বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ড. ইউনূস\n
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, ‘প্রথম থেকেই যদি এই সব অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতো তাহলে এত ঘটনা ঘটতো না। একদল শিক্ষার্থী সচিবালয়ে গিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টাকে ঘেরাও করে তাদের পরীক্ষা বাতিলের দাবী আদায় করে নিলো। আর আনসাররা দাবি আদায় করতে গিয়ে মামলার শিকার হলো, গ্রেপ্তার হলো। এই বৈষম্য নীতির কারণেই পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে।’
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ অভিযোগ করেছে ৪ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত দুই হাজার ১০টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে ৯ জন নিহত হয়েছেন। চারজন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে একজন বাক প্রতিবন্ধী বলে জানিয়েছেন তারা । পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট দীপঙ্কর ঘোষ জানান, ‘কোনো কোনো ঘটনায় মামলা হয়েছে। আবার কোনো কোনো ঘটনায় থানা মামলা নিচ্ছেনা। আমাদের কাছের পুরো তথ্য নেই। তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছি। তবে ওইসব ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তারের তথ্য আমাদের কাছে নেই।’
হামলা, সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতায় উত্তপ্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে চার জন নিহত হওয়ার পর রবিবার অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টা সেখানে সার্বিক অবস্থা পরিদর্শনে যান। সেখানে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে বাইরে থেকে "ষড়যন্ত্র” হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ।
তবে মানবাধিকার কর্মী নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আমরা আর ষড়যন্ত্র তত্ত্ব শুনতে চাই না। আমরা পাহাড়ে শান্তি চাই। অতীতে আমরা দেখেছি কোনো সরকার পরিবর্তন হলেই সংখ্যালঘু আর পাহাড়িদের ওপর নির্যাতন নেমে আসে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আমরা এবার সঠিক তদন্ত করে এর কারণ এবং দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি করছি।’
অ্যাডভোকেট জেড আই খান পন্না বলেন, ‘হাসান আরিফ সামরিক ভষায় কথা বলেছেন। এটা কাম্য নয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধান হবে।’
তার কথা, দেশে এখন যে পরিস্থিতি তাতে অতীতের বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি তারই ধারাবাহিকতা চলছে। সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূর করা না গেলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।
ব্যারিস্টার মিতি সানজানা বলেন, ‘এর জন্য প্রয়োজন স্বাধীন বিচারবিভাগ। বিচার বিভাগ সত্যিকার অর্থে স্বাধীন এবং প্রশাসন থেকে আলাদা করা না গেলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন।’
তার কথা, ‘অন্তর্বর্তী সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু সেগুলো দৃশ্যমান হতে ও এর ফল পেতে আরো সময় লাগবে। এখনো স্বৈরশাসনের ভূত বিভিন্ন জায়গায় আছে। পুলিশ প্রশাসন ঠিক মতো কাজ করছে না। মানুষ আসলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখতে চায়।’
এদিকে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ রবিবার বলেছেন, ‘বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ ও আইসভা থেকে আলাদা করা খুবই জরুরি।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের মতো বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার জন্য পরিপূর্ণ প্রস্তাব প্রস্তুতক্রমে আমরা শিগগিরই আইন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করব। এই প্রস্তাব দ্রত বাস্তবায়নের জন্য আমি প্রধান উপদেষ্টা ও আইন উপদেষ্টার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক মনে করেন, ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূর করতে শুধু বিচার বিভাগ স্বাধীন করলেই হবেনা আমাদের সাংস্কৃতিক ও মানসিক পরিবর্তন আনতে হবে। ব্যক্তিগত আক্রোশ ও প্রতিহিংসার কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। সেই জায়গায় পরিবর্তন দরকার। ব্যক্তি যদি নিজেই বিচার করতে চায় তাহলে তো অবস্থার উন্নতি হবে না। ব্যক্তিকে ওই প্রবণতা থেকে দূরে রাখার জন্য শক্ত আইনি ব্যবস্থা দরকার।’