২৪ ঘণ্টায় মিলবে পাকিস্তানের ভিসা: হাইকমিশনার

বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিক পাকিস্তানে যাওয়ার জন্য অনলাইনে আবেদন করলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভিসা পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিন্তানের হাই কমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ। এক্ষেত্রে স্টুডেন্ট ভিসা, ট্যুরিস্ট ভিসা, বিজনেস ভিসা কোনোরকম ফি ছাড়াই পাওয়া যাবে।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালনা পর্ষদ ও আমদানি-রপ্তানিকারকদের মধ্যে দু’দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসার বিষয়ক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, এছাড়াও দুই বন্ধুপ্রতীম দেশের ব্যবসায়ীসহ জনগণের মধ্যে যোগাযোগ আরও সহজতর করার জন্য আগামী আগস্টের মধ্যে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি আকাশপথে বিমান চলাচল পুনরায় শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পাকিস্তানি এই কূটনীতিক বুধবার রংপুর নগরীর চেম্বার ভবনের আরসিসিআই মিলনায়তনে রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (আরসিসিআই) পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, রংপুর বিভাগের আমদানিকারক, রফতানিকারক, ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতিদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন।
এর আগে, স্বাগত বক্তব্যে আরসিসিআই সভাপতি মো. আকবর আলী রংপুরে আগমনের জন্য পাকিস্তানি হাইকমিশনার এবং তার সফরসঙ্গীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভকামনা জানান।
তিনি বলেন, পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে খেজুর, কমলা এবং অন্যান্য ফল এবং কৃষিপণ্য আমদানি করার এবং বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য, পোশাক, ওষুধ এবং চামড়াজাত পণ্য পাকিস্তানে রফতানি বৃদ্ধির বিশাল সুযোগ রয়েছে।
আরসিসিআই সভাপতি বলেন, বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে যত পণ্য রফতানি হয় তার চেয়ে ১০ গুণ বেশি মূল্যের পণ্য বাংলাদেশে রফতানি করে পাকিস্তান। বাংলাদেশ মূলত কাঁচা পাট, ওষুধ, হাইড্রোজেন পারক্সাইড, চা এবং তৈরি পোশাক ইত্যাদি পাকিস্তানে রফতানি করে। পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় তুলা। এছাড়াও, সিমেন্টের জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কাঁচামালও আসে পাকিস্তান থেকে।
তিনি বলেন, যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি ঘটেছে, কৃষি, বস্ত্র, ওষুধ, আইসিটিসহ অনেক সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র এখনও অনাবিষ্কৃত রয়েছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা জ্বালানি, শিক্ষা, প্রযুক্তি, মানবসম্পদ উন্নয়ন, গবেষণা এবং উদ্ভাবনের মতো খাতে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে পারেন।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও জোরদার করার জন্য রংপুর বিভাগে বিনিয়োগ এবং কৃষিভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য পাকিস্তানি শিল্পপতিদের প্রতি উদার আবেদন জানান আরসিসিআই সভাপতি।
পরে, রংপুর বিভাগের রফতানিকারক, আমদানিকারক এবং শিল্পপতিরা দু’দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বাণিজ্যের সম্ভাব্য ক্ষেত্র সম্পর্কে এবং বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো সমাধানের জন্য পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূতকে অবহিত করেন।
জবাবে পাকিস্তানি হাইকমিশনার বলেন, পাকিস্তানে পাট ও পাটজাত পণ্যের মতো অনেক বাংলাদেশী পণ্যের ভালো চাহিদা রয়েছে। তিনি বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের পাকিস্তানে তাদের পণ্যের চাহিদা যাচাই করার জন্য অনুরোধ করেন।
তিনি বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা ভবিষ্যতে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণ করুক যাতে করে তারা পাকিস্তানে তাদের পণ্যের বাজার তৈরি করতে পারেন।
বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক পারস্পরিক কল্যাণের ভিত্তিতে ঊর্ধ্বমুখী গতিতে উন্নত হচ্ছে এবং উভয় দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য ব্যবসা, বাণিজ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য এবং পর্যটন ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরো জোরদার করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা আশাবাদী যে বাংলাদেশ-পাকিস্তান এবং জনগণের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ হবে এবং আমরা বর্তমান এবং ভবিষ্যতে উভয় জাতির পারস্পরিক স্বার্থে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চাই।
আরসিসিআইয়ের প্রাক্তন এবং বর্তমান পরিচালকগণ, জামায়াতে ইসলামী রংপুর জেলা আমির গোলাম রব্বানী এবং মহানগর আমির এটিএম আজম খান, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতা, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, পেশাজীবী এবং সাংবাদিকরা মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন।