দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার অঙ্গীকার প্রতিফলিত হয়েছে: পাকিস্তান\n
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক, গাজায় ইসরায়েলি হামলার নিন্দা, এমনকি জম্মু ও কাশ্মির ‘ভারতের অবৈধ দখলে’ রয়েছে দাবি করে এর সমাধানের মতো ইস্যু নিয়ে ঢাকার বৈঠকে আলোচনার কথা বলা হয়। তবে মুক্তিযুদ্ধে ‘গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাওয়া’ কিংবা ‘বকেয়া অর্থে’র বিষয়ে কিছু বলা নেই এই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচের সঙ্গে বৈঠক শেষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন জানিয়েছিলেন, আলোচনায় অমীমাংসিত বিষয়ের মধ্যে ছিল ‘আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন, অবিভক্ত সম্পদের সুষম বণ্টন, ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পাঠানো বৈদেশিক সাহায্য তহবিল হস্তান্তর এবং ১৯৭১ সালে তৎকালীন পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে জনসমক্ষে ক্ষমা চাওয়া।’
জসীম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের আগের একটি হিসাবে ৪০০ কোটি ডলার এবং আরেকটা হিসাবে ৪৩২ কোটি ডলার পাওনা রয়েছে পাকিস্তানের কাছে। এ হিসাবগুলোর কথা আলোচনায় বলেছি।
এসব ইস্যুতে একটি শব্দও ব্যয় করেনি পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অতীতের ইস্যুর চেয়ে ভবিষ্যতের সম্ভাবনার দিকেই বেশি নজর দিয়েছে ইসলামাবাদ। তাদের ভাষ্য, দেশ দুটির সাংস্কৃতিক সম্পর্ক এবং অভিন্ন ইতিহাস ও জনআকাঙ্ক্ষার কথা এসেছে আলোচনায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৈঠকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত ও কৌশলগত সহযোগিতা নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করেছে দুই পক্ষ। নিউইয়র্ক, কায়রো, সামোয়া ও জেদ্দার সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের কিছু বৈঠকের আলাপ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করতে সহায়তা করেছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
সম্পর্কের গতিশীলতা ধরে রাখতে নিয়মিত প্রাতিষ্ঠানিক সংলাপ, ঝুলে থাকা চুক্তি দ্রুত চূড়ান্ত করা এবং বাণিজ্য, কৃষি, শিক্ষা ও কানেক্টিভিটির (সংযোগ) ক্ষেত্রে সহায়তা বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে ইসলামাবাদ।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দেশটির কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলাদেশিদের পড়ালেখার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশও প্রস্তাব দিয়েছে মৎস্য ও সামুদ্রিক বিষয়ে কারিগরি প্রশিক্ষণের। সংযোগকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথাও বলেছে দেশ দুটি।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, করাচি ও চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরুর বিষয়টিকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি আকাশপথে ফের সরাসরি যোগাযোগ চালুর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সন্তোষ জানানো হয়েছে ভ্রমণ ও ভিসা সহজী করার প্রক্রিয়ায় অগ্রগতির ব্যাপারে।
বৈঠকে সার্ক ও কাশ্মির প্রসঙ্গে আলাপ হয়েছে বলেও জানিয়েছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, উভয় দেশ সার্ক পুনরুজ্জীবনের প্রয়োজনীয়তার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে। পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশকে ভারতের অবৈধ দখলে থাকা জম্মু ও কাশ্মিরের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেছেন। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব এবং কাশ্মিরি জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী দ্রুত এর সমাধানের ওপর জোর দেন তিনি।
ফিলিস্তিনি এলাকা, বিশেষ করে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন ও গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানিয়েছে দুই দেশ। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচের সাক্ষাতের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
দুই দেশের মধ্যে পরবর্তী ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) ২০২৬ সালে ইসলামাবাদে হবে উল্লেখ করে শেষ করা হয়েছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্কে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে পূর্ব পাকিস্তান পর্ব থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও সেই ইতিহাস দুই দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও দ্বিপাক্ষিক কূটনীতির ক্ষেত্রে বারবার আলোচনায় এসেছে। এসব কারণে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্ক কখনোই সরলরেখায় চলেনি। আওয়ামী লীগের গত তিন মেয়াদে তা একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল।
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশ দুটির মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক নতুন করে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা দৃশ্যমান হতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার ঢাকায় আসেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ।