জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে ক্যান্সার নির্ণয় করবে আইসিডিডিআর,বি

দেশে জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে ক্যান্সার নির্ণয়ের সেবা চালু করতে যাচ্ছে আইসিডিডিআর,বি। এই সেবায় সংস্থাটির জিনোম সেন্টার প্রশিক্ষিত বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে দুই সপ্তাহের মধ্যেই টেস্টের রিপোর্ট দেবে। এতে দেশে বসেই ক্যান্সার বা সম্ভাব্য ক্যান্সার রোগীরা দ্রুত অত্যাধুনিক এই পরীক্ষার রিপোর্ট পাবেন। এতে ক্যান্সার চিকিৎসাও দ্রুত শুরু করা যাবে।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইসিডিডিআর,বি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) থেকে এই সেবা তাদের ডায়াগনস্টিক সেবার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। বাংলাদেশের জন্য একে সঠিক ও সহজলভ্য ক্যান্সার চিকিৎসায় বড় অগ্রগতি বলে অভিহিত করেছে সংস্থাটি।
দেশের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের দীর্ঘদিনের চাওয়া ছিল, বিদেশে না পাঠিয়ে দেশেই যেন অত্যাধুনিক ও নির্ভরযোগ্য জিনোম সিকোয়েন্সিংভিত্তিক ক্যান্সার পরীক্ষা চালু করা যায়। বর্তমানে অনেক রোগীকে ক্যান্সার পরীক্ষার জন্য বিদেশে নমুনা পাঠাতে হয় ও রিপোর্টের জন্য চার থেকে পাঁচ সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়, যা অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। অনেক ক্ষেত্রে ফলাফল নির্ভরযোগ্যও হয় না। বহুল প্রতীক্ষিত এই সেবা এখন মিলবে দেশেই।
আইসিডিডিআর,বি বলছে, জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের রিপোর্টে ক্যান্সার আক্রান্তদের চিকিৎসায় সম্ভাব্য কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতির নির্দেশনাও যুক্ত থাকবে। ফলে বাংলাদেশের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের দীর্ঘদিনের চাহিদা পূরণ করবে বলা আশা করা যায়।
আইসিডিডিআর,বির সংক্রামক রোগ বিভাগের সিনিয়র বিজ্ঞানী ও ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র পরিচালক ড. মো. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে নির্ভুল ও সহজলভ্য ক্যান্সার নির্ণয়ে এটি একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। আমাদের প্রতিশ্রুতি— ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ও রোগীদের জন্য সময়োপযোগী ও নির্ভরযোগ্য ফলাফল দেওয়া, যা ক্যান্সার চিকিৎসায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশাবাদী।
প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, নির্ভুলভাবে ক্যান্সার নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এর প্রয়োজনীয়তা আমরা উপেক্ষা করতে পারিনি। আমাদের লক্ষ্য, ক্যান্সারের মতো জটিল সমস্যার গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার ফলাফলের জন্য যেন কারও সপ্তাহের পর সপ্তাহ উদ্বিগ্ন হয়ে অপেক্ষা করতে বা বিদেশে যেতে না হয়।
ড. তাহমিদ আরও বলেন, আমরা দেশের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, রোগীদের চিকিৎসায় এই সেবাটির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করুন। এটি শুধু একটি সেবা নয়, এটি ক্যান্সার চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসক ও রোগীসহ সব পক্ষের জন্য আশা, আস্থা ও নির্ভুল ফলাফল প্রদানের একটি প্রতিশ্রুতি।
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (সাবেক বিএসএমএমইউ) ২০২৫ সালের একটি গবেষণা অনুযায়ী, দেশে প্রতি এক লাখ মানুষে ১০০ জনেরও বেশি ক্যান্সারে আক্রান্ত। স্তন, মুখগহ্বর, পাকস্থলী, গলা ও জরায়ু মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি। সঠিক পরীক্ষা ও প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার ধরা পড়লে সঠিক চিকিৎসা সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাকে বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে।
আইসিডিডিআর,বি জানিয়েছে, জিনোম সেন্টারে স্তন, ফুসফুস, কোলন, ডিম্বাশয় ও রক্তের ক্যান্সারের জিনোম সিকোয়েন্সিংভিত্তিক অত্যাধুনিক পরীক্ষা করা হবে। রোগীদের সুবিধার্থে মহাখালী, মিরপুর, মতিঝিল, ধানমন্ডি, উত্তরা, নিকেতন, গুলশান ও বারিধারায় অবস্থিত আইসিডিডিআর,বি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও বুথে নমুনা সংগ্রহ করা হবে।