top ad image
top ad image
home iconarrow iconখবরাখবর

পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে যমুনার সামনে আহতরা, ফিরলেন হাসনাতের আশ্বাসে

পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে যমুনার সামনে আহতরা, ফিরলেন হাসনাতের আশ্বাসে
যমুনার সামনে হাসনাত আব্দুল্লাহ কথা বলেন বিক্ষোভকারী আহতদের সঙ্গে। তার আশ্বাসেই পরে সড়ক ছাড়েন আহতরা। ছবি: সংগৃহীত

মধ্যরাতে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনের পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের আহতরা। তাদের শান্ত করতে সেখানে হাজির হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তার আশ্বাসে শেষ পর্যন্ত আহতরা সড়ক ছেড়ে হাসপাতালের পথে রওয়ানা দিয়েছেন।

রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে হাসনাত আব্দুল্লাহ কথা বলা শেষ করেন। এ সময় তিনি নিজে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দিকে চলে যান। আহতরাও যার যার হাসপাতালের দিকে যেতে শুরু করেন।

আহতদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রিতার মধ্যে পড়া ও তাদের আর্থিক অনুদান যথাযথভাবে বিতরণ না হওয়ার পেছনে হাসনাত আব্দুল্লাহ দায়ী করেন প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে কর্মরত আমলাদের। তিনি বলেন, সরকার নানাভাবে চেষ্টা করলেও আমলাদের বাধায় অনেক উদ্যোগই সঠিক সময়ে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর’ এসব আমলাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেই সব কাজ করিয়ে নিতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

আরও পড়ুন-

মধ্যরাতে যমুনার সামনে জুলাই অভ্যুত্থানে আহতরা

আহতদের দাবিগুলোর বিষয়ে হাসনাত বলেন, আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় জড়িতদের পূর্ণাঙ্গ বিচার ও ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের সরকারের বিভিন্ন পদ থেকে অপসারণ করে গ্রেপ্তারের দাবি পূরণ করতে হবে পর্যায়ক্রমে, চলমান প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। আহতদের ক্যাটাগরি সঠিকভাবে প্রণয়নের বিষয়টি নিয়ে তিনি এ সপ্তাহের মধ্যেই সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

হাসনাত আরও বলেন, আহতদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া সঠিকভাবে বাস্তবায়নের দাবিটিও চলমান প্রক্রিয়া। তবে এ বিষয়ে শিগগিরই সরকারের সঙ্গে আহতদের উপস্থিতিতে বৈঠক করবেন তিনি। আহতদের চিকিৎসার সর্বোচ্চ সুব্যবস্থার দাবিও এ সপ্তাহের মধ্যেই নিশ্চিত করা হবে। আহত ও শহিদদের রাষ্ট্রীয় সম্মাননাসহ প্রয়োজনীয় আইনি সুরক্ষার দাবির অগ্রগতি নিয়ে তিনি উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সঙ্গে কথা বলে সবাইকে জানাবেন। আহতদের আর্থিক নিরাপত্তার দাবি নিয়েও আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি।

এর আগে রাত ১২টার দিকে আহতরা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনের ব্যারিকেড ভেঙে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে অবস্থান নিলে হাসনাত আব্দুল্লাহ সেখানে অবস্থান নেন। শুরু থেকেই তিনি বিক্ষোভকারীদের শান্ত করার চেষ্টা করলেও সবার তীব্র ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় তিনি কথাই বলতে পারছিলেন না। বারবার কথা বলার চেষ্টা করেও থেমে যেতে হচ্ছিল তাকে।

আরও পড়ুন-

আন্দোলনে আহত আরও ৩০ জনকে পাঠানো হলো সিঙ্গাপুর-থাইল্যান্ডে

একপর্যায়ে বিক্ষোভকারী আহতদের কথা বলার সুযোগ করে দেন হাসনাত। এ সময় একাধিক আহত ব্যক্তি দীর্ঘ সময় নিয়ে নিজেদের দাবি-দাওয়াসহ অভাব-অভিযোগের কথা তুলে ধরেন। পরে তাদের মধ্যে পুঞ্জীভূত ক্ষোভের কথাগুলো বেরিয়ে এলে তারা কিছুটা হলেও শান্ত হন। এ সময় হাসনাত সাত দফা দাবির প্রতিটি নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে দিনক্ষণ নিয়ে কথা বললে সবাই যমুনার সামনের অবস্থান ছেড়ে হাসপাতালে ফিরে যেতে সম্মত হন।

জুলাই-আগস্ট গণআন্দোলনে আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এসব ব্যক্তির অভিযোগ, তাদের সুচিকিৎসা হচ্ছে না। সরকার প্রতিশ্রুতি দিলেও আহতরা পাচ্ছেন না আর্থিক সহায়তা। আহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির ব্যবস্থাও করা হয়নি। এসব বিষয় নিয়ে নানাভাবে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও তাদের দাবি-দাওয়ার দিকে কেউ নজর দেয়নি।

আন্দোলনে আহতরা এখন সুনির্দিষ্ট সাত দফা দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। তাদের সাত দফা দাবি হলো—

  • চব্বিশের যোদ্ধাদের মধ্যে আহত ও শহিদদের হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের পূর্ণাঙ্গ বিচার করতে হবে;
  • ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুসারীদের সরকারের বিভিন্ন পদ থেকে অপসারণ করে গ্রেপ্তার করতে হবে;
  • আহতদের ক্যাটাগরি সঠিকভাবে প্রণয়ন করতে হবে;
  • আহতদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে;
  • আহতদের চিকিৎসার সর্বোচ্চ সুব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে;
  • আহত ও শহিদদের রাষ্ট্রীয় সম্মাননাসহ প্রয়োজনীয় আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে; এবং
  • আহতদের আর্থিক অনুদানের টাকার পরিমাণ বাড়ানোসহ ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার সুসংহত করতে হবে।

আরও পড়ুন-

জুলাই আন্দোলনে আহতদের শিশুমেলা মোড় অবরোধ, শ্যামলী ঘিরে স্থবির সড়ক

এসব অভিযোগ নিয়ে আগেও সড়কে নেমেছিলেন আন্দোলনে আহত ব্যক্তি ও তাদের স্বজনরা। পরে শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাতে ফের তারা জাতীয় অর্থোপেডিক ইনস্টিটিউট ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের (পঙ্গু হাসপাতাল) সামনের সড়কে অবস্থান নেন। রোববার সকালে একপর্যায়ে তারা আরেকটু এগিয়ে অবরোধ করেন শিশুমেলা মোড়। এ সময় মিরপুর রোডসহ শ্যামলী-আগারগাঁও সড়ক বন্ধ হয়ে যায়।

আহতরা বিকেল ৪টার মধ্যে তাদের সাত দফা দাবি পূরণের আলটিমেটাম দিয়েছিলেন। এই সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হওয়ায় সন্ধ্যায় তারা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে পদযাত্রা শুরু করেন। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে পুলিশের বাধায় থামতে হয় তাদের। ব্যারিকেডের মুখে সেখানেই সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছিলেন আন্দোলনকারীরা।

মধ্যরাতে আর বিক্ষুব্ধদের ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি পুলিশ। তাদের ব্যারিকেড ভেঙেই আহতরা মিন্টো রোডে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেন। প্রায় দুই ঘণ্টা সেখানে অবস্থানের পর হাসনাত আব্দুল্লাহর আশ্বাসে সড়ক ছাড়েন তারা।

r1 ad
r1 ad
top ad image