top ad image
top ad image
home iconarrow iconমতামত

৬ মাসেও কেন রাষ্ট্রদূত পায়নি মার্কিন দূতাবাস?

৬ মাসেও কেন রাষ্ট্রদূত পায়নি মার্কিন দূতাবাস?
ট্রেসি এন জ্যাকবসন (বাঁয়ে) ও ডেভিড মিল (ডানে)। ছবি কোলাজ: রাজনীতি ডটকম

ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের পদটি প্রায় ছয় মাস ধরে শূন্য। আলোচিত রাষ্ট্রদূত পিটার হাস অবসর নেওয়ার পর থেকে এই শূন্যতা। গত মে মাসে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ডেভিড মিলকে এ পদে মনোনীত করেছিলেন। কিন্তু মার্কিন সিনেটে তার নিয়োগ এখনো আটকে আছে।

এ পরিস্থিতিতে সাবেক মার্কিন কূটনীতিক ট্রেসি এন জ্যাকবসনকে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কথা জানিয়েছে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস। বাংলাদেশে পিটার হাসের উত্তরসূরি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত না আসা পর্যন্ত জ্যাকবসনই থাকবেন দূতাবাসের দায়িত্বে। আগামী ১১ জানুয়ারি তিনি ঢাকায় এসে দায়িত্ব নেবেন বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছে দূতাবাস।

সাম্প্রতিক সময়ে অ্যাম্বাসেডর জ্যাকবসন নিকট-প্রাচ্যবিষয়ক ব্যুরোতে ঊর্ধ্বতন উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। কূটনৈতিক জীবনে তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও কসোভোতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবায় ইউএস দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ছিলেন তিনি।

নতুন এই নিয়োগ দেওয়ার পর প্রশ্ন উঠেছে, ডেভিড মিল আর ঢাকায় আসছেন কি না।

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ডেভিড মিলের নিয়োগ বাতিল বা বহাল দুটোই হতে পারে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করবেন ট্রাম্প।

নিয়ম অনুযায়ী, প্রথমে কাউকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনয়ন দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। মনোনয়ন অনুমোদনের জন্য সিনেটে পাঠানো হয়। সিনেট অনুমোদন দিলে নতুন রাষ্ট্রদূতের নিয়োগ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়।

সেই প্রক্রিয়া মেনে ডেভিড মিলকে ঢাকায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে জো বাইডেন মনোনয়ন দিলেও সিনেটে সে প্রস্তাব অনুমোদন পায়নি। ট্রাম্পের আমলে আর পাবেন কি না, সেই প্রশ্ন জোরদার হয়েছে।

হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, মিল এখন চীনের বেইজিংয়ে মার্কিন দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি একসময় ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে উপরাষ্ট্রদূত হিসেবেও কাজ করে গেছেন।

অভিজ্ঞ কূটনীতিক মিল মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে কাজ করেছেন। ঢাকা, বেইজিং ছাড়াও তিনি ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে মার্কিন দূতাবাসে কাজ করেছেন।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাষ্ট্রদূত নিয়োগের প্রক্রিয়ায় এই দেরি যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ নীতিতে পরিবর্তন বা কৌশলগত পুনর্বিবেচনার ইঙ্গিত হতে পারে। ৫ আগস্টের পর গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও সংস্কার প্রক্রিয়ার দিকে নজর রাখার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

যেহেতু বাইডেন ক্ষমতায় থাকছেন না এবং ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছেন, তাই বাইডেনের মনোনীত প্রার্থী ডেভিড মিল বাংলাদেশে আসছেন না, এটা ধরে নেওয়া হচ্ছে।

ঠিক ১৭ বছর আগে, ২০০৭ সালে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ঢাকায় আসা-যাওয়ার মাঝে একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। ওই সময় প্যাট্রিসিয়া বিউটেনিস ইরাকের উপরাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় গীতা পাসি প্রায় ৯ মাস দায়িত্ব পালন করেন।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা সবসময়ই গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। সেই মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে শুরু করে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পর্যন্ত সব রাজনৈতিক আন্দোলন ও পটপরিবর্তনে আসে যুক্তরাষ্ট্রের নাম। তথ্যপ্রমাণ না থাকলেও গত ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নাম বহুলভাবে আলোচিত। রাজনীতবিদ তো বটেই, সচেতন সব নাগরিক দেশটির ভূমিকা আন্দাজ করেন।

বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে অন্তবর্তী সরকারের, বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সুসম্পর্ক থাকার বিষয়টি কমবেশি সবাই অবগত। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সম্পর্ক কেমন হবে, তা বোঝা যাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা ট্রাম্পের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির বন্ধুত্বকে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখেন। যদিও প্রচলিত আছে, ব্যক্তি বা ক্ষমতা পরিবর্তন হলেও মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি সহসা পরিবর্তন হয় না। তারপরও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দেওয়া, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পর্ক, ট্রাম্পের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ জো বাইডেনের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সুসম্পর্ক— এসব বিষয় ঘুরেফিরেই রাজনীতি ও কূটনীতির আলোচনায় আসছে।

লেখক: সাংবাদিক

r1 ad
r1 ad
top ad image