top ad image
top ad image
home iconarrow iconখবরাখবর

সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন

স্থানীয় সরকারে অভিন্ন আইন-এক তফসিলে নির্বাচনসহ গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ ৫১টি

স্থানীয় সরকারে অভিন্ন আইন-এক তফসিলে নির্বাচনসহ গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ ৫১টি
রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে সংস্কার প্রতিবেদন তুলে দেন স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ। এ সময় কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর

স্থানীয় সরকারব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তনের সুপারিশ রেখে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। এতে প্রচলিত পাঁচটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান— ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের জন্য পৃথক পৃথক আইন ও বিধিবিধানের পরিবর্তে অভিন্ন একটি আইন প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি একীভূত আইনের অধীনে একই তফসিলে ৪৫ দিনের মধ্যে (বর্তমানে ২২৫ দিন সময় লাগে) সবগুলো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন আয়োজনের সুপারিশও করেছে কমিশন।

রোববার (২০ এপ্রিল) বিকেলে অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে কমিশনের সদস্যরা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় দুই খণ্ডের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে তুলে দেন। দুই খণ্ডের মধ্যে একটিতে রয়েছে বিস্তারিত প্রতিবেদন, আরেকটিতে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশমালা।

স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের বিস্তারিত প্রতিবেদনে ১৮টি অধ্যায়ের প্রতিটিতে গড়ে ১০টির মতো সুপারিশ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে সুপারিশের সংখ্যা ১৮০টির মতো। এর মধ্যে প্রধান প্রধান ৫১টি সুপারিশ কমিশন আলাদা করে উপস্থাপন করেছে।

সুপারিশে গ্রামীণ স্থানীয় সরকারে তিন স্তর— ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদ এবং নগর স্থানীয় সরকারে দুই স্তর— পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন বহাল রাখার কথা বলা হয়েছে। কমিশন সুপারিশে ইউনিয়ন ও উপজেলায় চেয়ারম্যান না রেখে নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে কাউন্সিল বা পরিষদ গঠনের কথাও বলা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন বলছে, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর জনবল কাঠামোকে একটি সমন্বিত ব্যবস্থাপনার সাম্যতার অধীন কার্যকর ব্যবস্থায় রূপান্তরের স্বার্থে একটি ‘স্থানীয় সরকার সার্ভিস’ কাঠামো তৈরি করতে হবে। স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য একটি বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশও করা হয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর জন্য দ্বি-স্তরবিশিষ্ট মহানগর সরকার (সিটি গভর্নমেন্ট) তৈরির ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশও করা হয়েছে।

স্থানীয় বিচার ব্যবস্থা সংস্কারের সুপারিশও করেছে কমিশন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উপজেলায় ফৌজদারি ও দেওয়ানি পূর্ণাঙ্গ আদালত স্থাপন করতে হবে। গ্রাম আদালতের ‘অপব্যবহারে’ মানুষ সলিশে ফিরে গেছে উল্লেখ করে কমিশন সুপারিশ করেছে— গ্রাম আদালত বিলুপ্ত করতে হবে। উপজেলায় বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। নির্বাহী বিভাগের মাধ্যমে বিচার চালানোর প্রয়োজন নেই। থানায় সালিশের নামে আদালত বসানো হয়, এটা বন্ধ করতে হবে।

স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন থেকে প্রধান প্রধান ৫১টি সুপারিশ দেখুন এখানে—

সংস্কার প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর সন্ধ্যায় রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন কমিশনপ্রধান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, বর্তমানে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের জন্য ২২৫ দিন লাগে। অথচ মাত্র ৪০ দিনের একটি শিডিউলে এসব নির্বাচন করা সম্ভব। সেটি করতে পারলে খরচ এখনকার দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকা থেকে কমে ৭০০ কোটি টাকায় নেমে আসবে।

অধ্যাপক তোফায়েল বলেন, এখন ইউনিয়ন, উপজেলা পরিষদ ও এ ধরনের স্থানীয় সরকারে নির্বাচিত চেয়ারম্যানের হাতে অধিকাংশ ক্ষমতা থাকে। সদস্যদের হাতে তেমন ক্ষমতা থাকে না। এ কারণে নির্বাচন থেকে চেয়ারম্যান পদ বাদ দিতে বলেছি। নির্বাচিত সদস্যরা তাদের পরিষদ প্রধান নির্বাচিত করবেন। প্রয়োজনের ছোট পরিসরের একটি পর্ষদ (কাউন্সিল) গঠন হবে। তাহলে স্থানীয় সরকার পরিচালনায় সব নির্বাচিত প্রতিনিধি ভূমিকা রাখতে পারবেন।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন নাকি স্থানীয় সরকার নির্বাচন— কোনটি আগে হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সুপারিশ কী— জানতে চাইলে কমিশনপ্রধান বলেন, দুটি নির্বাচনই গুরুত্বপূর্ণ। সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিক। একটি করলে আরেকটি করা যাবে না, এমন শর্ত অমূলক।

তবে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান কার্যকর না থাকায় শূন্যতা তৈরি হয়েছে এবং সারা দেশে নাগরিক সেবা ব্যাহত হচ্ছে উল্লেখ করে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অবিলম্বে করা হোক— এমন অভিমত স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের। অধ্যাপক তোফায়েল বলেন, স্থিতিশীল ব্যবস্থার জন্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে নেতৃত্ব নিয়ে আসা দরকার। তবে এর জন্যও জাতীয় ঐকমত্য প্রয়োজন।

যে নির্বাচনই হোক, সংস্কারের সুপারিশ বাস্তবায়ন না করে সে নির্বাচন আয়োজন করলে তা কাজে আসবে না বলেও মন্তব্য করেন তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, মূল সংস্কার না করে নির্বাচন করলে কোনো লাভ হবে না। সেটি জাতীয় নির্বাচন হোক, আর স্থানীয় নির্বাচন হোক। এ কারণে আমরা সংস্কারকে প্রাধান্য দিয়েছি। সংস্কারের পর নির্বাচন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে সংস্কার কমিশনের সদস্য ফেরদৌস আরফিনা ওসমান, আবদুর রহমান, মাহফুজ কবীর, মাশহুদা খাতুন শেফালী, মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম, ইলিরা দেওয়ান ও কাজী মারুফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

r1 ad
top ad image