সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধের দাবি
বাংলাদেশে সাংবাদিক নির্যাতন ও গণহত্যা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সাংবাদিক ও গণহত্যার আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করেন তারা।
বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সরকারবিরোধী বলে পরিচিত বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এসব দাবি জানানো হয়।
বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, কবি আবদুল হাই শিকদার, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমদ, সিনিয়র সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজী, আবু সালেহ আকন, সদরুল হাসান, কাজিম রেজা প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশ পরিচালনা করেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খান। বিক্ষোভ সমাবেশে ১৭ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়।
বিক্ষোভ সমাবেশে রুহুল আমিন গাজী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত দু:সময় অতিক্রম করছে। পাখির মতো গুলি করে মানুষ হত্যা করছে। গত এক সপ্তাহে ৪ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। ছাত্র ও সাধারণ মানুষ হত্যা করা হয়েছে শত শত। স্বাধীনতার ৫৩ বছরে দেশের মানুষ এমন অসহায়বোধ করেনি।
তিনি বলেন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা সমস্যা সমাধানে মনোযোগ না দিয়ে দলীয় নেতার মতো বক্তব্য রাখছেন। সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রী এক বক্তব্য দিয়ে আন্দোলনকে উত্তপ্ত করে দিলেন। উনাদের দলের সাধারন সম্পাদক বললেন আন্দোলনকারীদের মোকাবিলায় ছাত্রলীগ যথেষ্ট। এরপর পুরো দেশ দেখেছে ছাত্রলীগের হামলা। তিনি বলেন, এসব হামলার দায় সরকার এড়াতে পারে না। এই দায় নিয়ে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, আজ অনেক সাংবাদিক ও ছাত্ররা গুলিবিদ্ধ। তারা হাসপাতালে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। তাদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। নিহতদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। গত ক’দিন ধরে যে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে এ হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও খুনিদের চিহ্নিত করতে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করে সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, এ নিবির্চারে মানুষ হত্যা মেনে নেয়া যায় না।
এম এ আজিজ বলেন, সরকার আজ আমাদের সমাবেশে মাইক লাগাতে দেয়নি। সারাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে। সংবাদ মাধ্যমগুলোতে সাংবাদ প্রকাশ করতে দেয়া হচ্ছে না। তার মানে সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। এই সরকার জনগণের কন্ঠ রোধ করে, হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।
বিক্ষোভ সমাবেশে সাংবাদিকদের ১৭ দফা উপস্থাপন করে বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী। ১৭ দফার মধ্যে রয়েছে : ১. সাংবাদিক হত্যা নির্যাতন বন্ধ করতে হবে ২. সম্প্রতি ৪ জনসহ গত ১৬ বছরে ৬৬ জন সাংবাদিক খুন হয়েছে, এসব খুনের বিচার করতে হবে। ৩. কোটা বিরোধী আন্দোলনে নিহতদের ক্ষতিপূরণ ও আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে ৪. সাংবাদিক সুরক্ষা আইন করতে হবে ৫. বন্ধ মিডিয়া খুলে দিতে হবে ৬. সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিরোধী সকল কালাকানুন বাতিল ৭. অবিলম্বে ইন্টারনেট চালু করতে হবে ৮. গণমাধ্যমের উপর থেকে সকল প্রকার চাপ তুলে নিতে হবে। গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে ৯. সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মামলা তুলে নিতে হবে ১০. গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন বৈষমস্য দূর করতে হবে। ভুয়া সাকুলেশন দেখিয়ে বিজ্ঞাপনের টাকা লুট বন্ধ করতে হবে ১১. অবিলম্বে শিক্ষাঙ্গণ খুলে দিতে হবে ১২. আন্দোলনরত ছাত্রদের উপর বল প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। প্রতিবাদকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে ১৩. গণহত্যা ও গণগ্রেফতার বন্ধ করতে হবে এবং কোটা বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যারা গণহত্যা চিালিয়ে তাদের বিচার করতে ১৪. মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে ১৫. নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উপর বিচারিক হয়রানি বন্ধ করতে হবে ১৬. গুরুতর অসুস্থ সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মানবিক কারণে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণ করতে হবে ১৭. একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে দেশে গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায় বিচার, মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতা, ভোটাধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে হবে।