top ad image
top ad image
home iconarrow iconমতামত

‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দ্রুত সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনুক সরকার’

‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দ্রুত সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনুক সরকার’
খুশী কবির। ফাইল ছবি

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর থেকে বাংলাদেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। নানাভাবে মানসিক, শারীরিক নির্যাতন করে পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে শিক্ষকদের৷শিক্ষাক্ষেত্রের বাইরেও দেখা গেছে এমন দৃশ্য। এ বিষয়টি নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন বেসরকারি সংস্থা নিজেরা করি’র সমন্বয়ক, অধিকার ও উন্নয়নকর্মী খুশী কবির।

ডয়চে ভেলে: ছাত্র আন্দোলনের মুখে সরকার পতন হয়েছে। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কে এখন এর প্রভাব কী?

খুশী কবির: আন্দোলন হয়েছে। যা ছোট দাবি-দাওয়ার আন্দোলন ছিল, পরে বড় পর্যায়ে চলে যায়। এর প্রেক্ষিতে একটা সরকারকে চলে যেতে হয়েছে। আন্দোলনটা ছাত্রদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, যদিও ছাত্ররা প্রধান ভূমিকায় ছিল। তবে এবারের আন্দোলনে স্পষ্ট রূপরেখা ছিল না যে, কে সরকারের দায়িত্ব নেবে। আগে যেসব আন্দোলন হয়েছে- ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের এরশাদবিরোধী আন্দোলন- এগুলোর রূপরেখা ছিল যে, কীভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হবে। ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের পর আর্মি দায়িত্ব নেয়। তাদের লক্ষ্য ছিল পরে একটি জাতীয় নির্বাচন দেবে। সেই অন্তর্বতী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছিলেন। ছাত্রদের সঙ্গে শিক্ষকদের একটা সম্পর্ক ছিল। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পরও একটা সুনির্দিষ্ট নেতৃত্ব ছিল। এরশাদের পতনের পরও প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমেদ দায়িত্বে নিয়েছিলেন, একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সঙ্গে সঙ্গেই। তখন একদিনও গ্যাপ ছিল না। তো এইবার কিন্তু একটা বড় গ্যাপ ছিল।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর ৮ আগস্ট রাতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। মাঝে যদিও আর্মি বলেছিল তারা আছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাদের আমরা মাঠে দেখিনি। যেখানে অরাজকতা সৃষ্টি হচ্ছিল, সেখানে আমরা তাদের দেখিনি। তো এই রকম একটা আন্দোলনের পর অ্যানার্কি বা অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হওয়াও স্বাভাবিক, যদি না এটা নিয়ন্ত্রণ করার সুস্পষ্ট একটা ব্যবস্থা থাকে। ছাত্ররা ধরে নিচ্ছে, তাদের আন্দোলনেই সরকারের পতন হয়েছে। আমি তাদের কৃতিত্ব খাটো করে দেখছি না। তারা আন্দোলন না করলে এ অবস্থাতে আসতো না। একটা সরকার ১৫ বছরের বেশি থাকবে, কোনো বিরোধী থাকবে না, কোনো প্রশ্ন থাকবে না- এটা কোনো গণতন্ত্রের জন্য সুষ্ঠু অবস্থা হতে পারে না। এর পরবর্তীতে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স যে থাকার কথা, সেটার বিরাট অভাব আমি লক্ষ্য করেছি। যেটার আমরা বহিঃপ্রকাশ দেখেছি শিক্ষকদের সঙ্গে ছাত্রদের যে আচরণ হওয়া উচিৎ না, সেটা হয়েছে। এর আরো একটা কারণ শিক্ষকরাও খুব পার্টিজান হয়ে গিয়েছিলেন। এটা শুধু আওয়ামী লীগের আমলেই নয়, যে দলের সরকারই ছিল, সেই দলের শিক্ষকরাই সব সুবিধা পেয়েছেন, অন্যরা পাননি। এটা বিএনপির আমলেও ছিল। তবে বিগত আওয়ামী লীগ আমলে বেশি ছিল, কারণ তারা সময় বেশি পেয়েছিল। বিএনপি পাঁচ বছর পেয়েছে, আওয়ামী লীগ ১৫ বছর পেয়েছে। তবু শিক্ষক হেনস্তার ঘটনা দুঃখজনক। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আমরা বিবৃতিও দিয়েছি। শিক্ষার স্বার্থে শিক্ষার্থীরা যেন মূল পড়াশোনায় ফিরে আসতে পারে। এর পাশাপাশি তারা সজাগও থাকুক একটা সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য।

শিক্ষকদের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ, এর কোনো উত্তরণ দেখা যাচ্ছে কী?

আমি এখনো পর্যন্ত দেখছি না। আমি অপেক্ষা করছি। আমরা চাই অন্তর্বর্তী সরকার যেন দ্রুত এটা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারে, এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেন ফিরে যেতে পারে একটা সুষ্ঠু পরিবেশে। এটা খুব দরকার। এখন যে যে মূল বিষয়গুলো দরকার, একটা হলো- আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা, যেটা এখনো পুরোপুরি আসেনি। দ্বিতীয় হলো, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা ব্যবস্থাকে সঠিক জায়গায় নিয়ে আসা, কিন্তু সেটা এখনো আসেনি।

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যারা শিক্ষকতায় আছেন, তাদের পরিস্থিতিটা কেমন?

এটা তো শুধু শিক্ষকতায় না, এটা হচ্ছে যে মানসিকতটা একটা চলে এসেছে, যেটা সবাইকে একটু ভীত করছে। বিষয়টা হচ্ছে, যারা যাদের সঙ্গে একমত না এটা ধর্মভিত্তিক হতে পারে, এটা জাতিগত হতে পারে ,এটা যেকোনোভাবে একটু ভিন্ন চিন্তাধারার আছে, ভিন্ন অবস্থানের আছে, ধর্মীয় দিক থেকে একই ধর্ম পালন করছে না। আবার হতে পারে তারা জাতিগতভাবে বাঙালি জাতি না, এটা হতে পারে বাঙালি মুসলমান না। এটা হতে পারে অবস্থান বা চিন্তাটা অন্য ধরনের। কিন্তু আমাদের মূল যেটা হচ্ছে যে, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং দেশ স্বাধীন হয়েছে, দেশ পেয়েছি, চার মূলনীতি, তো এটাকে ধূলিসাৎ করা, এটাকে ভুলে যাওয়া, এটাকে অবহেলা করা, কোনোক্রমেই চলবে না। এই জিনিসটাকে নিয়ে আসতে হবে, এবং অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্ম নিরপেক্ষতা আমাদের চার মূলনীতির বিরাট একটা স্তম্ভ এবং গণতন্ত্র আরেকটা। গণতন্ত্র মানে এখন যারা আসছে ক্ষমতায় তাদের কাছেই সবাই জবাবদিহি করবে, সেটা নয়। জনগণের কাছে স্পষ্টভাবে সবকিছু স্বচ্ছ করা- সেটা হলো মূল বিষয়।

জুলাইজুড়ে আন্দোলন গেল, আগস্টও শেষ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান কতটা স্বাভাবিক?

প্রথমেই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য ক্লাস হয়নি। তারপরে চলে আসছে রোজার মাস। তারপর গরম বেশি থাকায়ও স্কুল বন্ধ ছিল। তারপর নতুন পাঠ্যক্রম শিক্ষকরা, সেভাবে বুঝছে না। তবে নতুন পাঠ্যসূচি আমি যেটা দেখেছি, আমার কাছে ভালো লেগেছে। বাচ্চারা এবং শিক্ষকরাও এটাতে অভ্যস্ত না। সবমিলিয়ে এখন আন্দোলন হলো। পুরো বছর আসলে ক্লাসই তো হয়নি। আমার ভাগনেরা যে স্কুলে যায়, সেখানে প্রধান শিক্ষককে সরানোর জন্য আন্দোলন চলছে। স্কুল খোলা, কিন্তু ক্লাস হচ্ছে না। আমি ভাগনেদের বলেছি, তোমরা আন্দোলনে যেও না, চুপচাপ থাকো। যখন পরিস্থিতি ঠিক হবে, তখন আবার স্কুলে যেতে শুরু করো। তাই পুরো বছর বাচ্চাগুলো বঞ্চিত হয়েছে তাদের শিক্ষাবছর থেকে।

শিক্ষা উপদেষ্টা ঘোষণা দিয়েছেন, আগের পাঠ্যক্রমে ফিরে যাবেন- কীভাবে দেখছেন?

এখন যেটা হচ্ছে, যে ক্ষমতায় আসছে সে একটা শিক্ষাপদ্ধতি দিচ্ছে, আরেকজন আসবে, আরেকটা বের করবে। আরেকজন বলবে পুরোনোটা গ্রহণ করবে, পুরোনো বলতে কোন পুরহাডনোটা গ্রহণ করবে? ২০২২ সালেরটা গ্রহণ করবে, নাকি তারও আগেরটা গ্রহণ করবে, এটা স্পষ্ট করতে হবে। এগুলো নিয়ে তো অনেক জটিলতা ছিলো। এটা বাদ দিবে, এ নিয়ে আন্দোলন করেছে। কবি সুফিয়া কামাল, কবি গোলাম মোস্তফা, কবি শামসুর রাহমান, রবি ঠাকুরের কবিতা বাদ দিয়েছিলো কয়েক বছর আগে, তারপর আন্দোলন হয়। এমনটা তো বার বার হয়, তারপর আন্দোলন হয়, তারপর অন্তর্ভূক্তি হয়, চেঞ্জ হয়- এসব তো বাচ্চাদের ওপর সমস্যা ফেলছে। এটার সমাধানে বিজ্ঞানভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বাচ্চাদের জন্য কী দরকার- তাদের গড়ে তোলার জন্য, তাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য, জ্ঞান দেওয়ার জন্য, এটা খুবই প্রয়োজন। হুট করে আগের সরকার এটা করেছে বলে, এই সরকার এটা গ্রহণ করবে না- এই ধরনের নীতি কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়, বাস্তবসম্মতও নয়। কোন জিনিসটা গ্রহনযোগ্য না, কেন গ্রহণযোগ্য না, কেন পরিবর্তন করতে হবে, এর কিন্তু একটা বিশ্লেষণ, আর সঠিক একটা পন্থা থাকা দরকার। আমি সস্তাভাবে আগেরটা ঠিক, নতুনটা বাদ, নতুনটা ঠিক, আগেরটা বাদ- এই ধরনের আলোচনায় যেতে ইচ্ছুক না।

r1 ad
r1 ad