আ.লীগকে নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা নেই: প্রধান উপদেষ্টা\n
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের পর প্রতিক্রিয়া
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত না, যেন পলাতক স্বৈরাচার ও তাদের দোসররা পুনর্বাসনের সুযোগ পায়। শুক্রবার ঢাকার লেডিস ক্লাবে বিশিষ্ট নাগরিক ও পেশাজীবীদের সম্মানে বিএনপির ইফতার আয়োজনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন তিনি।
এর আগে শুক্রবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসবেন, তিনি যদি কোনো অপরাধ না করেন, ছাত্র হত্যা না করেন, অর্থ লোপাট বা পাচার না করেন তাহলে সেই আওয়ামী লীগ কেন রাজনীতি করতে পারবে না?’ তিনি বলেন, ‘এটি হচ্ছে আমার বক্তব্য। যদি দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা যায়, অপরাধীদের বিচার হয়, তারপর জনগণ যদি তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দেয়, তাহলে আমাদের বলার কিছু নেই।’
রিজভী আরো বলেন, ‘অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারবে কিনা। কিন্তু এই কথা উঠছে না, যারা গণহত্যা চালিয়েছে তাদের বিচার হবে কিনা? কারা চালিয়েছে? এটা কি মানুষ দেখেনি? কোন পুলিশের ওসি, ডিসি, এসি, এখানে ভূমিকা রেখেছে? কার নির্দেশে এসব ঘটেছে? রক্তপাত ঘটানোর জন্য আওয়ামী লীগের কোন নেতারা নির্দেশ দিয়েছেন?’
এদিকে, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারে এখনো ছাত্রদের দুইজন উপদেষ্টা আছেন। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই- প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্যের পর তাদের অবস্থান পরিষ্কার করা উচিত। তারা যদি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে একমত না হন তাহলে তাদের সরকার থেকে অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত। পদত্যাগ করে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে যারা আন্দোলন করছে তাদের সঙ্গে শামিল হওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ব্যক্তি বা দল যে কারুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায়। দল নিষিদ্ধ করা যায়। সরকার চাইলে আইনি প্রক্রিয়ায় সেটা করতে পারে্ বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর উদাহরণ আছে। এখানে ২৪-এর গণহত্যার বিচার অবশ্যই হতে হবে।’
‘তবে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের জন্য ক্যান্টনমেন্ট থেকে আমার দলকে কোনো প্রস্তাব দিয়েছে বলে আমার জানা নেই। আর তারা কোনো রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার কথা নয়্ হয়ে থাকলে তা দুঃখজনক। ব্যক্তিগতভাবে আমাকেও তারা ডাকেনি,’ বলে জানান বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান রিপন।
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম শুক্রবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কর্তৃক সংগঠিত পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা হত্যাকাণ্ড, আগ্রাসনবিরোধী আন্দোলনে হত্যাকাণ্ড, গুম, ক্রসফায়ার, ভোট ডাকাতিসহ জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রশ্নে কার্যকর অগ্রগতি দৃশ্যমান হওয়ার আগে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল পথ থেকে এ ধরনের বক্তব্য অনাকাঙ্ক্ষিত।’ বিচার, অনুশোচনা, পাপমোচন ছাড়া আওয়ামী লীগের পক্ষে যে-কোনো তৎপরতা ফ্যাসিস্ট পুনর্বাসনের শামিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান তার ফেসবুকে বলেছেন, ‘দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য পতিত ফ্যাসিবাদীরা দেশের ভিতরে এবং বাইরে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত৷ বাংলাদেশের নির্যাতিত ১৮ কোটি মানুষের দাবি, গণহত্যাকারীদের বিচার, ২৪-এর শহিদ পরিবারগুলোর পুনর্বাসন, আহত এবং পঙ্গু অসংখ্য ছাত্র, তরুণ, যুবক ও মুক্তিকামী মানুষের সুচিকিৎসা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে ১৫ বছরের সৃষ্ট জঞ্জালগুলোর মৌলিক সংস্কার সাধন করে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা। জনগণ অগ্রাধিকার ভিত্তিতেই গণহত্যার বিচারটাই দেখতে চায়। এর বাইরে অন্য কিছু ভাবার কোনো সুযোগ নেই।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘আমরা কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে। যে আলোচনা হওয়া দরকার সেটা হলো জুলাই গণহত্যার বিচার এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। প্রফেসর ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে যা বলেছেন তা আইনি এবং নৈতিক জায়গা থেকে বলেছেন। আর যেসব রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি করেছে সেটা তারা দলীয়ভাবে দাবি করতেই পারেন।’
‘আমরা সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের জন্য আলোচনার কোনো প্রস্তাব পাইনি,’ বলে জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার কথার পর বৃহস্পতিবার রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ‘ইনকিলাব মঞ্চ’ প্রতিবাদ মিছিল করে। শুক্রবারও তারা মিছিল ও সমাবেশ করে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের দিকে পদযাত্রা করে। তারা প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য প্রত্যাহার ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে। সংগঠনটির মুখপাত্র ওসমান বিন হাদি ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ আর কখনোই রাজনীতি করতে পারবে না। তাদের মধ্যে যদি কেউ অপরাধ না করে থাকে তাহলে তারা ভিন্ন নামে দল করতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও নৌকা থাকবে না। আমরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব।’
গণঅধিকার পরিষদও ঢাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। তারাও প্রধান উপদেষ্টাকে তার বক্তব্য প্রত্যাহার ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে। দলটির প্রধান নুরুল হক নুর বলেন, ‘আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। জুলাই গণহত্যায় যারা জড়িত সেই আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে রাজনীতি করতে পারে না। আমরা তাদের নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছি। এটা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও কথা বলেছি।’
‘তবে সেনবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা তাদেরই ডাকে যাদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। হাসনাত আব্দুল্লাহরা যোগাযোগ রাখে বলেই হয়তো তাদের ডেকেছে। আমাদের ডাকেনি। আর ডাকলেও আমরা যাব না। আর অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে ডেকেছে বলে আমার জানা নেই,’ বলেন তিনি।
নুরুল হক নুর বলেন, ‘হাসনাত আব্দুল্লাহরা সস্তা রাজনীতি করার চেষ্টা করছে। তাদের লোক সরকারে আছে। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও উঠছে। আবার তারা সরকারের কিছু সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে চমক দেখাতে চাইছে।’
‘তিনি বলছেন ১১ তারিখে ক্যান্টনমেন্টে তাদের প্রস্তাব দেয়, আলোচনা হয়৷ তো এতদিন সেটা তিনি বললেন নাই কেন? হঠাৎ করে এখন তিনি একটা ফেসবুক পোস্ট দিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করছেন,’ বলেন গণঅধিকার পরিষদ নেতা নুর।
তিনি আরো বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা হঠাৎ করে বলে দিলেন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কোনো পরিকল্পনা নেই। এটার উদ্দেশ্য কী? এটা দেশে আরেকটি সংকট ডেকে আনতে পারে।’
আর রংপুরে নিজ বাসভবনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শুক্রবার বলেছেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পক্ষে নই। আওয়ামী লীগ একটি দল। যারা দলের ভেতরে বাস করছে তারা খারাপ হতে পারে। আওয়ামী লীগ একটি গাড়ি তার ড্রাইভার খারাপ হতে পারে কিন্তু গাড়িটা তো খারাপ না।’