও দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার বিকল্প কোনো রাস্তা আগে থেকেই নির্দিষ্ট করে রাখতে হবে। বাড়ির সবাইকে এবং অফিসের সহকর্মীদের এ বিষয়ে জানিয়ে রাখুন।
সুইচ বোর্ডের কাছে দাহ্য কিছু রাখবেন না
বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে আগুন লাগলে প্রথমেই মূল সুইচ বন্ধ করে দিন। বৈদ্যুতিক সুইচ বোর্ড বা মাল্টিপ্লাগের আশপাশে কাগজপত্র বা এ ধরনের জিনিস রাখবেন না। টিভি, ফ্রিজ, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, মুঠোফোন চার্জার ইত্যাদি বৈদ্যুতিক প্লাগে লাগিয়ে রেখে দেবেন না। কাজ শেষ হলে সুইচ বন্ধ করে প্লাগ থেকে খুলে রাখুন।
সিলিন্ডার ব্যবহারে সতর্ক হবেন
আজকাল যেসব বাড়িতে গ্যাসের সংযোগ নেই তারা বাসায় সিলিন্ডারে গ্যাস ব্যবহার করেন। সিলিন্ডারগুলো যথেষ্ট নিরাপদভাবে তৈরি করা হলেও এর অসতর্ক ব্যবহার আগুন ধরার বড় কারণ।
ঘরে ঘরে বিশেষ করে চুলার আশপাশে সিলিন্ডার না রেখে আবাসিক ভবনের নিচে সব সিলিন্ডারগুলো একসাথে রাখা নিরাপদ।
সিলিন্ডার রাখার জায়গা পরিষ্কার ও শুকনো রাখতে হবে। আশেপাশে যেন কোনো দাহ্য পদার্থ বা বিদ্যুতের লাইন না থাকে।
কিছু করণীয়
কোনো একটি ভবনে আগুন লাগার পর সেটি ছড়িয়ে পড়তে কিছুটা হলেও সময় লাগে। আগুন লাগার প্রথম দশ মিনিটকে বলা হয় প্লাটিনাম আওয়ার। অর্থাৎ দমকল কর্মীকে খবর দেয়ার পর তাদের পৌঁছানো পর্যন্ত সময়।
এই সময়ের মধ্যে যদি অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা দিয়ে সেটি নিভিয়ে ফেলা যায় বা অন্তত নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় তাহলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।
* গ্যাসের চুলা জ্বালানোর আগে অবশ্যই রান্না ঘরের দরজা-জানালা খুলে নিন।
* বাসা–বাড়িতে বা বাণিজ্যিক স্থানে রান্নার পর অবশ্যই গ্যাসের চুলা বন্ধ করতে হবে। ফুঁ দিয়ে চুলা না নিভিয়ে গ্যাসের চাবি বন্ধ করতে হবে।
* ছোট বাচ্চাদের আগুন নিয়ে খেলা থেকে বিরত রাখুন, তাদের হাতের কাছ থেকে দিয়াশলাই বা লাইটার দূরে রাখুন।
* আগুন বাড়তে পারে-এমন স্থানে মোমবাতি, মশার কয়েল, কুপি এবং খোলা বৈদ্যুতিক সংযোগ যেন না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন। খুব দরকার হলে সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করুন। কখনই মোমবাতি বা কুপি জ্বালিয়ে ঘুমিয়ে পড়বেন না।
* শীতকালে আগুন পোহানো থেকে সাবধান। সম্ভব হলে এটি এড়িয়ে চলা, মানুষকে সচেতন করা।
* নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ লাগানোর সময় নিম্নমানের পণ্য লাগানো থেকে বিরত থাকুন। দক্ষ বৈদ্যুতিক মিস্ত্রির সহায়তা নিন। অতি পুরানো বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বা তার বদলে ফেলুন।
* বাড়ি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নি নিরাপত্তার জন্য অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখুন। সেটা সম্ভব না হলে কয়েক বালতি বালু মজুত রাখুন। অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র রাখলে তা নিয়মিত পরীক্ষা করুন।
* বাসা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বৈদ্যুতিক সংযোগের মেইন সুইচ খোলা জায়গায় রাখুন। যাতে করে আগুনের ঘটনা ঘটলে সহজে মেইন সুইচ বন্ধ করা যায়।
* বহুতল ভবসে বসবাস বা অবস্থানের আগে সাবধান হবেন। ইমার্জেন্সি এক্সিট (নিরাপদে ভবন থেকে বের হওয়ার বিকল্প পথ) আছে কিনা দেখুন। কেন্দ্রীয়ভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থার পাশাপাশি থাকতে হবে বহনযোগ্য অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র।
* ভবনে আগুন লাগলে কোনোভাবেই লিফট ব্যবহার করা যাবে না।
* যত দ্রুত সম্ভব ফায়ার সার্ভিসে খবর দিতে হবে। ফায়ার সার্ভিস হটলাইন: ১৬১৬৩ ফায়ার সার্ভিস কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ: ২২৩৩৫৫৫৫৫ ফায়ার স্টেশন অথবা কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ফোন করুন। আপনার আশপাশের ফায়ার স্টেশনের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে রাখুন।
*প্রয়োজনে জরুরি পরিষেবা ৯৯৯-এ কল করুন।
সূত্র : ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সার্ভিস ৯৯৯ এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং নির্ভরযোগ্য কিছু প্রকাশনা।
একটু অসাবধানতা বা অসতর্কতায় শেষ হয়ে যেতে পারে সবকিছু। প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় উপাদান আগুন, যা কখনো কখনো হতে পারে মৃত্যুর বড় কারণ। আগুনে ছাই হতে পারে আপনার সম্পদ, সহায়-সম্বল এবং মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু। তাই আগে-পরে সাবধানতা অবলম্বন করাই আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়।
অনেক সময় আগুন লেগে যাওয়ার পর তাড়াহুড়ায় বা কিছু ভুলের কারণে ঘটতে পারে হতাহতের ঘটনা। কঠিন পরিস্থিতিতে বুদ্ধি কাজ করে না অনেক সময়। তাই অন্যের বা আপনার অসতর্কতায় আগুন লেগে গেলে যতটা সম্ভব মাথা ঠাণ্ডা রেখে পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে হয়তো বেঁচে থাকা সম্ভব, ক্ষতি কমতে পারে। তবে মনে রাখবেন, যে আগুন আপনার পক্ষে নেভানো সম্ভব নয়, তা নেভাতে যাবেন না।
দেশে গত নয় বছরে কমপক্ষে এক লাখ ৯০ হাজারের বেশি অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেছে, যাতে হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ১১ ও ১২ এপ্রিল ঈদের ছুটিতে দেশে এক ডজনের বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
আগুন যাতে না লাগে সেজন্য সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। এরপরও যদি আগুন লেগে যায়, তাহলে সতর্কতার সঙ্গে তা নেভানো এবং নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করতে হবে।
হঠাৎ আগুন লাগলে কোন কাজগুলো করবেন, কোনগুলো করবেন না
বিচলিত না হয়ে শান্ত থাকুন
কারও কথা শুনে বিচলিত না হয়ে প্রথমে বোঝার চেষ্টা করুন সত্যিই আগুন লেগেছে কি না। পরিস্থিতি যতটা শান্ত রাখা যায়, বিপদ থেকে মুক্তির সম্ভাবনা তত বেশি বাড়ে। আগুনের পরিমাণ কম থাকলে দ্রুত অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করে তা নিভিয়ে ফেলুন। সতর্কতার অংশ হিসেবে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা শিখে রাখুন। এটা প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব।
বৈদ্যুতিক আগুনে পানি দেবেন না
বৈদ্যুতিক লাইনে, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি বা রাসায়নিক দ্রব্য থেকে আগুন লাগলে তাতে পানি দেওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে বহনযোগ্য কার্বন ডাই-অক্সাইড বা ড্রাই কেমিক্যাল পাউডার এক্সটিংগুইশার ব্যবহার করুন। না পেলে শুকনো বালু ব্যবহার করুন।
তেলের আগুনে পানি বিপজ্জনক
তেল–জাতীয় পদার্থ থেকে লাগা আগুনে পানি ব্যবহার করা বিপজ্জনক। বহনযোগ্য ফোম–টাইপ ফায়ার এক্সটিংগুইশার,শুকনো বালু, ভেজা মোটা কাপড় বা চটের বস্তা দিয়ে চাপা দিন। এ ধরনের আগুনের ওপর বেকিং সোডা বা লবণ ঢেলে দেওয়ার চেষ্টা করুন।
রান্নার পাত্রে পানি ঢালবেন না
আগুন যদি রান্না করার পাত্রে সূত্রপাত হয়, তাহলে তা ঢাকনা দিয়ে দ্রুত ঢেকে দিন। জ্বলতে থাকা কড়াইয়ে পানি ঢালবেন না বা ফায়ার এক্সটিংগুইশার ব্যবহার করবেন না।
গায়ে আগুন: দৌঁড় না দিয়ে গড়াগড়ি
আপনার কাপড়ে আগুন ধরে গেলে ভুলেও দৌঁড় দেবেন না। কারণ বাতাসে আগুন আরও বেশি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তাই পোশাকে আগুন লাগলে যত দ্রুত সম্ভব মাটিতে শুয়ে পড়ুন। গড়িয়ে গড়িয়ে যেদিকে যেতে চান সেদিকে যান। দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে সামনে পেছনে গড়াগড়ি করতে থাকুন, যতক্ষণ না আগুন নিভে যায়। কাপড় দিয়ে নাক ঢাকুন, হাতের কাছে পানি থাকলে কাপড় ভিজিয়ে নিন।
ধোঁয়ার ভেতর মুখ ঢেকে বের হবেন
ধোঁয়ার ভেতরে মুখ না ঢেকে বের হবেন না। হেঁটেও বের হবেন না। যদি পুরো বাড়ি ঘন কালো ধোঁয়ায় ভরে যায়, তবে নিচু হয়ে বা হামাগুড়ি দিয়ে অথবা গড়াতে গড়াতে বের হতে হবে। মুখ সম্পূর্ণ ঢেকে ধোঁয়ার নিচ দিয়ে বের হয়ে আসতে হবে। নইলে ধোঁয়ার বিষাক্ত গ্যাস চোখে-মুখে ঢুকে গিয়ে বিপদ বাড়তে পারে। ধোঁয়া শ্বাসের সঙ্গে ভেতরে ঢুকলেই বিপদ আসে, শ্বাসনালি পুড়ে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে।
সিঁড়ি বিপজ্জনক হলে ভরসা বারান্দা বা জানালা
ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন পথ পরিহার করুন। সিঁড়ি দিয়ে নামা বিপজ্জনক হলে বারান্দা বা জানালার কাছে চলে যান, এতে হাতে বেশি সময় পাওয়া যায়।
সিঁড়িতে ধোঁয়া দেখতে পেলে ওপরে উঠবেন না, ছাদে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। ধোঁয়া বাতাসের চেয়ে হালকা, তাই তা দ্রুত ওপরের দিকে ওঠে। ধোঁয়ার ভেতর দিয়ে যেতে বাধ্য হলে উপুড় হয়ে বা হামাগুড়ি দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করবেন। ধোঁয়া ওপরে ওঠে বলে নিচের বাতাসে অক্সিজেন বেশি থাকে।
দামি কিছু রক্ষায় সময়ক্ষেপণ করবেন না
আগুন যদি অনেকটা ছড়িয়ে যায় তাহলে, নেভানো সহজ নাও হতে পারে। এ ক্ষেত্রে দ্রুত ভবন ত্যাগ করুন। কারণ আগুন ছড়িয়ে পড়লে বের হওয়া সুযোগ নাও পেতে পারেন। আগুন লেগে গেলে দামি কিছু বাঁচাতে গিয়ে সময়ক্ষেপণ করবেন না। এ সময় এক সেকেন্ড সময়ও মূল্যবান। মনে রাখবেন, সবচেয়ে দামি হলো নিজের জীবন, সবার আগে সেটি রক্ষা করতে হবে। নিজে এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে দ্রুত নিরাপদে বের হয়ে আসুন।
বাতাস চলাচলের পথ বন্ধ করেন
আপনি যদি ঘরের মধ্যে বন্দি হয়ে পড়েন তাহলে ডাস্ট টেপ, ভেজা তোয়ালে বা কাপড় দিয়ে দরজা ও তার আশেপাশের সব ফাঁকা জায়গা ও বাতাস চলাচলের পথ বন্ধ করে দেবেন।
কাঁচের জানালা-দরজা ভেঙে ফেলুন
ভবন থেকে বের হওয়ার রাস্তা খুঁজে পেলে ভেজা রুমাল বা কাপড় নাকে–মুখে পেঁচিয়ে আশপাশে কাঁচের জানালা, দরজা থাকলে তা ভেঙে বাতাস চলাচলের উপযোগী করে নিতে হবে। এতে করে ধোঁয়া বাইরে চলে যাবে।
উজ্জ্বল রঙের কাপড় দেখাতে থাকবেন
জানালার বাইরে উজ্জ্বল রঙের কাপড় ঝুলিয়ে দিন এবং নাড়াচাড়া করতে থাকুন যাতে অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা বুঝতে পারেন আপনি ভেতরে আছেন।
ধোঁয়ায় কিছু দেখা না গেলে ও একাধিক সদস্য থাকলে একজনের পেছনে আরেকজন হামাগুড়ি দেবেন, একে–অন্যের কাপড় বা পা ধরে এগোবেন।
চিকিৎসা নিতে দেরি করবেন না
আগুন না নেভা পর্যন্ত বাড়ির ভেতর আবার ঢোকার চেষ্টা করবেন না। সামান্য আহত হলেও চিকিৎসা নিতে অবহেলা করবেন না। তাই আহত হয়ে থাকলে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছানোর ব্যবস্থা নিতে হবে তখনই।
পূর্বপ্রস্তুতি থাকতে হবে
হঠাৎ আগুন লাগলে কী করবেন তার পূর্বপ্রস্তুতি থাকতে হবে। দরজা, জানালা, সিঁড়ির অবস্থান ও দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার বিকল্প কোনো রাস্তা আগে থেকেই নির্দিষ্ট করে রাখতে হবে। বাড়ির সবাইকে এবং অফিসের সহকর্মীদের এ বিষয়ে জানিয়ে রাখুন।
সুইচ বোর্ডের কাছে দাহ্য কিছু রাখবেন না
বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে আগুন লাগলে প্রথমেই মূল সুইচ বন্ধ করে দিন। বৈদ্যুতিক সুইচ বোর্ড বা মাল্টিপ্লাগের আশপাশে কাগজপত্র বা এ ধরনের জিনিস রাখবেন না। টিভি, ফ্রিজ, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, মুঠোফোন চার্জার ইত্যাদি বৈদ্যুতিক প্লাগে লাগিয়ে রেখে দেবেন না। কাজ শেষ হলে সুইচ বন্ধ করে প্লাগ থেকে খুলে রাখুন।
সিলিন্ডার ব্যবহারে সতর্ক হবেন
আজকাল যেসব বাড়িতে গ্যাসের সংযোগ নেই তারা বাসায় সিলিন্ডারে গ্যাস ব্যবহার করেন। সিলিন্ডারগুলো যথেষ্ট নিরাপদভাবে তৈরি করা হলেও এর অসতর্ক ব্যবহার আগুন ধরার বড় কারণ।
ঘরে ঘরে বিশেষ করে চুলার আশপাশে সিলিন্ডার না রেখে আবাসিক ভবনের নিচে সব সিলিন্ডারগুলো একসাথে রাখা নিরাপদ।
সিলিন্ডার রাখার জায়গা পরিষ্কার ও শুকনো রাখতে হবে। আশেপাশে যেন কোনো দাহ্য পদার্থ বা বিদ্যুতের লাইন না থাকে।
কিছু করণীয়
কোনো একটি ভবনে আগুন লাগার পর সেটি ছড়িয়ে পড়তে কিছুটা হলেও সময় লাগে। আগুন লাগার প্রথম দশ মিনিটকে বলা হয় প্লাটিনাম আওয়ার। অর্থাৎ দমকল কর্মীকে খবর দেয়ার পর তাদের পৌঁছানো পর্যন্ত সময়।
এই সময়ের মধ্যে যদি অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা দিয়ে সেটি নিভিয়ে ফেলা যায় বা অন্তত নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় তাহলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।
* গ্যাসের চুলা জ্বালানোর আগে অবশ্যই রান্না ঘরের দরজা-জানালা খুলে নিন।
* বাসা–বাড়িতে বা বাণিজ্যিক স্থানে রান্নার পর অবশ্যই গ্যাসের চুলা বন্ধ করতে হবে। ফুঁ দিয়ে চুলা না নিভিয়ে গ্যাসের চাবি বন্ধ করতে হবে।
* ছোট বাচ্চাদের আগুন নিয়ে খেলা থেকে বিরত রাখুন, তাদের হাতের কাছ থেকে দিয়াশলাই বা লাইটার দূরে রাখুন।
* আগুন বাড়তে পারে-এমন স্থানে মোমবাতি, মশার কয়েল, কুপি এবং খোলা বৈদ্যুতিক সংযোগ যেন না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন। খুব দরকার হলে সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করুন। কখনই মোমবাতি বা কুপি জ্বালিয়ে ঘুমিয়ে পড়বেন না।
* শীতকালে আগুন পোহানো থেকে সাবধান। সম্ভব হলে এটি এড়িয়ে চলা, মানুষকে সচেতন করা।
* নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ লাগানোর সময় নিম্নমানের পণ্য লাগানো থেকে বিরত থাকুন। দক্ষ বৈদ্যুতিক মিস্ত্রির সহায়তা নিন। অতি পুরানো বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বা তার বদলে ফেলুন।
* বাড়ি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নি নিরাপত্তার জন্য অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখুন। সেটা সম্ভব না হলে কয়েক বালতি বালু মজুত রাখুন। অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র রাখলে তা নিয়মিত পরীক্ষা করুন।
* বাসা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বৈদ্যুতিক সংযোগের মেইন সুইচ খোলা জায়গায় রাখুন। যাতে করে আগুনের ঘটনা ঘটলে সহজে মেইন সুইচ বন্ধ করা যায়।
* বহুতল ভবসে বসবাস বা অবস্থানের আগে সাবধান হবেন। ইমার্জেন্সি এক্সিট (নিরাপদে ভবন থেকে বের হওয়ার বিকল্প পথ) আছে কিনা দেখুন। কেন্দ্রীয়ভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থার পাশাপাশি থাকতে হবে বহনযোগ্য অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র।
* ভবনে আগুন লাগলে কোনোভাবেই লিফট ব্যবহার করা যাবে না।
* যত দ্রুত সম্ভব ফায়ার সার্ভিসে খবর দিতে হবে। ফায়ার সার্ভিস হটলাইন: ১৬১৬৩ ফায়ার সার্ভিস কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ: ২২৩৩৫৫৫৫৫ ফায়ার স্টেশন অথবা কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ফোন করুন। আপনার আশপাশের ফায়ার স্টেশনের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে রাখুন।
*প্রয়োজনে জরুরি পরিষেবা ৯৯৯-এ কল করুন।
সূত্র : ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সার্ভিস ৯৯৯ এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং নির্ভরযোগ্য কিছু প্রকাশনা।
তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীসহ দিবসটি আয়োজনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। একই সাথে এবছর দিবসটির প্রতিপাদ্য-‘সিবেড ম্যাপিং: এনাবলিং ওশান এ্যাকশন’- যার মাধ্যমে গভীর সমুদ্রের তলদেশের মানচিত্রায়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে, অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত হয়েছে বলে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস
১২ ঘণ্টা আগে২০২৫ সালে সুশৃঙ্খল ও সাবলীল হজ ব্যবস্থাপনার জন্য ধর্ম উপদেষ্টা সৌদি সরকারকে ধন্যবাদ জানান। তিনি এ বছরের হজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অননুমোদিত হজ পালন বন্ধকরণ, হাজীদেরকে যথাসময়ে নুসুক কার্ড সরবরাহ, মাশায়ের এলাকায় ঝামেলাহীন পরিবহন সেবা ও নিবিড় স্বাস্থ্যসেবা প্রদান এবং মৃত্যুহার হ্রাসে কার্যকর ব্যবস্থা গ্
১৩ ঘণ্টা আগেএ প্রস্তাবগুলোর মধ্যে সংবিধান সংশ্লিষ্ট ও বড় সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্যের জন্য প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কাজ করছে। তবে যেসব সংস্কার প্রস্তাব প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় নিজ উদ্যোগেই বাস্তবায়ন করতে পারে, সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশনা দিয়েছেন।
১৩ ঘণ্টা আগে