top ad image
top ad image
home iconarrow iconমতামত

প্রসঙ্গ জামায়াত-শিবির এবং মাহফুজের অবস্থান

প্রসঙ্গ জামায়াত-শিবির এবং মাহফুজের অবস্থান

উপদেষ্টা মাহফুজ যা করেছেন এবং তার সঙ্গে যা ঘটেছে— দুটোই ভালো কাজ হয়েছে।

কীভাবে?

‘ছাত্ররা ঘোর ডানপন্থি, এই আন্দোলনে পাকিস্তানপন্থি শক্তি কাজ করেছে’— ছাত্রদের নিয়ে এ রকম ধারণা ও প্রচারণা ছিল।

তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম মাহফুজ তার স্ট্যাটাসে খুব স্পষ্ট করে বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে পাকিস্তানপন্থিদের স্থান নেই। এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নেও কোনো আপস নেই। তিনি আরও স্পষ্ট করেছেন, জামায়াত-শিবিরকে একাত্তরের প্রশ্নে পরিষ্কার অবস্থান নিতে হবে।

এই স্ট্যাটাসগুলো দেওয়ার পর যা হওয়ার কথা তাই হয়েছে। তিনি সেটি প্রত্যাহার করেছেন। কিন্তু সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়ে গেছে।

বিপুলসংখ্যক জামায়াত-শিবির, ডানপন্থি ও পাকিস্তানপন্থি মাহফুজকে ‘ধুয়ে’ দিয়েছে। তারা বলেছে, দেশটা মাহফুজের বাবার না। মাহফুজের নামে গরুর নামকরণ করে গরুটিকে কুরবানি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে আরেক গ্রুপ।

এর ফলে যেটা হলো সেটা অবশ্যই আশাবাদী হওয়ার মতো ঘটনা। জামায়াত-শিবিররা যে ছেড়ে কথা বলবে না, প্রয়োজনে তারা কতখানি শক্তি প্রদর্শন করতে পারেন, মাহফুজ এই সত্যিটা জেনে গেলেন।

অন্যদিকে জামায়াত-শিবির ও তাদের সমর্থকরাও বুঝে গেলেন, অন্তত মাহফুজ তাদের দলের লোক নয়। একাত্তরের প্রশ্নে মাহফুজ ছাড় দেবেন না।

আর আমরা বুঝলাম, এই হচ্ছে মাহফুজ। আর এই হচ্ছে জামায়াত-শিবিরের অবস্থান।

এই কথা ঠিক যে প্রচুর গালিগালাজ ও ঘৃণা উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু এ কথাও ঠিক, গালিগালাজের স্রোতের মধ্যে স্পষ্ট হয়েছে, কার অবস্থান কোথায়।

মাহফুজ, এনসিপি ও ছাত্রদের দল এবার আয়নার সামনে দাঁড়াতে পারেন। তাহলে তারা দেখবেন, তাদের বিজয়ের একটি বড় অংশে অন্য অনেকের সঙ্গে জামায়াত-শিবির ছিল। এমনকি তাদের চলমান লড়াইয়ের সহযোদ্ধারাও অনেকেই জামায়াত-শিবির।

জামায়াত-শিবিরও একইভাবে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখতে পারবেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে মাহফুজ-আসিফ কোনো ছাড় দেবেন না। আন্দোলনে জামায়াতের অনেকে শহিদ হয়েছেন, তবুও মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে মাহফুজদের কোনো ডিসকাউন্ট নেই।

আবার যারা ছাত্র আন্দোলন ও জামায়াতকে এক করে দেখতে অভ্যস্ত, তারাও এ ঘটনায় বুঝতে পারবেন, মাহফুজ-আসিফ ও জামায়াত এক না। এক হয়ে যায়নি। এ জায়গা থেকে ভবিষ্যতের পথ তৈরি করতে হবে।

জামায়াত-শিবির ও মাহফুজরা এখন থেকে আলাদা দুটি পথে আগামীর রাজনীতি চালিয়ে যেতে পারেন। আবার এই দুটি ধারা একটি কমন গ্রাউন্ড খুঁজে নিয়ে আগামীর রাজনীতির পথ নির্ধারণ করতে পারেন। তারা ভাবতে পারেন, আমরা যদি আবারও দ্বিধাবিভক্ত হই, আবারও যদি মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি নামে আলাদা হই, আবারও যদি দিল্লি না পিন্ডি এইসব প্রশ্নে নিজেদের ভাগ করি, তাহলে দেশ তো সেই পুরনো চক্রে ফিরে যাবে। যে চক্র দিনশেষে ফ্যাসিবাদ ছাড়া আর কোনোকিছু উৎপাদন করে না।

এর চেয়ে একটা কমন গ্রাউন্ড কি তৈরি হতে পারে না, যে কমন গ্রাউন্ডে বাম-ডান, মধ্যপন্থি-ধর্মপন্থি-সেকুলারপন্থি, রবীন্দ্রপন্থি-নজরুলপন্থি, ব্যান্ডসংগীতপন্থি-বাউলসংগীতপন্থিসহ সবপন্থি এক হয়ে দেশের জন্য কাজ করা যায়? এমন একটি কমন গ্রাউন্ড যে কমন গ্রাউন্ড সবাইকে ইনক্লুড করে; কাউকে বাদ দেয় না, কাউকে মাথায়ও তোলে না; কাউকে খারিজ করে না, কাউকে ফরজও করে না।

আগামীর বাংলাদেশ কোথায় যাবে, সেটা আসলেই নির্ভর করে এই কমন গ্রাউন্ড তৈরি করার ওপর।

মনে রাখবেন, বাংলাদেশের প্রাণভোমরা এই কমন গ্রাউন্ড— যে কমন গ্রাউন্ডে টুপি পরা লোক ও গেরুয়া পরা লোক একসঙ্গে নিরাপদে থাকবে, যে কমন গ্রাউন্ডে বিজ্ঞানবাদী ও ধর্মবাদী দুই দলই নির্ভয়ে নিজেদের মতামত দেবে। যে কমন গ্রাউন্ডে দাঁড়িয়ে বাম যেমন বলবে, কমিউনিজম একমাত্র মুক্তির পথ; তেমনি তার পাশে দাঁড়িয়ে আরেকজন বলবে, না ভাই, ইসলামই মুক্তি। যে কমন গ্রাউন্ডে দাঁড়িয়ে কেউ গান গাইবে, কেউ হামদ-নাত গাইবে। কেউ পরবে হিজাব, কেউ পরবে টি-শার্ট। কেউ কারও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবে না, বরং বুক আগলে একে অন্যকে রক্ষা করবে।

মনে রাখবেন, বাংলাদেশের মাটির নিচে কোনো গুপ্তধন থাকার দরকার নেই। কোনো তেলের খনি, গ্যাসের খনির দরকার নেই। কোনো বিদেশি সাহায্যের প্রয়োজন নেই। শুধু প্রয়োজন এই কমন গ্রাউন্ডের।

যে কমন গ্রাউন্ডে দাঁড়িয়ে দিনশেষে আমরা বলব, আরে আমরা আমরাই তো। এই তো আমাদের দেশ। আমরা ছাড়া কে এই দেশকে রক্ষা করবে? আমরা ছাড়া কে এই দেশের যত্ন নেবে? আমরা ছাড়া আমাদের ভালোবাসবে কে?

লেখক: প্রবাসী সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

r1 ad
top ad image